ক্যামেরার দূর্দান্ত ক্লিকে তুলে আনুন জীবন্ত ছবি, কিছু পরামর্শ
এখন অনেকেই ফটোগ্রাফি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। অনেকেই এই পেশায় ঝুঁকে পড়ার কারণে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে অনেক।

ছবি তুলতে কে বা চায় না বলুন! আমরা সবাই নিজেদের একটু সুন্দর ছবি তুলতে কতো কিছুই না করি। আবার গতানুগতিক চাকরির বাইরেও এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় অনেকেই।
যেখান থেকে ভালোভাবে উপার্জন ও সম্মান দুটোই আদায় করা সম্ভব। এটি শুধু নেশায় নয়, অনেকের কাছে এটি পেশাও বটে। আর এই পেশাটিকে বলা হয় “ফটোগ্রাফি” ।
ফটোগ্রাফি হতে পারে নতুন পেশা
এখানে নিজের নিজের শখকে দক্ষতার পাশাপাশি শৈল্পিক জ্ঞানের সমন্বয়ে যে কেউ তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে পারে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করে গতানুগতিক পেশার পেছনে ছুটে থাকে। এদের মধ্যে কেউ চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হয়, আবার কেউ বা বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। সেই সকল মানুষদের জন্য চাকরির বাইরেও এমন অনেক কিছুই আছে। যা তারা করতে পারে।
তেমনই একটি বিষয় ফটোগ্রাফির মতো পেশা। যা অনেকের জন্যই হয়ে উঠতে পারে সফল ক্যারিয়ারের চাবিকাঠি। আজ আমি আপনাদের এই ফটোগ্রাফি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো। যার মাধ্যমে আপনার শখের নেশাটায় হয়ে যেতে পারে পেশা।
এখন অনেকেই ফটোগ্রাফি নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান। অনেকেই এই পেশায় ঝুঁকে পড়ার কারণে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে অনেক। তারমধ্যে ক্যামেরা এখন বেশ সহজলভ্য। তাই এই পেশায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে হতে হবে আরও দক্ষ এবং হতে হবে আরও সৃজনশীল।
আর মাথায় রাখবেন, শুধু ক্যামেরা থাকলেই ফটোগ্রাফার হওয়া যায় না। তাই এর জন্য প্রয়োজন পড়ালেখা, অধ্যাবস্যায় এবং নিজের মধ্যে থাকতে হবে প্রকৃতিকে ভিন্নভাবে দেখার অভ্যাস ও ক্ষমতা।
ফটোগ্রাফির প্রকারভেদ -
ফটোগ্রাফিরও আবার নানা ভাগ রয়েছে,
১. পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি
২. ফটো ডকুমেন্টারি
৩. ওয়েডিং ফটোগ্রাফি
৪. ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি
৫. নেচার ফটোগ্রাফি
৬. স্পোর্টস ফটোগ্রাফি
৭. ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এবং ৮. ফ্যাশন ফটোগ্রাফি ইত্যাদি
এমন অসংখ্য ভাগ রয়েছে এই ফটোগ্রাফিতে। আপনাকে এর মধ্যেই বেছে নিতে হবে আপনার নিজের দক্ষতা ও আগ্রহ অনুযায়ী। আপনি যদি পেশাদার হিসেবে এটাকে গ্রহণ করেন তবে সব ধরনের ফটোগ্রাফিতেই কাজ করার সুযোগ উন্মুক্ত রাখা উচিত।
এতে যেমন আপনার কাজের পরিধি বাড়বে, তেমনি কাজের সুযোগও পাবেন অনেক বেশি।
ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন
অনেকেই ভাবে ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য প্রথমে যেই জিনিসটা খুব বেশি দরকার তা হলো একটা ক্যামেরা। আসলে তা নয়। ফটোগ্রাফার হতে হলে যা থাকা খুবই জরুরি তা হলো সুন্দর এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা।
শুধু চিন্তাভাবনা থাকলেই হবে কি? না, তা হবে না। এরপর যা প্রয়োজন হবে তা হলো অনেক বেশি অনুশীলন। আর ফটোগ্রাফির জন্য অবশ্যই লাগবে একটি ভালো ক্যামেরা। সুতরাং আপনার যদি একজন প্রফেশনাল মানের ফটোগ্রাফার হওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে প্রথমে একটা সাধারণ মানের কম্প্যাক্ট ক্যামেরা দিয়ে দিয়ে শুরু করতে পারেন।
আর সেটা দিয়ে এক বছরের মত সময়ে আপনার নিজের হাতের উপর একটা দক্ষতা গড়ে তুলতে পারেন। এরপর আপনি একটা ভালো মানের DSLR ক্যামেরা নিয়ে ব্যবহার করে দেখতে পারেন! সুতরাং বুঝতেই পারছেন ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য প্রথমেই চাই অনেকবেশী ইচ্ছা এবং অনুশীলন।
ফটোগ্রাফার হবেন কিভাবে?
