আমাদের সবার মধ্যে এক ধরণের চাহিদা থাকে। আমরা একটি বাড়ি, একটি গাড়ি এবং কিছু জমি ক্রয় করা কে সম্পদ (Asset) বিবেচনায় নিয়ে থাকি। কিন্তু গাড়ি, বাড়ি ও জমি এসব মূলত দায় (Liability)। কিন্তু কীভাবে? এই অনুচ্ছেদে আমি চেষ্টা করবো এই দুটো বিষয় (Liability Vs Asset) সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর। একই সাথে একটি বিষয় সম্পদ বা দায় কীভাবে হতে পারে বা আমাদের যে ধারণা তা ভুলও হতে পারে তার বিশ্লেষণে কোন কমতি রাখবো না।
সম্পদ (Asset) কি?
সম্পদ হলো ঐ জিনিস যা থেকে টাকা পকেটে আসে। এর উল্টো হলে? মানে পকেট থেকে যদি খরচ করতে হয় তবে সেটা সম্পদ (Asset) নয়। সম্পদ (Asset) কে মোটামুটি ৬ ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।
১. Fixed Asset
ফিক্সড কোন সম্পদ (Asset) বলতে বুঝায় যেখান থেকে আমরা নিরাপত্তার সাথে টাকা পেতেই থাকবো। যেমন ধরুন, জমি ক্রয় করা, ফ্ল্যাট কিনে সেটা ভাড়া দেওয়া, যন্ত্রপাতি বা গাড়ি ক্রয় করা ও ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি।
২. Current Asset
ক্যারেন্ট সম্পদ (Asset) বলতে বুঝায় আমরা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা কোথাও বিনিয়োগ করছি এবং মাস শেষে বা বছর শেষে সেখান থেকে আমরা আয় করতে শুরু করবো। এই ক্যাটেগরির মধ্যে পড়ে, ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট (যদিও এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে), স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ, ডিজিটাল ক্যারেন্সি ক্রয় ইত্যাদি।
তবে প্রথম ধরণের সাথে এখানে পার্থক্য হচ্ছে, আমরা বিনিয়োগকৃত টাকা তাৎক্ষণিক পাবো না; সেজন্য আমাদের নির্দিষ্ট কিছু সময়ের প্রয়োজন পড়বে।
৩. Liquid Asset
একটি তরল সম্পদ এমন একটি সম্পদ যা অল্প সময়ের মধ্যে সহজেই নগদে রূপান্তরিত করা যায়। তরল সম্পদের মধ্যে নগদ, মানি মার্কেটের উপকরণ এবং বাজারযোগ্য সিকিউরিটিজের মতো জিনিস অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর্থিক অ্যাকাউন্টিং উদ্দেশ্যে, একটি কোম্পানির তরল সম্পদ তার ব্যালেন্স শীটে বর্তমান সম্পদ হিসাবে রিপোর্ট করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স, ক্যাশ টাকা, মুচলেকা ইত্যাদি।
৪. Tangible Asset
যে সম্পদ আপনি দেখতে পারছেন এবং প্রয়োজনে ব্যবহার বা ছুঁতেও পারছেন সেটাকেই ‘Tangible Asset’ বলা হয়ে থাকে। যেমন ধরুন, আপনার বাড়ি, আপনার কেনা সম্পত্তি বা ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ইত্যাদি।
৫. Intangible Asset
যে সম্পদ আপনি দেখতেও পারবেন না, আবার ছুঁতেও পারবেন না এমন ধরণের সম্পদ কে ‘Intangible Asset’ বলা হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি।
৬. Waste Asset
এই নাম শুনেই বুঝে যাবার কথা। যাইহোক, এটা হলো সেই সম্পদ যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। যেমন ধরুন, পেটেন্ট।
(ফুটনোট: পেটেন্ট হল একটি পণ্য বা একটি প্রক্রিয়ার একচেটিয়া অধিকার যা সাধারণত কিছু করার একটি নতুন উপায় প্রদান করে, বা একটি সমস্যার একটি নতুন প্রযুক্তিগত সমাধান প্রদান করে।)
দায় (Liability) মূলত কী?
