নব রস কে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্য তার সাহিত্যিক মাত্রা অব্যাহত রেখেছে

এই নবরস পরস্পরের সঙ্গে একীভূত ও সম্পর্কিত থাকে। কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক সবেতেই এই নবরস ব্যবহারিক প্রয়োগ লক্ষণীয়। জীবন সব সময় নির্দিষ্ট গতিপথ ধরে চলে না তেমনই সাহিত্য যেন এক উৎসমুখ খুলে ঝরণাধারার মতো নির্গত হয়- গানের কলিতে কবিতার আবৃত্তিতে, রঙ তুলির পরশে ও লোককথার সরলতায়। সমস্ত নিহিত এই নবরস এর সমাহারে।

মে 30, 2023 - 15:00
মে 31, 2023 - 16:54
 0
নব রস কে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্য তার সাহিত্যিক মাত্রা অব্যাহত রেখেছে
নব রস কে সামনে রেখে বাংলা সাহিত্য তার সাহিত্যিক মাত্রা অব্যাহত রেখেছে

নবরস : শৃঙ্গার

এই রসের বর্ন শ্যাম। রস এর ভাগ দুটি, সম্ভোগ ও বিপ্রলম্ভো। বিপ্রলম্ভো- মিলনের আগে বা পরে রস - বিরহ।


আমি: কি ! আমার কি কোনও নাম নেই! সর্বনামের এই বাড়াবাড়ি প্রয়োগ কার ভালো লাগে!


কোকিলের নিজের ঘর থাকেনা।
অথচ তারা সব কিছু জেনে যায় ঠিক সেই সময়ে কুহুতান দেয়। আপন কেউ নাই থাকুক, সে চায় সবার কেউ থাকুক। সবার স্বপ্নপূরণ হোক।


স্মরণজিৎ চক্রবর্তী
(স্বপ্নের মতো)


নবরস : হাস্য

হাসি কোনও খোলামকুচি নয় যেথেচ্ছা ছড়ানো যায়। সুবীরের কিছুতেই বিয়ে হয় না। মেয়েদের সে বানচাল করে দেয়। তাদের হাস্যমুখে কেন দাঁত সর্বসময়! চোখ দিয়ে তো কত কিছু বলায় যায়। আর ঠোঁট দিয়েও তার কাছে মেয়েদের যতো ছবি এসেছে সব দাঁত বের করে হাসছে যেখানে মেয়ে দেখতে গেছে তারা চা দিতে এসে এতো হাসে কেন! স্মিত, শান্ত মুখ কি আজকাল বিরল?


প্রচেত গুপ্ত (একটি নিরীহ কলার খোসা)


নবরস ৩: করুণ

সাদা কেবিন, সবুজ পর্দা, সাদা বিছানা। সব আগন্তুক আপনজন। শোনে সে, কই, কোথায়, আরে দেয়নি এখনও কেবিনে কেন কনে সাজাচ্ছে?


না বর বলো। পুং তো শুনলাম।’


সহায়ক ডঃ বলেন, ব্যাটা মনে হয় হারকিউলিস! ও তাই মায়ের অতো কষ্ট!


জ্ঞান ফিরে সে লজ্জারুণ মুখে বলে, কই সে?


আপনার তো প্রি-ম্যাচির বেবী অক্সিজেন টেন্টে রাখতে হয়েছে।’ ও ব্লু বেবী।’ ব্লু মানে অক্সিজেন।


চার বছরের বাচ্চার ট্রাইসিকেল কেনা
, কি অসম্ভব! ও তো পারবে না দুপা এক সঙ্গে প্যাডল করতে! ও তো লিম্বস কো অর্ডিনেশন। শৌচালয় হতে সব কাজে সমন্বয় লাগবে প্রতিটি অঙ্গের।


বাণী বসু (এটমিক)


নবরস : দ্রোহ

১৯৭০ এ সেই সীতা মাঝিপাড়ার তরুণী মেয়ে কাজে কর্মে ঝলমলানো শ্যাম রঙ, দিনে রান্নবান্না করা কাজের মেয়ে রাতে হয়ে যেতো সঙ্গিনী। এক খেলনাপাতির সংসাররাতের আদরের সীতা গর্ভপাতের সময় এনাশথেশিয়া ভিন্ন জবাইয়ের পশুর মতো যন্ত্রনা ঠেকাতে তার মুখে গজ তুলো ঠেসে দেওয়া হয়েছিলো।


অনিতা অগ্নিহোত্রী (দ্রোহ)


নবরস ৫: বীর

চোখ নামিয়ে তাকালো, ডাঁই করে রাখা দশ জন ছেলের লাশ। হিসহিসে একটু হাসলো নরেশ বিপ্লব করবে শুয়োরের বাচ্চারা! বিপ্লব তোদের ইয়েতে করাচ্ছি।’


কি রে চল শালা!


