মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী, পারিবারিক পরিচিতি, মুক্তিযুদ্ধে অবদান এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর উল্লেখযোগ্য অবদান সম্পর্কে জানুন।

জুন 15, 2023 - 23:00
জুন 15, 2023 - 12:07
 0
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জীবনী | Image Source: BBC

পুরো নাম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে মজলুম জননেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১৯৫৪ সালে যেই যুক্তফ্রন্ট গঠন হয়েছিল সেখানে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বশীল অবস্থায় ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।



মাওলানা ভাসানীর জীবনী

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ই ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী এবং মাতা বেগম শারাফত আলী। মাওলানা ভাসানীরা চার ভাইবোন ছিলেন। সবার ছোট সন্তান ছিলেন মাওলানা ভাসানী।


ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর তিনি কিছুদিন চাচা ইব্রাহিম এর কাছে থাকেন। সেই সময় ইরাকের একজন আলেম ও ধর্মপ্রচারক নাসিরুদ্দিন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার আশ্রয়ে কিছুদিন থাকেন।


এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন আগে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি একটি মাদ্রাসায় মোদাররেসের দায়িত্ব পালন করেন এর পাশাপাশি তিনি জমিদারের ছেলে মেয়েদের পড়াতেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সাথে তিনি আসামে যান


১৯০৩ সালে তিনি আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পরেন। ১৯০৭ সালে তিনি ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য দেওবন্দ যান। সেখানে ২ বছর পড়াশোনা করার পর আবার ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাষন শুনে তিনি অনুপ্রাণিত হয়।


মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক জীবন

১৯১৯ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগদান করেন এবং অসহযোগ আনদোলনে অংশ নিয়ে তিনি ১০ মাস কারাভোগ করেন ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করার পর ভাসানী সেই দল গঠনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর আলেমা খাতুনকে নিয়ে তিনি আসামে চলে যান


আসামে তিনি প্রথম কৃষক - প্রজা আন্দোলনের শুরু করেন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকেই তার নামের শেষে ভাসানী যুক্ত করা হয়। ১৯৩১-১৯৩২-১৯৩৩ এই তিন বছর যথা কাগমারী- সিরাজগঞ্জ- গাইবান্ধায় কৃষক সম্মেলন করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগদান করেন


এইসময় আসামে লাইন প্রথা চালু ছিল তিনি এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন৷ ১৯৪০ সালে শের- এ বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের সাথে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৫-৪৬ সালে আসামে বাঙাল খেদাও আন্দোলন শুরু হলে বাঙ্গালিদের বাঁচাতে তিনি নিজেই আসামে ঘুরে বেড়ান। তিনি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নেওয়াই তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৮ সালে মুক্তির পর টাঙ্গাইলের সন্তোষে ফিরে আসেন।


এরপর ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবরণ করেন। এছাড়া ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সহায়তা করাই তিনি আবারো কারাবরণ করেন। বন্দী অবস্থাতেও তিনি ১৯৬২ সালে বন্যাদুর্গতদের সাহায্য ও পাটের ন্যায্যমুল্য পাওয়ার দাবিতে তিনি অনসন ধর্মঘট পালন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা ভাসানী মুখ্য ভুমিকা পালন করেন।


আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তির দাবি করেন তিনি। ঐ বছরের ৮ই মার্চ তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে দেখা করেন। সেখানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র নিয়ে তারা একমত হোন। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭০ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে একটি জনসভায় স্বাধীন পুর্ব পাকিস্তান দাবী উত্থাপন করেন


মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর অবদান

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আনদোলনের প্রতি সমর্থন জানান। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ভারতে যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হোন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মাওলানা ভাসানী তার নিজের বাসস্থান সন্তোষে অবস্থান করছিলেন।


সেই রাতেই তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দৃষ্টি এরিয়ে সিরাজগঞ্জে চলে যানপাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা তার সন্তোষের বাড়ি পুরিয়ে দেয়। মোজাফফর আহমদ ন্যাপ নেতা সাইফুল ইসলাম ও মাওলানা ভাসানী নৌকায় করে ভারতের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন এবং সফলভাবে ভারতে পৌঁছান। ১৬ই এপ্রিল তারা আসামের ফুলবাড়ী নামক স্থানে যান।


পরে তারা হলদীগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। এরপর তাদের প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পার্ক স্ট্রিটের কোহিনূর প্যালেসে তাদের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। ২৩ এপ্রিল তিনি একটি বিবৃতি প্রদান করেন যা ভারতীয়, বাংলা ও ইংরেজী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। এছাড়াও তিনি চিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সহায়তা চান।


মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মাওলানা ভাসানীর অবদান

১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি মাওলানা ভাসানী দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক কথা প্রকাশ করেন। ১৯৭৩ সালে খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ১৫-২২ মে মাওলানা ভাসানী অনশন ধর্মঘট পালন করেন। ১৬ মে ১৯৭৬ সালে তিনি ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের দাবিতে ঐতিহাসিক লং মার্চ এর নেতৃত্ব দেন। একই বছর তিনি খোদাই খিদমতগার নামে আরেকটি নতুন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।


মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এমনই এক রাজনৈতিক নেতার নাম যিনি বাঙ্গালীর ইতিহাসের পাতায় যুগ যুগ ধরে চিরজীবি হয়ে থাকবেন। সেই দেশ ভাগের পর থেকে শুরু করে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ১৯৭০ এর নির্বাচন ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সহ যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনেও তিনি মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন।


এছাড়াও দেশের জন্যে দেশের মানুষের জন্যে তিনি অনেক কয়বার কারাগারে কারাভোগ করেছেনব্যক্তিজীবনে তিনি অত্যন্ত সামাজিক, জনদরদী, আত্নত্যাগী দেশপ্রেমিক, একজন ব্যাক্তিত্ব ছিলেনযার ত্যাগ বাঙ্গালী জাতি সারাজীবন মনে রাখবে

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