‘দায়’ বিষয়টি হলো, যা আপনার পকেট থেকে টাকা নিয়ে যায়। শুধুমাত্র একবারের জন্য নয় বরং বারবার। হ্যাঁ, একটা কথা সত্য যে, দায় (Liability) সবারই কম বেশি থাকে। কিন্তু বিষয় এটা নয়। বিষয় হলো, কি পরিমাণ ‘দায়’ একজন মানুষ বহন করছেন?
আপনার ‘দায় (Liability)’ অবশ্যই কম হওয়া উচিত আপনার ‘সম্পদ (Asset)’ এর তুলনায়। বেশি হলে আপনি একসময় ভয়ানক ভাবে ঋণগ্রস্ত হতে বাধ্য। দায় (Liability) -কে মোটামুটি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।
১. Fixed Liabilities
স্থায়ী দায় হচ্ছে এমন এক ধরণের দায় যেটা আমাদের কিছু সময় বাদে সেজন্য টাকা খরচ করতে হয়। এর মধ্যে পড়ে, লোন, ক্রেডিট কার্ড (বাৎসরিক চার্জ) ইত্যাদি। ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পেও এই বিষয়টি লক্ষ্য করবেন।
২. Current Liabilities
নাম শুনেই বুঝে যাবার কথা। যাইহোক, এই ধরণের দায় হচ্ছে, যা আমাদের নিয়মিত টাকা খরচ করতে বাধ্য করায়। ক্রেডিট কার্ড ট্রাঞ্জেকশন ফি, বিদ্যুৎ বিল, বাড়ির জন্য ব্যাংক থেকে লোন, কার লোন ইত্যাদি।
৩. Contingent Liabilities
আনুষঙ্গিক দায়বদ্ধতা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে বাজে একটি ‘দায়’। কারণ, ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নিলে আপনাকে জানানো হয় যে, মোট চার্জ কত পড়বে? বা সুদের হার কত? কিন্তু এই ধরণের দায়ের ক্ষেত্রে খরচের কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। যেমন ধরুন, কোর্টে আপনি কোন কেস লড়ছেন। এখন উক্ত কেস কতদিন ধরে চলবে তার নির্দিষ্ট কোন তারিখ বলা দুষ্কর। যতদিন কেস চলবে, ততদিন আপনার খরচ হতেই থাকবে।
গাড়ি, বাড়ি ও জমি এসব দায় (Liability) কীভাবে?
লক্ষ্য করবেন, এই অনুচ্ছেদের শুরুতেই আমি জানিয়েছি যে, আপনার বাড়ি, গাড়ি বা জমি আপনার ‘দায় (Liability)’। কেন? কারণ হলো, আপনার বাড়ি আপনাকে টাকা দেবে না। বরঞ্চ আপনাকে আপনার বাড়ি পরিচালনার জন্য টাকা খরচ করতে হবে।
কিন্তু ঐ একই বাড়ির কিছু অংশ বা নির্দিষ্ট অংশ কাউকে যদি ভাড়া দেন তাহলে তা সম্পদে পরিণত হবে। ঢাকায় যারা বাড়ি ভাড়া দেন তাদের এটা বুঝানোর কোনো দরকার নেই; কারণ তারা জানেন। ঠিক তেমনি কারের জন্য পেট্রোল এক ধরণের ‘দায়’, আবার ঐ একই কার ভাড়া দিলে হয়ে যাচ্ছে ‘সম্পদ’। আপনার জমি আপনার মোট সম্পদের সাথে যুক্ত হয়ে সরকার খাজনা বসিয়ে দেবে।
আর ঐ খাজনা আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধও করতে হবে। আবার মুদ্রার উল্টোপিঠে, ঐ জমি বর্গা দিয়ে তা আপনি ‘সম্পদ’ -এ পরিণত করতে পারবেন।
পরিশেষ
সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই ধরণের বিষয় লক্ষ্য করা যায়। দায় বেড়ে গেলে সে সম্পর্ক জানালা দিয়ে একদিন ঠিকই পালিয়ে যেতে বাধ্য। আর যদি ঐ একই সম্পর্ক সম্পদে পরিণত হয় তাহলে বন্ধন আরো অটুট হতে বাধ্য। তাই ব্যক্তি হিসেবেও নিজের অজান্তেই তো আমরা কারো দায় হয়ে যাচ্ছি না? মন্তব্যে জানাবেন।
আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন। ধন্যবাদ।