অনূর্ধ্ব ১৭ দলের নারী ফুটবলারদের উপর হামলা

অনূর্ধ্ব ১৭ দলের নারী ফুটবলারের ওপর হামলা। ঘটনাটি ঘটে খুলনার বাটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা গ্রামে। বিভাগীয় পর্যায়ের তার নারী ফুটবলের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন কর্মসূচি।

অগাস্ট 9, 2023 - 10:00
অগাস্ট 9, 2023 - 00:30
 0
অনূর্ধ্ব ১৭ দলের নারী ফুটবলারদের উপর হামলা
অনূর্ধ্ব ১৭ দলের নারী ফুটবলারদের উপর হামলা ছবি: সংগৃহীত

নারী ফুটবলারদের উপর অতর্কিত হামলা মূলত এমন ঘটনা ঘটেছে খুলনার বাটিয়াঘাটায়। এই হামলার প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ নারী সংগঠনগুলোর প্রতিবাদী মানববন্ধন সংগঠিত হয়েছে। তাদের প্রধান বক্তব্য ছিল ফুটবল খেলার প্রয়োজনের কারণে পড়া পোশাকের জন্য কটুক্তি ও নারী খেলোয়ারদের উপর এমন হামলা সমাজে বিদ্যমান নারী বিদ্বেষী মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটিয়েছে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই এই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন সেখানে উপস্থিত থাকা মানববন্ধনকারীরা।”


গত ২৯ জুলাই খুলনার বাটিয়াঘাটায় তেতুলতলা গ্রামের চার নারী ফুটবলারদের উপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার খুলনা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজন করা হয় মানববন্ধনের আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন সেখানে উপস্থিত বক্তারা। এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন নারী মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি


সে মানববন্ধনে বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে সেখানে উপস্থিত রত সকল বক্তারা তাদের বক্তব্য পেশ করেন এবং এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, দা হাঙ্গার প্রজেক্ট, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারী মুক্ত সংসদ, অ্যাকশন এইড, নারী ঐক্য পরিষদ সাহা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীগণ। এই মানববন্ধনের সভাপতি তো করেছিলেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফউজিয়া মোসলেম


মূলত খুলনা অনূর্ধ্ব ১৭ দলের একজন খেলোয়ার সাদিয়া নাসরিন যার বয়স ১৭ বছর। সাদিয়া নাসরিনের এলাকার এক নারী যার নাম নুপুর খাতুন তিনি সাদিয়া নাসরিনের ফুটবল খেলারত অবস্থায় ছবি তুলে তার পরিবারকে দেখায় এবং বিভিন্ন রকম আপত্তিকর কথা বলে। এর প্রতিবাদ করার জন্য সাদিয়া ও তার তিন সতীর্থ হাজেরা খাতুন যার বয়স ১৯ বছর, মঙ্গলি বাবুচি যার বয়স ১৯ বছর এবং জুঁই মণ্ডল যার বয়স ১৭ বছর তারা মূলত এই হামলার শিকার হন।


এই মানব বন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে আর তা না হলে এর প্রভাব ভবিষ্যতের পড়তে পারে বিশেষ করে নারীদের খেলাধুলায় অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ওপরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে সেখানকার বক্তাদের ধারণা। সেখানকার বক্তারা আরো বলেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নারি খেলোয়ারদের উপর হামলার ঘটনার বিচার যদি নিশ্চিত করা যেত তাহলে এরকম হামলার ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। তারা বলেন নারী খেলোয়ারদের প্রতি এমন হামলা যেন না হয় সেজন্য নারী বিদ্বেষী শক্তিকে প্রতিহত এবং প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”


বিশিষ্টজনদের বক্তব্য

সেখানে সভাপতিত্ব হিসেবে বক্তৃতা রাখেন ফওজিয়া মোসলেম তিনি বলেন বাংলাদেশের নারীরা হাজারো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলাধুলা করে জাতীয় পর্যায়ে আসে। আর এই নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু এত বড় প্রাপ্তি তারা এনে দিলেও নারী ক্রীড়াবিদদের বেড়ে ওঠার সঠিক পরিবেশ এখনো নিশ্চিত করা হচ্ছে না। বলতো লিঙ্গ বিভাগের কারণে নারীরা বারবার নির্যাতিত, হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে তিনি বলেন। তিনি আরো বলেন এ সকল বিষয়গুলো আসলেই এক ধরনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।”


এছাড়া ওই মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। এছাড়া এই মানববন্ধনে বক্তব্য দেন দা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর প্রতিনিধি দিলীপ সরকার, অ্যাকশন এইডের নুরুন্নাহার, নারী ঐক্য পরিষদের সাহানা ফেরদৌস, কর্মজীবী নারীর জোবাইদা উর্মি প্রমুখ।


সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার মহিলা ফুটবল নারী দলের এশিয়া জয়। এরকম একটা বড় পাওয়া থাকলেও দেশে নারী ফুটবলারদের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তেমন একটি ভালো পর্যায়ে আসতে নানা রকম চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়।


বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবার এটিকে কোনভাবে মেনে নেয় না যদিও আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে অভিভাবক অনেক সচেতন হয়েছে এবং মানুষের কথায় তেমন কিছু মনে না করে মেয়েদের কর্মমুখী জীবনের কথা ভেবে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করছে পরিবার। কিন্তু শুধু কি পরিবার উদ্বুদ্ধ করলে একজন নারী সমাজে সঠিকভাবে তার বিস্তৃতি তুলে ধরতে পারবে? অবশ্যই না। কারণ নারীদের বেড়ে ওঠা বা সফলতা অর্জন নির্ভর করে শুধু পরিবারের উপরে নয় পুরো সমাজের উপর। 


কিন্তু সমাজ যদি একজন নারীর চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন নারীর কোনভাবেই সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে খুলনার বাটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা গ্রামে৷ সেখানে অনূর্ধ্ব ১৭ দলের চার ফুটবলারের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে।


যা আসলে মানবাধিকার বিরোধী একটি কার্য হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে। দেশে নারী পুরুষ সমান অধিকার দেওয়া হয়ে থাকলেও মূলত এমন অধিকার প্রতিষ্ঠা কথাটা সার্থক ভুল সম্পাদিত হয় তা মূলত দেখার বিষয়। এমন হামলার নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনা তীব্র নিন্দা জানাই এবং হামলাকারীদের অতি দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য আহ্বান জানাই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এমন ঘটনার দেখে খেয়াল রেখে হামলাকারীদের খুব দ্রুত সাতক্ষীরা আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া। তাদের যদি শাস্তি না দেওয়া হয় ভবিষ্যতে হয়তো এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে তবে এটি শাস্তি যদি দেওয়া হয় তবে নারীরা এমন ঘটনা থেকে বাঁচতে পারে এবং তারা তাদের নির্দিষ্ট সফলতা অর্জন করতে পারে বলে আশা করছেন সবাই।” তবে সাধারণ জনগণ সবাই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেটারই আশা করেন।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