বর্তমান সময়ে মানুষ তাদের প্রায় সকল কাজই অনলাইনে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই করে থাকে। বিশেষ করে ব্লগার (Blogger) বা ফ্রিল্যান্সারদের (Freelancer) বিভিন্ন ধরণের অনলাইন পেইমেন্ট বা টাকা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন পেইমেন্ট সিস্টেম এর ব্যবহার করতে হয়।
অর্থাৎ একজন ব্লগারকে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন পেইমেন্ট করতে লাগতেই পারে। যেমন, হোস্টিং (Hosting), ডোমেইন (Domain), ওয়ার্ডপ্রেস থিম (WordPress Theme) কেনা ও ‘Renew’ করা ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রে।
এজন্য বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন পেইমেন্ট সিস্টেম আছে যার মাধ্যমে মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় লেনদেন করে থাকে। আর এই অনলাইন পেইমেন্ট সিস্টেমগুলোর মধ্যে পেপ্যাল বেশ জনপ্রিয় একটি সিস্টেম।
পেপ্যাল (PayPal) কি?
পেপ্যাল হলো এমন একটি অনলাইন ওয়েবসাইট, যা ব্যবহার করে মানুষ অনেক সহজেই পেইমেন্ট গ্রহণ করতে এবং বা পাঠাতে পারে। এই অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে গ্রাহক নিজের ব্যক্তিগত বা ব্যবসার ক্ষেত্রে টাকার লেন দেন করে থাকেন খুব সহজে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ভাবে দেশের বাইরে টাকা পাঠানো বা দেশের বাইরে থেকে টাকা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট হলো টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করার একটি অনলাইন সার্ভিস। যা যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে।
পেপ্যাল (PayPal) ব্যবহার করা হয় কেন?
পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট এর সংজ্ঞা থেকেই বোঝা যায় মানুষ কেন এই পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। কারণ এই পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট আন্তর্জাতিক ভাবে টাকা গ্রহণ করা ও টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এর অন্যান্য আরও কারণ আছে।
১. কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই কেবল একটি ইমেইল অ্যাড্রেস (E-mail Address) এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায়।
২. টাকা গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও এই একই সুবিধা পাওযা যায়। অর্থাৎ কেবল নিজের পেপ্যাল একাউন্ট এর সাথে জড়িত ইমেইল আইডি দিয়েই গ্রাহক টাকা গ্রহণ করতে পারে।
৩. এই পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহক আন্তর্জাতিক ভাবে কোনো সমস্যা ছাড়াই অনেক সহজে টাকা পেইমেন্ট করতে পারে।
৪. পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট অনলাইনে টাকা লেনদেন করার অনেক সুরক্ষিত একটি মাধ্যম।
৫. দেশের বাইরের বিভিন্ন অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট গুলো থেকে পণ্য কেনার পর পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পেমেন্ট করার অপশন থাকে।
৬. পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে গ্রাহক একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ডেবিট কার্ড যোগ করতে পারে। এজন্য টাকা লেন দেন করার ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী কোন ব্যাংক থেকে লেন দেন করবে তা বাছাই করতে পারে। অনেক গ্রাহক এই সুবিধের জন্যই পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন।
৭. পেপ্যাল মোবাইল অ্যাপ (PayPal Mobile App) এর মাধ্যমে, গ্রাহক নিজের মোবাইল থেকেই এর ব্যবহার করতে পারে।
পেপ্যাল (PayPal) অ্যকাউন্টের সুবিধা
পেপ্যাল অ্যকাউন্ট কেন ব্যবহার করা হয় তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে এর সুবিধাগুলো কি কি হতে পারে। তবুও জেনে নিন এই পেপ্যাল অ্যকাউন্টের সুবিধাগুলো।
১. পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একজন গ্রাহক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় টাকা পাঠাতে পারবেন এবং টাকা গ্রহণ করতেপ পারবেন।
২. অন্যান্য অনলাইন পেইমেন্ট সার্ভিস এর তুলনায় পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট অনেক বেশি সুরক্ষিত ও বিশ্বস্ত।
৩. এই পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে গ্রাহক নিজের ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড যোগ করে পেইমেন্ট করতে পারবে।
৪. একাধিক ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যোগ করা যায়।
৫. গ্রাহক তার পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে গ্রহণ করা টাকা, সোজা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারবে।
৬. ফ্রিল্যান্সাররা কাজের বিনিময়ে যেকোনো জায়গা থেকে পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনেক সহজে টাকা গ্রহণ করতে পারে।
৭. ব্লগাররা হোস্টিং এবং ডোমেইন কেনার ক্ষেত্রে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পেইমেন্ট করতে পারে।
৮. পেপ্যাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শপিং করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অফারের সুবিধ থাকে।
৯. যেকোনো সার্ভিস এর ক্ষেত্রে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পেমেন্ট করলে গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট কার্ড অথবা ক্রেডিট কার্ড এর তথ্য না দিয়েই পেইমেন্ট করা যায়। এতে গ্রাহকের ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকে।
পেপ্যাল (PayPal) অ্যাকাউন্টের প্রকারভেদ
পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ২ প্রকার,
ক. ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট (Personal Account)
অনেক সাধারণ হয় পার্সোনাল পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট। এটি মূলত ব্যবহার করা হয় অনলাইনে কেনাকাটা করার উদ্দেশ্যে। এই পার্সোনাল অ্যাকাউন্টিকে ইনডিভিজুয়াল অ্যাকাউন্টও (Individual Account) বলা হয়।
নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে হয় এই অ্যাকাউন্টে। আর সেই টাকা গুলোই ব্যবহার করে গ্রাহক অনলাইন শপিং বা অন্যান্য পেপ্যাল ব্যবহারকারীদের টাকা পাঠানো হয়।
তবে, এই পার্সোনাল অ্যাকাউন্টে সরাসরি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে পেইমেন্ট গ্রহণ সম্ভব না। কেবল, নিজের পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে তোলা টাকা ব্যবহার করেই পেইমেন্ট বা লেন দেন করা যাবে।
একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড যোগ করা যায়। আর এগুলোর মাধ্যমে পেপ্যাল অ্যাকাউন্টে টাকা তুলে তা পেইমেন্ট করা যাবে। ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ ব্যবহারের জন্য এই অ্যাইকাউন্টটি সেরা।
খ. বিজনেস অ্যাকাউন্ট (Business Account)
এই বিজনেস অ্যাকাউন্টটি অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য সেরা। একটি কোম্পানি বা অর্গানাইজেশনে যারা অনলাইন ব্যবসার সাথে সংযুক্ত তারা এই ধরণের পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন। এখানে প্রত্যেক ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড পেইমেন্ট গ্রহণ করা হয়।
তাছাড়াও এই বিজনেস পেইমেন্টের সাথে জড়িত অন্যান্য বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায় এই অ্যাকাউন্টে। তবে ব্যক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা লাভজনক হবেনা।
বাংলাদেশে কি পেপ্যাল (PayPal) অ্যাকাউন্ট আসছে?
বাংলাদেশে এখনও অফিসিয়ালি পেপ্যাল অ্যাকাউন্টকে গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু গ্রাহক আন-অফিশিয়ালি বাংলাদেশ থেকে পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে তবে তা বিজনেস পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট হতে হবে এবং সেটিকে ভেরিফাইও করা যাবে।
কারণ পার্সোনাল পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট করার জন্য এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দেয়নি। তবে বিজনেস পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এটি ব্লক করে দেওয়া হয় না।
সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল ব্যাংকিং কি? এর ইতিহাস ও সুবিধা সম্পর্কে জানুন