না রে আমার যাওয়া হবে না সবাই কে ফেলে একা একা আমি চলে যাবো! শশিভুষণ লাইব্রেরীর ঐ বইটা আমি দুদুবার পড়েছি থ্রি কমরেডস। এক বন্ধুর জন্য নিজের শেষটুকু দিয়ে লড়ে গেলো সেই একজন!


সুপ্রিয় চৌধুরী (ওই বইটা)


নবরস ৬: ভয়ানক

নিউরো বায়োলজি ল্যাব থেকে পালিয়ে, এই চোখ ধাঁধানো বাথরুমের পেছনের জায়গা পেয়েছি, সেই দিন থেকেই অলক্তিকার সান্নিধ্য আমায় স্বর্গীয় অনুভুতি দিয়েছে। ও যখন নগ্ন হতো, ওর গলার শেষ থেকে শুরু হওয়া মালভুমি, নাভির উপত্যকা, সুঠাম গাছ সম পা দুটি, সরস্বতীর হাতের বীণার মতো অনাবৃত হাত দুটি, মোহর ভরে রাখা ঘটের মতো ওর নিতম্ব আমার চারটে ডানা আর তিন জোড়া পা (এক আড়শোলা) আমাকে মানুষ করে তুলতো।


বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (এক প্রেমিকের জবান বন্দি)


নবরস ৭: বীভৎস

রাধারাণী হাউসে অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান। বুফে ক্যান্টিনে একটা চিৎকার উঠলো।

- রাসকেল এটা কি? আরও সবাই অবাক হয়ে দেখে  সাদা ধব ধবে প্লেটে জুঁই ফুলের মতো ভাতের ওপর দই কাতলায় উঁকি মারছে এক রক্তে ভেজা স্যানিটারি ন্যাপকিন। আর একজনের ও চিৎকার আমার প্লেটেও মাসিক ন্যাকড়া।


ইন্দ্রনীল সান্যাল (অন্নপ্রাশনের ভাত)


নবরস ৮: অদ্ভুদ

পাঁচ দিন আগে এক অদ্ভুদ ঘটনা ঘটেছে। আমার গলায় একটা ইলিশ মাছের কাঁটা ফুটেছে। মাছের কাঁটা ফোটা কোন অদ্ভুদ ঘটনা নয়। অহরহ ঘটছে। ঘটনা অদ্ভুদ হলো আমি ইলিশ মাছ কেন কোন মাছ খাই না। সে দিন নয়, তার আগের দিন, তারও আগের দিন, কোনও দিন আমি ইলিশ মাছ খাইনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডঃ আমার গলা থেকে ইলিশ মাছের কাঁটা সন্না দিয়ে বের করেছেন।


অভিষেক ভট্টাচার্য (সেতু)


নবরস ৯: শান্ত

শান্তি কোথায় আছে বলা যাবে না। শান্তি হাওয়ায় ভাসে। না, মানে আমি পিস এর কথা বলছি। পিস? কোন পিস? দিব্যি আছি তো। বরং বৌ যদি আহলাদে হাসি মুখে কথা বলে, ছেলে বড় বাধ্য হয়ে কথা শোনে, মেয়ে যদি সন্ধ্যের আগে বাড়ী ফেরে - সে দিন আমার পেটে বায়ু উদগার হয় রাতে অনিদ্রা!


শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
(শান্তি ও অশান্তি)

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

শ্রীমতী স্মৃতি দত্ত অ্যাডভোকেট, লেখিকা, বঙ্গীয় সাহিত্যের সদস্য, কীবোর্ড প্লেয়ার, অ্যামওয়ে ব্যবসার মালিক। আমার লেখা সর্বশেষ বইয়ের নাম, ‘কেমেষ্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল ও টি.ভি শো’ এবং ‘লেনিন সাহেবের সাথে দেখা’ বইটি Flipkart -এ নেবার জন্য ক্লিক করুন: https://www.flipkart.com/lenin-saheber-sathe-dekha/p/itmc9bfae4c39392