১. একটি ভাল ক্যামেরা
ফটোগ্রাফির মুল উপকরণ হলো, একটি ভাল ক্যামেরা। আর সাধারনত যারা প্রথমবার ক্যামেরা কিনে তাদের অনেক কনফিউশন থাকে আর অনেকেই ভুল করে এমন কোন ক্যামেরা কিনে ফেলে যেগুলো হয়তো সে ব্যবহার করতেই জানে না তাই সেটা তার কোন কাজেই আসে না। এজন্য সঠিক ক্যামেরাটা বাছাই করা খুবই প্রয়োজন।
আর এরজন্য দরকার হলে কারো সাহায্যও নেয়া যেতে পারে। আর মনে রাখতে হবে যে, যারতার সাহায্য না নিয়ে যারা ইতিমধ্যে ক্যামেরা কেনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন অথবা যারা এটা সম্পর্কে অভিজ্ঞ এমন কারো সাহায্য নেয়া উচিত।
এছাড়াও আপনারা অনলাইনেরও সাহায্য নিতে পারেন। কারণ আজকাল অনলাইনে পাওয়া যায় নানা রকম রিভিউ। কোন বাজেটের মধ্যে কোন ক্যামেরা ভালো, কেন ভাল, কোনটা দিয়ে কি করা যায়, কোন লেন্সটা ভাল এই সবকিছুই আপনি যাচাই বাছাইও করে নিতে পারবেন।
কারণ ক্যামেরা কেনার আগে সেটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাটা খুবই জরুরী।
২. ক্যামেরার সঙ্গে থাকা উচিত
ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার জন্য আপনার ক্যামেরার সকল ব্যবহার সম্পর্কে উত্তম রূপে অবগত হওয়া উচিত। কোন মেন্যু দিয়ে কী হয়, কোন অপশনটির কি কাজ ইত্যাদির কোনটিই যেন বাকি না থাকে। আর তাই সব সময় ক্যামেরা সাথে রাখা উচিত।
৩. ফটোগ্রাফির টেকনিকগুলো সম্পর্কে জানা
যতটা সম্ভব ফটোগ্রাফির টেকনিকগুলো শিখে নেয়া উচিত। পয়েন্ট, শট, ক্যামেরা ইত্যাদি সম্পর্কে যত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন ততই আপনি ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারবেন। আপনার কাজের দক্ষতাও বাড়বে।
৪. ম্যানুয়াল মোডে ছবি তোলা
সকল পেশাদার আলোকচিত্রীর প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো ম্যানুয়াল মোডে ছবি তুলতে পারা। এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে, আপনি নিজের মতো করে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। প্রথম প্রথম ম্যানুয়াল মোডে ক্যামেরা চালাতে গেলে খুব কঠিনই মনে হতে পারে।
কিন্তু আপনি যদি এই মোডে ক্যামেরা চালাতে পারেন অর্থাৎ আপনি যখন সত্যিই ক্যামেরায় যথার্থ আলো নিয়ন্ত্রণ করে ছবি ক্যাপচার করার সঠিক উপায় বুঝে যাবেন, তখন প্রতিটি ফ্রেমের উপর সম্পূর্ণ সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আর ভালো লাইটিং এবং ফোকাসিং শিখে গেলে অত্যন্ত জটিল আলোক পরিস্থিতিতেও ছবি তোলার জন্য নিজেকে উপযুক্ত করে নিতে পারবেন। আর এটি ক্যামেরার অটো মোড কখনোই করতে পারে না।
মনে রাখবেন ম্যানুয়াল মোড আলোকচিত্রীকে জানতে বাধ্য করে যে, তার লেন্সে ঠিক কী ঘটছে! আর এটি একজন আলোকচিত্রীকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
৫. নিজের এবং নিজের কাজ সম্বন্ধে জানা জরুরি
নিজস্ব স্টাইল ও কাজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হলো আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ। এটা অবশ্যই আপনার নান্দনিকভাবে ধ্যান ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এভাবেই নিজের ফটোগ্রাফি ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে। এটাই হবে আপনার প্রথম ও কাজ সূচনাকালীন পোর্টফোলিও।
মনে রাখবেন, সময় পার হওয়ার সাথে সাথে পোর্টফোলিও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হবে আপনার কাজের ব্যপ্তি ও পরিপক্কতার উপর ভিত্তি করে। এজন্যই কি ধরণের ফটোগ্রাফি আপনার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে, তা আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে ঠিক কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কাজের তৃপ্তির জন্য আপনি ফটোগ্রাফিতে ঠিক কী তুলে ধরতে চান তা খুঁজে বের করা খুবই জরুরি।
আর এই কাজটিই সবার আগে করতে হবে। আপনার কাজে তৃপ্তি খুঁজে পেতে হলে নিজের ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে হবে। আর সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং জেনে বুঝে কাজটি করতে হবে।
৬. বেসিক ফটোগ্রাফি সম্পর্কে জানা
ফটোগ্রাফির কিছু বেসিক আছে যা ফটোগ্রাফি প্র্যাকটিস শুরু করার আগেই এসব বেসিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জানতে হবে। যেমন কম্পোজিশন, লাইটিং, ফোকাসিং, সাবজেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড, ডেপথ অব ফিল্ড, ফ্রেমিং ইত্যাদি।
৭. প্রস্তুত থাকুন সবসময়
ভাল ছবি তোলার সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলে সবসময় প্রস্তুত থাকা। অর্থাৎ সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে রেডি থাকা। এজন্য নিজের ক্যামারাটি সবসময় বহন করার চেষ্টা করা উচিত।
খুব ক্ষুদ্র পরিসরে আপনাদের ফটোগ্রাফির বিষয় সম্পর্কে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। শখ থেকেই হোক বা পেশা থেকেই হোক আপনি যদি ফটোগ্রাফার হতে চান তবে আশা করি আমার এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে।
আপনিও আপনার মূল্যবান লেখা প্রকাশ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারেন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ সম্পদ বনাম দায়(Assets Vs Liabilities): দায় কে সম্পদে রুপান্তর করুন
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






