এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠায় তার ভুমিকা ছিল অসাধারণ। তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ।

জুল 11, 2023 - 19:00
জুল 11, 2023 - 23:23
 0
এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী
এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী | Image Source: BBC

শুরুতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং এরপর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুক্তিযুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এমন এক অসম্ভবি স্বাধীনতা নিয়ে আসার জন্যে এবং বাঙ্গালীদের তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করিয়ে দেওয়ার জন্যে তাকে কৃতীত্বের স্বরুপ জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত করা হয়।


এছাড়াও তাকে প্রাচীন বাঙ্গালী সভ্যতার আধুনিক স্থপতি ও স্বর্বকালের সর্ব
শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার কন্যা শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী



বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান ও শিক্ষাজীবন

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া নামক গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম ছিল শেখ লুৎফর রহমান তিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন এবং মাতার নাম ছিল সায়েরা খাতুন।


চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম
, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী। তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের, ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন


১৯২৯ সালে শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল আর সেটা সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন



বাংলা ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর 
ভূমিকা

২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ সালে তৎকালিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন গণপরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই বক্তব্যের পর থেকেই পুর্ব বাংলার জনগ প্রতিবাদী মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায় যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার মাঝে থেকে নেতৃত্ব দেন। এবং মুসলিম লীগের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।


এরই ধারাবাহিকতায় ২ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মেলন ঘটে। সেখানে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেই আলোচনা সভায় শেখ মুজিবুর রহমান একটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১১ মার্চ ঢাকাই ধর্মঘট পালন করা হয়


সেই ধর্মঘটে শেখ মুজিবুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের তোপের মুখে ১৫ মার্চ গ্রেফতার করা সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। ১৯ মার্চ আরো একটি আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই আন্দোলনের
মূল কারন হিসেবে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের অধিকার আদায়।


এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর তাকে আবারো আটক করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়



ছয় দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর
ভূমিকা

১৯৬৪ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর এক বৈঠকে প্রস্তাব করা হয় আওয়ামী লীগের মহাসচিব হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং সভাপতি হিসেবে মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশকে নির্বাচিত করার প্রস্তাব করা হয়


তৎকা
লীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান সবদিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বৈষম্য তৈরী করে যার বিরুদ্ধে প্রধান ঢালস্বরূপ কাজ করে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন তুলে ধরেন তিনি ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই ঐ ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন


১৯৬৬ সালের পহেলা মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হোন। এরপর তিনি ছয়দফার পক্ষে সারাদেশ ব্যাপী প্রচারণা চালায়। এই সময় তিনি কয়েকবার কারাবন্দি হোন



আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা

১৯৬৮ সালের প্রথমে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আরো ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত এখানে পাকিস্তান বিভাগে মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আখ্যা দেওয়া হয়


আর এই বিচার কার্য সম্পাদন করা হয় সেই বছরই ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে



১৯৬৯ এর গণঅভ্যুথ্যানে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা

১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি পেশ করা হয়। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৬ দফা দাবিও উল্লেখ করা হয়েছিল। এরপর সেই পরিষদের সিদ্ধান্তেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এর দাবিতে গণআন্দোলন ও প্রতিবাদ করা হয়।


এই গণআন্দোলনই মুলত ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের পরেই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ এই মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই বছরেরই ২৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে
বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়



১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা

সকল আন্দোলনের পর ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে৷ কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো শেখ মুজিবুর রহমান এর এই জয় মেনে নিতে পারেনা এবং এই দলের বিরোধিতা শুরু করে।


সেই সময় পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তা এবং ইসলামী দলগুলোর বড় বড় নেতারা শেখ মুজিবের এই জয়ের বিরোধিতা করেছিল এবং তার প্রধানমন্ত্রীত্ব লাভের বিরুদ্ধে ছিলেন।



বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা

নির্বাচনে জয়লাভের পরেও ইয়াহিয়া খান সংসদ ডাকতে অহেতুক দেরি করছিল। তখন পুর্ব পাকিস্তানের সবাই বুঝতে পেরেছিল যে আওয়ামী লীগেকে পশ্চিম পাকিস্তান কোনভাবেই ক্ষমতা পেতে দিবেনা তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন এবং অসহযোগ আনদোলনের জন্য বাঙালিদের একত্রিত করেন।


অপরদিকে ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন এবং আওয়ামী লীগেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করা হয়।


নির্মমভাবে বাঙালিদের উপর চালানো হয় হত্যাযজ্ঞ। এর পরের দিন ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধিনতা ঘোষনা করেন। সেইদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের ফয়াসালাবাদের একটি জেলে করা নিরাপত্তার মাধ্যমে রাখা হয়৷ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আর ৩০ লাখ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পাই আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে



নতুন রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা

যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠন ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার৷ প্রায় এক কোটি শরনার্থীদের পুনরায় দেশে ফেরত নিয়ে এসে দেশ গঠন অনেক কষ্টসাধ্য হলেও সেই অসাধ্যকে সাধন করে নতুন দেশ অনেক বুদ্ধিমত্তার সহিত গঠন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


তিনি যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ভ্রমণ করেন এবং দেশের উন্নয়নের জন্য সেইসকল দেশের সহযোগিতা কামনা করেন৷ এর পাশাপাশি তিনি মিত্র দেশ ভারতের সাথে ২৫ বছর মেয়াদি মিত্রতা চুক্তি সাক্ষর করেন


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ৪ টি
মূলনীতি প্রনয়ন করেন নীতিগুলো হলো, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে দেশে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয় ১৯৭৩ সালে আবারো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সেখানেও আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয় হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন দল গঠন করেন



বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যা

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট যেটি মুলত কালরাত্রি নামে পরিচিত সেই রাতেই একদল বিপথগামী সেনাসদস্যরা ধানমন্ডির বাসভবনে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়৷ এই ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয় পাশাপাশি তার বাড়ির ব্যাক্তিগত কর্মচারিদেরও হত্যা করা হয়


শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মেয়ে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় শুধু তারা বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হয়৷ ব্যাক্তিগত জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বুদ্ধিবৃত্তিক
, দুঃসাহসি রাজনৈতিক চিন্তাধারার অধিকারী ছিলেন।


তিনি ছোট বেলা থেকেই রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার অধিকারী ছিলেন। অপরদিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তাইতো পশ্চিম পাকিস্তানের করা শোষণ নিপিড়ন এর বিরুদ্ধে বাঙালিদের রুখে দাঁড়াতে সর্বাত্তক সহায়তা চালিয়েছিলেন তিনি। প্রের
ণা যুগিয়ে বাঙালিদের স্বাধিনতা এনে দিয়েছেন তিনি। তিনি সারাবিশ্বে এক সংগ্রামি নেতা হিসেবে আজও পরিচিত।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