রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ৫টি সহজ উপায় সম্পর্কে জানুন
কোনো ব্যক্তি ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর তার ব্রেন অচল হতে শুরু করে। মানুষকে প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টারও বেশি সময় ঘুমাতে হবে বোধবুদ্ধি সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য। যদি কেউ ৭ ঘন্টা দশদিন ঘুমায় তাহলে তার ব্রেন ঠিক তেমনই অকার্যকর হয়ে পড়বে যেমনটা ২৪ ঘন্টা না ঘুমানোর ফলে হয়ে থাকে।

সুস্থ জীবন কাটানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। একজন মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। এই ৮ ঘন্টা ঘুমের সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায় প্রাপ্ত বয়স্কদের বেশিরভাগই ঘুমের এই সময়টা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়।
৮ ঘন্টা ঘুমের সুপারিশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
যেসব পুরুষ রাতে ৮ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় ঘুমায় তাদের অন্ডকোষের তুলনায় যারা রাতে ৫ ঘন্টা ঘুমায় তাদের অন্ডকোষ আকারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছোট হয়ে যায়। কম ঘুমের জন্য ক্যান্সার, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, মেদবৃদ্ধি, হৃদযন্ত্র বন্ধ, আলঝেইমার রোগ ও অকালমৃত্যুর ঝুঁকিও বৃদ্ধি করতে পারে বলে ওয়াকার উল্লেখ করেন।
ঘুম সংক্রান্ত ওয়াকারের একটি অডিও বই আছে। সেই বইটির নাম হল, ‘কেন আমরা ঘুমাই?’। এটা নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং বই। ওয়াকার তাতে উল্লেখ করেছেন যে, ৫ ঘন্টা ঘুমানো কোনো ব্যক্তির অবস্থা দাঁড়ায় একজন মাতাল ব্যক্তির মতই।
কারণ কোনো ব্যক্তি ১৬ ঘন্টা জেগে থাকার পর তার ব্রেন অচল হতে শুরু করে। মানুষকে প্রতি রাতে কমপক্ষে ৭ ঘন্টারও বেশি সময় ঘুমাতে হবে বোধবুদ্ধি সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য। যদি কেউ ৭ ঘন্টা দশদিন ঘুমায় তাহলে তার ব্রেন ঠিক তেমনই অকার্যকর হয়ে পড়বে যেমনটা ২৪ ঘন্টা না ঘুমানোর ফলে হয়ে থাকে।
তাই ঘুমানো টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু অনেকেরই ঘুম না আসার একটা সমস্যা দেখা যায়। ফলে অনেক সময় দেরিতে ঘুম আসার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমটি হয় না। তাই আজ আমরা কিভাবে দ্রুত ঘুম আসে সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো।
দ্রুত ঘুম আসার পাঁচটি বৈজ্ঞানিক পন্থা আছে। যা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে ও অতিরিক্ত সময় ঘুম ফিরে পেতে সাহায্য করে।
১. একটি নির্দিষ্ট ঘুমের সময় বহাল রাখা
তিনি বলেন যে, যে সময়টি ঘুমানোর চিন্তা করেছেন তার ঠিক একঘন্টা আগে ফোনে সে সময়টি সেট করে রাখুন যাতে সময়টি এলে সতর্কমূলক এলার্ম বাজে। এছাড়া আরও একটি কার্যকর পন্থার কথাও বলেন তিনি। সেটি হল ঘুমানোর পূর্বের সময়ের একটি রুটিন তৈরি করা যা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করবে।
যেমন, ঘুমানোর পূর্বে পাঁচ মিনিট স্ট্রেচিং ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা। তারপর বিছানায় শুয়ে একটি বই পড়া এবং বইপড়া শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে যাওয়া। ঘুমানোর পূর্বের সময়ে কোন কোন কাজ করলে সবচেয়ে ভালো ঘুম হয় তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত।
২. ঘুমের জন্য অন্ধকার পরিবেশ সৃষ্টি
ওয়াকার পরামর্শ দেন যে, ঘুমাতে যাবার আগে বাড়ির আলোর অর্ধেকের আলো কমিয়ে দেয়া উচিত। এবং ঘুমাতে যাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে সকল ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বন্ধ করে দিয়ে ঘুমের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
৩. শরীর ঠান্ডা রাখা
ওয়াকার বলেন, গোসল করার পর তা শরীরের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ নিঃসরণ করতে সাহায্য করে এবং উত্তাপ হ্রাস পায়। ফলে দ্রুত ঘুম চলে আসে। স্বাস্থ্যবান বয়স্কদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পরিমাণ ঘুম গভীর করে ঘুমানোর আগে এই গরম পানিতে গোসল করার জন্য।
৪. রাতে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার
ক্যাফেইনের একটি ডোজের পর এই ক্যাফেইন ব্রেনে অ্যাডেনোসাইন গ্রহণের একটি রিসেপ্টর বন্ধ করে দেয় ও আবরণে ঢেকে ফেলে। ফলে ১৬ ঘন্টা জাগার পরও আমদের ঘুম আসে না। এর কারণ হল, ক্যাফেইন অ্যাডেনোসাইনের ব্রেন সিগন্যাল বন্ধ করে দেয় এবং সাথে সাথে ব্রেনে ঘুমের চাপ নির্দেশককেও নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।
৫ থেকে ৭ ঘন্টা ক্যাফেইনের গড় স্থিতি শক্তি সেজন্যই ওয়াকার মনে করেন, রাত ২টার পর ক্যাফেইন খাওয়া পরিহার করা উচিত। তিনি তার সেই বিখ্যাত বই ‘আমরা কেন ঘুমাই?’ এ পরামর্শ দিয়েছেন যে, সন্ধ্যার পর মদ, এমনকি ওয়াইন বা হুইস্কি খাওয়া উচিত নয়।
এটি ভালো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। অ্যালকোহল বহুমুখী কারণ সৃষ্টি করে মধ্যরাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে। সে সাথে আরইএম ও স্বপ্নময় ঘুমকে বাধাগ্রস্ত করে। যা মানসিক স্বাস্থ্যের বেশ ক্ষতি করে।
৫. জাগার পর বিছানায় থাকবেন না
এজন্যই ওয়াকার মনে করেন যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে অন্য আরেকটি মৃদু আলোকিত রুমে গিয়ে বই পড়া উচিত ঘুম না আসা পর্যন্ত। এবং ঘুম এলেই আবার বিছানায় ফিরে গিয়ে ঘুমানো উচিত। মেডিটেশন বা ধ্যানকে দ্রুত ঘুমানোর একটা পন্থা বলে মনে করেন ওয়াকার। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মনকে শান্ত করে যা ইন্সমোনিয়ার এক প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সত্যি বলতে ঘুমানো বিজ্ঞানের একটি আর্ট। এসব বৈজ্ঞানিক পন্থা অবশ্যই দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করবে। তবে সবার জীবনশৈলি ও পরিস্থিতির জন্য কোনটা ভালো ও উপকারী তা পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। সবচেয়ে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সুস্থ, উৎপাদনশীল ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য ঘুম অত্যাবশ্যক। তাই জীবনে সবাইকেই ঘুমকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






