বিআরটিসি এর বাস ক্রয় মূল্য কোটি টাকা, এখন মূল্য লাখ টাকা

কোটি টাকার বাসের বর্তমান বাজার মূল্য লাখ টাকা। বিআরটিসি কোটি টাকা খরচ করে বাস নিয়ে আসলেও বর্তমানে এ সকল বাসের অবস্থা শোচনীয়। এ ব্যাপারে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন।

অগাস্ট 13, 2023 - 14:00
অগাস্ট 17, 2023 - 02:07
 0
বিআরটিসি এর বাস ক্রয় মূল্য কোটি টাকা, এখন মূল্য লাখ টাকা
বিআরটিসি এর বাস ক্রয় মূল্য কোটি টাকা, এখন মূল্য লাখ টাকা

বিআরটিসি যে সকল বাসগুলো মূলত রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ কেড়েছিল এবং সুনাম অর্জন করেছিল সুইডিশ ভলভো বাস গুলো। মূলত ১৯৯৯ সালে এ সকল বাস বাংলাদেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে এগুলো দেশে নিয়ে আসা হলেও মুলত রাস্তায় চলা শুরু করেছিল ২০০২ সাল থেকে। এ সময় সুইডেন থেকে সর্বমোট পঞ্চাশটির মতো বাস নিয়ে আসা হয়েছিল এবং এই বাসগুলো আনার জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় বাংলাদেশি টাকায় ৬০ কোটি টাকা।


কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এগুলো বাসগুলো দেখলে মনে হবে না এগুলো এত টাকার বাস সব বাসগুলো স্থির হয়ে পড়ে আছে। এক একটি বাস প্রায় আট বছর যাবৎ চলেনি পড়ে আছে এমনই ভাবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বলা হয় মূলত স্পেয়ার পার্টস এর দুষ্প্রাপ্রতার দরুন নাকি এ সকল বাসের এমন অবস্থা। এর পাশাপাশি পার্টসগুলোর দামও ছিল অনেক বেশি। এই বাসের গিয়ার বক্স এর দাম ছিল ১২ লাখ টাকা আর প্রতিটি টিউবের মূল্য ছিল ৩০ হাজার টাকা করে। এখানে নির্দিষ্ট করে বলা উচিত বাসগুলো ১৬ চাকার ছিল।
 


দেশের রাস্তার ইতিহাস
 

ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকে পূর্ববঙ্গে চলাচলের জন্য বেশিরভাগ সময় জল পথ বেছে নেওয়া হতো। বলতে গেলে জল পথেই ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের চলাচলের প্রধান মাধ্যম। ১৯৪৭ সালে পুরো পূর্ব বাংলা মিলে মাত্র ৬০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ছিল আজ এই রাস্তাটাও ছিল মূলত অনেক সরু। এবং সেই সময় পূর্ব বাংলায় রেলপথ ছিল ২৮০০ কিলোমিটার যা ছিল মূলত ব্রিটিশ ভারতীয় রেল ব্যবস্থার অধীনে। ১৯৬০ সালে এ রেল ব্যবস্থার নাম পরিবর্তন করা হয় ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলের নাম পরিবর্তন করে নতুন করে রাখা হয় পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে। ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইস্ট পাকিস্তান রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন(ইপিআরটিসি)। এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সড়ক মহাসড়ক দপ্তর।


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলার সড়ক ব্যবস্থার করুন পরিস্থিতি হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই দেশের পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে ২০ টি ট্রাক এবং ২০টি বাস নিয়ে আসার অনুমতি দেন। সে সময় ইপিআরটিসির নাম বদলে নতুন করে নাম রাখা হয় বিআরটিসি। ১৯৯১ সালের সড়ক নেটওয়ার্কের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৭১ হাজার কিলোমিটার। ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর উপর নির্মাণ করা হয় সবচেয়ে বড় সেতু বঙ্গবন্ধু সেতু। এর সাথে নির্মাণ করার পর বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা এক নতুন অগ্রগতি পায়।


