একটি মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস। এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস এর প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটানের টাওয়ারে। ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই কোম্পানিটি প্রসিদ্ধ তাদের ক্রেডিট কার্ড, চার্জ কার্ড ও ট্রাভেলার্স চেক ব্যবসায়ের জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৪% ট্রানজেকশন অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিটকার্ড এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড কি?
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড এমন এক ধরনের ইলেকট্রনিক পেমেন্ট কার্ড, যা পাবলিক ট্রেডিং সার্ভিস কোম্পানি অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস এর ব্র্যান্ডে চলে। অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসকে সংক্ষেপে অ্যামেক্স বলা হয়।
এই কোম্পানি প্রিপেইড, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এর মতো কার্ডগুলো ইস্যু ও প্রসেস করে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাক্তি, ব্যবসা ও কর্পোরেট কনজ্যুমারগণ এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড নিতে পারেন।
মাস্টারকার্ড বা ভিসা পেমেন্ট নেটওয়ার্কের মতই আরেকটি নেটওয়ার্ক হচ্ছে এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস বা অ্যামেক্স হচ্ছে। বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত কার্ড হলো এই ভিসা ও মাস্টারকার্ড। একারণে ভিসা অথবা মাস্টারকার্ড নেটওয়ার্কের কার্ডগুলো গ্রাহক প্রায় সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই নিতে পারে।
কিন্তু অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড বাংলাদেশের সব ব্যাংকে পাওয়া যায় না। এটি শুধুমাত্র সিটি ব্যাংক থেকেই পাওয়া যায়। সেখান থেকে গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন।
অ্যামেক্স কার্ড কিভাবে কাজ করে?
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড বা অ্যামেক্স কার্ডটি ইস্যু করে থাকে অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানি। অল্প কয়েকটি ফিনানশিয়াল সার্ভিসের মধ্যে অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস একটি যা পেমেন্ট কার্ড ইস্যু ও প্রসেসের ক্ষমতা রাখে। অ্যামেক্সের পার্টনার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যেমন, বাংলাদেশের সিটি ব্যাংক হচ্ছে অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসের পার্টনার ব্যাংক।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস পাবলিকালি ট্রেড্রেড কোম্পানি হিসেবে কাজ করে একটি ফিনানশিয়াল সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে। এই কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট ধার করার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক প্রসেসিং সার্ভিসও উপভোগ করা যায়।
এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের সুবিধার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের চার্জ কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডের ধরণ
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ডেবিট কার্ড ও প্রিপেইড ডেবিট কার্ডগুলো সাধারণত বিভিন্ন ধরনের রিটেইল ও কমার্সিয়াল কাস্টমারদের দেওয়া হয়। এছাড়াও বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি চার্জ কার্ড প্রোভাইডার হলো অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড ও চার্জ কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে কিছু ধরা-বাধা নিয়ম আছে। প্রথমত একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর থাকতে হবে। এটা ছাড়া কোনো মতে অ্যামেক্স কার্ড নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ ক্রেডিট স্কোর যদি লো হয়ে যায় তবে গ্রাহক অ্যামেক্স কার্ড নিতে পারবে না।
এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট ও চার্জ কার্ডগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। যেমন; রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ট্রাভেল পার্কস, ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন কেনাকাটার ক্ষেত্রে এসব কার্ড ব্যবহার করলে ক্যাশব্যাক এর সুবিধাগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস বিভিন্ন ধরনের ব্র্যান্ডেড প্রিপেইড ডেবিট কার্ড প্রদান করে থাকে।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস উল্লেখিত কার্ডসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কার্ড কাস্টমারদের ইস্যু করে থাকে। যেমন; আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড ইস্যু করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলস ফারগো, আবার ব্যাংকো স্যান্ডটেন্ডারও একই কার্ড অফার করে থাকে মেক্সিকোতে।
এছাড়াও এই অ্যামেক্স বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেডিকেটেড ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড অফার করে থাকে।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড এর সুবিধা
১. লাইফস্টাইল সুবিধা
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসে গ্রাহকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ হল এর লাইফস্টাইল সুবিধা। অ্যামেক্স গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন বিমানবন্দরে ফ্রি লাউঞ্জ ও খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
২. এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট
অ্যামেক্স কার্ড দিয়ে বিভিন্ন শপে কেনাকাটা করার পর পেমেন্ট করলে এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
৩. রিওয়ার্ড পয়েন্ট
অ্যামেক্স কার্ড দিয়ে লেনদেন করলে গ্রাহক রিওয়ার্ড পয়েন্ট পেয়ে পায়। আর এই রিওয়ার্ড পয়েন্ট কার্ডের বিভিন্ন ফি দিতে এমনকি কার্ডের বিল পরিশোধেও ব্যবহার করা যায়।
৪. ক্রেডিট লিমিট থাকে
দেশভেদে গ্রিন, গোল্ড ও প্লাটিনাম অ্যামেক্স কার্ড ব্যবহার এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্পেন্ডিং লিমিট থাকেনা অর্থাৎ অনেক বেশি ক্রেডিট লিমিট এর সুবিধা পেয়ে থাকে গ্রহকরা।
৫. এই অ্যামেক্স কোম্পানি হাই কোয়ালিটি কাস্টমার সার্ভিস প্রদানে বেশ সুপরিচিত।
৬. ক্যাশব্যাকসহ বিভিন্ন ধরনের অফার
ক্যাশব্যাকসহ বিভিন্ন ধরনের অফার রয়েছে এই অ্যামেক্স কার্ডসমূহে রিওয়ার্ড, পার্ক ও পারচেজ এর ক্ষেত্রে।
অ্যমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ড এর অসুবিধা
১. ট্রানজেকশন ফি অধিক
অনেক গ্রহক অ্যামেক্স কার্ড গ্রহণ করতে চায় না কারণ অন্যান্য কার্ডের চেয়ে এর ট্রানজেকশন ফি অনেক বেশি।
২. অ্যামেক্স কার্ড পাওয়া দূর্লভ
হকের অধিক ক্রেডিট স্কোর ছাড়া অ্যামেক্স কার্ড পাওয়া যায় না।
৩. বার্ষিক ফি বেশি
অ্যামেক্স কার্ডের বার্ষিক ফি তুলনার চেয়ে অনেক বেশি।
৪. খরচের অসুবিধা
গ্রাহক যদি প্রতি মাসে বাড়তি ব্যবহৃত অর্থ পে না করে তবে সে পরের মাসে বাড়তি অর্থ খরচের সুযোগ পাবে না।
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ফি ও চার্জ
অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের জন্য গ্রাহককে এর বিভিন্ন বার্ষিক ফি ও চার্জ দিতে হয়। তবে এই ফি বা চার্জ নির্ভর করে গ্রাহকের কার্ডের ধরণের উপর। অর্থাৎ এই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি ৫০০ টাকাও হতে পারে আবার ২৫০০০ টাকাও হতে পারে।
এছাড়াও এই কার্ডের জন্য বার্ষিক এসএমএস ফি এবং এ ধরনের চার্জের উপর ভ্যাট প্রযোজ্য হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ অ্যামেক্স গ্রিনব্লু ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়ে থাকে। অ্যামেক্স গোল্ড ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি হয় ৫০০০ টাকা। আবার অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস গোল্ড ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি হয় ২৫০০০ টাকা।
এই পরিমাণগুলোর উপর আবার বিভিন্ন ভ্যাট থাকে, সেগুলোও দিতে হয়। অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে সাধারণত সেই কার্ডগুলোর কম বার্ষিক ফি হয়ে থাকে যেগুলো কম ক্রেডিট লিমিট ও কম রিওয়ার্ড পয়েন্টের উপযোগী কার্ড।
ট্রানজেকশন ফি থেকেই আসে অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস এর লাভের বিশাল অংশ। কারণ গ্রাহক যদি অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস পেমেন্ট অপশন হিসেবে প্রদান করে তবে সে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে।
এই কারণেই গ্রাহকরা এসব সুবিধার কথা বিবেচনা করেই অ্যামেরিকান এক্সপ্রেসকে অধিক ট্রানজেকশন ফি প্রদানে কোনো ধরনের আপোস করেনা।
আরো পড়ুনঃ ক্রেডিট কার্ড কি? এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানুন