দক্ষিণী ভারতীয় সিনেমা ‘RRR’ রেকর্ড-ব্রেকিং বস হয়ে উঠেছে
দক্ষিণী পরিচালক রাজামৌলি তাঁর বাহুবলী ফ্র্যাঞ্চাইজি এরপর তাঁর নতুন ছবি ট্রিপল আর -এ এবার সৃষ্টি করলেন ভারতীয় সুপার হিরোদের জনগাঁথার বর্ণনা।

RRR – মুভি সংক্ষেপ
পরিচালক: এস.এস রাজামৌলি
সঙ্গীত: এম.এম কিরাবানী
অভিনয়: রাম. এন টি রামা রাও (জুনিয়র), অজয়, আলিয়া, এলিসন ও আরো অনেকে।
ব্যক্তিগত রেটিং: ৪.৫/৫
ছবির নাম ইংরেজি অক্ষর ‘R’ তিনবার কেন?
১। দ্য স্টোরি
২। দ্য ফায়ার
৩। দ্য ওয়াটার
দ্য স্টোরি
১৯২০ সালের পরাধীন দেশের তখনো স্বাধীনতা আসতে অনেক পথ বাকি। সেই প্রাক স্বাধীন দেশের আদিলাবাদের জঙ্গল থেকে এক আদিম জনজাতির এক কিশোরী কে ব্রিটিশ গভর্নর স্কট (রে স্টিভেনসন) ও লেডি স্কট (এলিসন) সেই মেয়েটি, নাম “মৌল্লি” লেডি স্কট এর হাতে মেহেন্দি লাগানোর কারুকার্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে কিছু মুদ্রার বিনিময়ে তাকে তুলে যান নিজেদের সঙ্গে।
মৌল্লির মা বাধা দিতে এলে তার মাথায় গাছের গুঁড়ি দিয়ে সপাটে আঘাত করে হয়। মেয়েটির মা মারা যান।
দ্য ফায়ার
লালা লাজপত রায়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল তৎকালীন দিল্লী। সেই উত্তাল জনতার মধ্য থেকে একজন কে পায়ের কাছে হাজির করবার জন্য আদেশ দেন ব্রিটিশ আধিকারিক।
সেই বিশেষ একজন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন সীতারাম রাজু ওরফে রাম (রামচরণ) একা পাঁচশো জনের সঙ্গে লড়াই করার অসাধ্য সাধন করেন।
দ্য ওয়াটার
জলের ওপরে লড়াই রত দুই মাহানায়ক রাম এবং কাথারাম ভীম এর প্রথম সাক্ষাত দর্শিত হয়েছে। এই প্রথম সাক্ষাৎ এক একশন দৃশ্য ছবিতে - দুর্দান্ত! ছবির সবচেয়ে বড় “আর” স্বয়ং পরিচালক রাজামৌলি।
অনেক দেশেরই নিজেদের পরিচয় বলতে তেমন কিছু থাকেনা- তারা নিজেদের “মিথলজি” লেখে পৌরাণিক গল্পগাথায়, লোকমুখে চলে আসা কাহিনী গল্প নিয়ে।
ভারতের পুরাণ ও রাজামৌলি ফ্র্যাঞ্চাইজি
ভারতের কিন্তু পুরাণ আছে, ইতিহাস আছে, আার আছে বর্ণময় সংস্কৃতি। পরিচালক রাজামৌলি এই সব সম্পদ কে নিয়ে তাঁর ছবির ক্যনভাসে রং ভরেছেন। তাঁর লোকপ্রিয় দর্শকের মন জয় করা ‘বাহুবলী’র উল্লেখ না করলে চলে না।
দক্ষিণী পরিচালক রাজামৌলি তাঁর বাহুবলী ফ্র্যাঞ্চাইজি এরপর তাঁর নতুন ছবি “ট্রিপল আর” -এ এবার সৃষ্টি করলেন ভারতীয় সুপার হিরোদের জনগাঁথার বর্ণনা।
এবারে বাহুবলীর মতো কেবল ফ্যান্টাসি নয়, মিশিয়েছেন তার সঙ্গে পুরাণ, পরাধীনতার ইতিহাস, আর দক্ষিনী অস্মিতা তথা সাহসিকতা।
RRR ও মহামারীর চ্যালেঞ্জ কেও মোকাবিলা
আজ এই মহামারী কালে খুব বিপদ ফিল্ম পরিচালকদের। বিশেষত, প্রযোজকদের। ওটিটি নির্ভর সময়ে কি ভাবে কি ছবি বানালে দর্শকের মন আড়াই, তিন ঘন্টা সিনেমা হলে ধরে রাখতে পারেন তা রীতিমত গবেষণার বিষয়।
সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক রাজামৌলি এক ফ্যন্টাসি ড্রামাকে সিনেমা হলে পরিবেশন করেছেন। তাঁর বিশ্বাস ধর্ম বর্ণ বয়স নির্বিশেষে সব দর্শক এই ছবি দেখতে হলে আসবেন। এবং সেটা পিভি আর ও আইনক্সের বহুল ভীড় প্রমাণ করছে।
পরিচালক তাঁর চোখ দিয়ে এক আঞ্চলিক বাধাবন্ধন ভেঙেছেন। তিনি তাঁর চোখ দিয়ে তাঁর অতিপ্রিয় নায়ক রামচরণ ও এনটি.রামা.রাও (জুনিয়র) ভূমিকা সৃষ্টি করেছেন- তা যে দর্শক মনেও প্রভাব ফেলতে পেরেছে সেটা তাঁর বিশেষ কৃতিত্বের পরিচায়ক।
রাজামৌলির অসাধারণ সেট ও সেটিংস
রাজামৌলি দেখিয়েছেন অসামান্য সব সেট'স এর সমাহার। সিনে-প্রেমিকদের নজর ও মন কাড়া সেই সব দৃশ্যাবলী। এই সিনেমার প্রোডাকশন ডিজাইন অন্য কোন কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে বাধা দেয়।
আর একশন দৃশ্য- যদিও তা ছবির সিংহভাগ জুড়ে আছে। তাও তার প্রোডাকশন ডিজাইন- কোন তুলনা হয় না, আবারও বলা। থ্রি ডি স্পেক্টাকল চশমা চোখে এঁটে দর্শক মহলে এক রোমাঞ্চকারী অভিজ্ঞতা!
মানুষের লড়াই তো আছেই, বাঘে- মানুষে একই সাথে পরস্পরের মুখোমুখি ঝাঁপিয়ে পড়ছে, পর্দা জুড়ে আগুনের ঝলকানি, চোখ ঝলসে যাচ্ছে! আর ফাঁকে ফাঁকে ধনুকধারী রাম বেশে রামচরণের ধনুক নিয়ে যুদ্ধ।
এই ছবিতে গল্প নয়, ভিজ্যুয়্যাল বড়। টান টান গল্পের চেয়ে এখানে ভিজ্যুয়্যাল এর শক্তি দশ গুণ বেশী। যেখানে দুই জন কথা বলছে মানে শুধু সংলাপ, সেখানেও কি অসাধারণ সেট, কি চোখ কাড়া ভিজ্যুয়্যাল!
দুই মহারথীর দ্বৈরথ (রামচরণ ও এনটি.রামা.রাও (জুনিয়র)
দুই মহারথীর দ্বৈরথ ব্রিটিশ শাষকদের বিরুদ্ধে সেখানে ভীম এর কাঁধে বসে তীর চালাচ্ছে রাম তার তীরে বারুদ বাঁধা!
রাজামৌলির অন্য ছবিতে একটি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা কথার মতো এখানেও সেটি গঠন করেছেন, তাঁর স্বকীয়তা গুণে। ভ্রাতৃত্ব, চিরন্তন বন্ধুত্ব, প্রেম, বদেশ প্রেম, পারিবারিক বন্ধন সব বিষয় উপস্থিত সিনেমা “ট্রিপল আর” এ।
সব চেয়ে বিশেষতা, পরিচালক দিয়েছেন এক মানবিকতার বার্তা! দেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে নিয়ে এসেছেন আর্য, অনার্যর এক সাধনা। বলিউডি স্টাইল নয়, নয় অক্ষয় কুমা, ভিকি কৌশলের মাধ্যমে। নিজস্ব স্টাইলে রাম ও এনটি.রামা.রাও (জুনিয়র) কে এনে এক বাঁধনে বেঁধে দারুণ দুই চরিত্র সৃষ্টি করা।
রামের বাবার চরিত্রে অজয় দেবগণ স্বল্পপরিচয়ে দেশ প্রেমিকের ভুমিকায় দারুণ। রামের অপেক্ষায় থাকা তার প্রেমিকার ভুমিকায় আলিয়া ভট্ট যথাযথ।
পরিশেষ
এই সিনেমা চিরাচরিত প্রেমের বা লাফ ঝাঁপ ভরা সঙ্গীত না থাকলেও আবহ সঙ্গীত মন ভরিয়ে দেয়। মন কেড়ে নেয়। ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক বিভিন্ন রুপে দৃশ্য গুলিকে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে।
কে কে সিনথিল এর ক্যামেরা কথা কয়েছে যেন! সাবু সিবিল এর প্রোডাকশন ডিজাইন এবং ৮৫। জনের টিম এর ভিজ্যুয়্যাল ইফেক্ট- এই রুপকারেরা ছাড়া এই ছবি ক্যানভাসে অসম্পূর্ণ থাকতো।