বিআরটিসি সম্পর্কে কিছু তথ্য

বিআরটিসির নিজস্ব ওয়েবসাইট তথ্য থেকে জানা গেছে বিআরটিসি'র সর্বমোট বাস ডিপো ২১ টি এর পাশাপাশি বিআরটিসি ট্রাক ডিপো রয়েছে দুইটি। বিআরটিসি'র সর্বমোট বাসের সংখ্যা ১৮৩০ টি। এর মধ্যে পুরাতন বাসের সংখ্যায় ১২৩০ টি এবং নতুন বাস রয়েছে ৬০০টি। এর মধ্যে চলমান বাস রয়েছে ১১৮২ টি। অপরদিকে নতুন করে নিবন্ধনের অপেক্ষায় রয়েছে ৩২৫টি বাস। বিয়ন্ড ইকোনোমিকাল রিপেয়ার বাসের সংখ্যা ২৪৮ টি। অপরদিকে হালকা এবং ভারী মেরামতের জন্য রয়েছে আরো ৭৫ টি বাস।


শুধু ঢাকা মহানগরীতে বিআরটিসির চলমান বাসের সংখ্যা রয়েছে ৭২৩টি। এর মধ্যে ৪৬৩ টি বাস গণপরিবহন হিসেবে, ২৩৫ টি বাস স্টাফ বাস হিসেবে, আটটি বাস স্কুল বাস হিসেবে এবং ৩ টি বাস মহিলা বাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি লিজ দেওয়া হয়েছে ৯৬ টি বাস। ঢাকা মহানগরের ভিতরে চলমান রুটের সংখ্যা ২৮ টি এবং ঢাকার বাইরে চলমান রুটের সংখ্যা ১৩৪ টি। 


বিআরটিসিতে অভিজ্ঞতার ৩৮ বছর

বিআরটিসিড়ি সকল বাসের সম্পর্কে জানতে সেখানে কর্মরত ৩৮ বছর ধরে থাকা একজন চালকের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়। তার নাম কাজি বকুল হোসেন। তিনি জানানো ১৯৮৬ সাল নাগাদ বিআরটিসিতে বাসের সংখ্যা ছিল ১০০০ টি যার মধ্যে ভলভো ছিল ২০ টি। তখন মানুষদের একমাত্র আস্থার নাম ছিল বিআরটিসি। হাতেগোনা কয়েকটি প্রাইভেট কোম্পানি থাকলেও তাদের সার্ভিস ছিল খুব একটা ভালো না তাই সবাই বিআরটিসি এর উপরে ভরসা করত।


সেই সময় ভাড়া ছিল চার আনা বা আট আনা। আর সে সময় কোন লিজ দেওয়া হতো না বিআরটিসি নিজেই সব বাস পরিচালনা করতো। তিনি জানেন বিআরটিসি ডাবল ডেকার গুলোর মধ্যে সুইডেস ভলভো বাস গুলো সবচেয়ে ভালো নাম অর্জন করেছিল। ১৯৯৯ সালে বাসগুলো দেশে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ২০০২ সাল থেকে এই বাসগুলো রাস্তায় চলাচল শুরু হয়। এ বাসগুলো উদ্বোধন করেছিল তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। ১২০ সিটের এই গাড়িগুলো থেকে প্রতিদিন আয় হতো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এটা মূলত আট বছরের বেশি সময় আর সম্ভবপর হয়নি। আট বছর পর গাড়ির পার্টস অকেজো হওয়ার নাম করে গাড়িগুলোকে বসিয়ে রাখা হয়।
 


২০০০ সালের ও আগের সময় যে সময় সুইডেন থেকে ৫০ টি ভলভো বাস নিয়ে আসা হয়েছিল আর যার বাজার মূল্য ছিল ৬০ কোটি টাকা। সেই সময়ের এত মূল্যবান বাসগুলো যত্ন এবং অবহেলার ফলে আজ খুচরা দামে বিক্রি হতে চলেছে সকল বাস। যার পুরো বডি বিক্রি করলে হয়তো মিলবে লাখ টাকার মত। কোটি টাকার বাস এখন এসে দাঁড়িয়েছে লাখ টাকায় যা মূলত যত এবং অবহেলার কারণে ঘটেছে বলা যেতে পারে। এ সকল বাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বি আর টি সির উচিত ভবিষ্যতে যেন এমন কাজ আর না হয়।


এজন্য বিআরটিসি আওতায় থাকা সকল বাস ট্রাক সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা উচিত যাতে করে বিআরটিসি আর এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন সামনের দিনগুলোতে না হয়।
 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