৭ মাসে ১০ বার ডুবল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম নগরীতে তীব্র জলাবদ্ধতা। গত ৭ মাসে অন্তত ১০ বার ডুবে গেছে নগরী। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা বলে দাবী স্থানীয়দের৷ ৩ দিনে নগরীর প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এই ব্যাপারে জানতে পোস্ট টি পড়ুন।

অগাস্ট 7, 2023 - 22:00
অগাস্ট 7, 2023 - 23:13
 0
৭ মাসে ১০ বার ডুবল চট্টগ্রাম
৭ মাসে ১০ বার ডুবল চট্টগ্রাম

গেল সাত মাসে চট্টগ্রাম নগরী মোট ১০ ভাগ ডুবে গেছে। বর্ষাকালে এমন ভোগান্তিতে নগরীর সকল মানুষের যেন সমস্যার কোন সীমা নেই। পূর্ণিমার আশা অনেক জোয়ার ও ভারী বর্ষণ গতকাল রোজ রোববার তৃতীয়বারের মতো দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম নগরী ডুবে গেছে। নগরের অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা জলাবদ্ধতাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং এলাকার অলিগলি সবকিছু দিনের ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকায় এখানকার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ অসহ্যকর কষ্টের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া ক্ষুদ্র, মাঝারি ব্যবসায়ীরা অনেকটাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানায়।


চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা 
 

চলতি বছরের গত সাত মাসের মধ্যে সর্বমোট প্রায় ১০ বার চট্টগ্রাম নগরী পানিতে ডুবে যায়। এর আগের বছর এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেইবার সর্বমোট চট্টগ্রাম নগরী ডুবে গিয়েছিল ১২ বার। ভুক্তভোগীরা জানাই গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবছর তারা সর্বোচ্চ জলবদ্ধতার স্বীকার হচ্ছে এবং এর দুর্ভোগ সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে


দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এ জলাবদ্ধতায় তেমন কোন বড় ধরনের প্রভাব না ফেললে অলি গলিতে অবস্থানরত দোকান পাট, কাঁচা বাজার ও বিপণিকেন্দ্র গুলো পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। শুধু দোকান ডুবে যাওয়া নয় পাঠায় যে সকল মালামাল ছিল সে সকল মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা তবে গত তিন দিনে কত টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে তার নির্দিষ্ট কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের ধারণা মতে এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মতো।


জলাবদ্ধতায় ক্ষতির পরিমাণ 

ক্ষতির পরিবার কেমন হয় এ নিয়ে ২০২১ সালে একটি গবেষণা চালানো হয় গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধুমাত্র খাতুনগঞ্জ এবং খাতুনগঞ্জের আশেপাশের এলাকাতে জলাবদ্ধতার কারণে চেষ্টা দুর্ভোগে এক বছরে প্রায় ৪৬৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বর্তমান সময়ে এরকম ক্ষতির সম্মুখীন না হলেও বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি ও জোয়ারের ফলে খাতুনগঞ্জ এর ব্যবসায়ীরা বেশ চিন্তিত রয়েছেন এই ব্যাপার নিয়ে।


এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগ 

জোয়ারের পানি ও ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা যেন আর না হয় সেজন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি ব্যয়বহুল উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( সিডিএ) দুটি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি ও চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি এউ সর্বমোট চারটি প্রকল্প প্রায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গত ছয় বছরে এ প্রকল্প সর্ব মোট খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। এত টাকায় এই ৬ বছরে খরচ করা হলেও এর সুফল এখনো পাওয়া যায়নি বলে ধারণা স্থানীয়দের।


বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতি 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক গত শনিবার বিকাল তিনটার পর থেকে গত রবিবার বিকাল তিনটা এই ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে ২৩১ মিলিমিটার। জোয়ারের উচ্চতা বাড়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষণ ছিল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মোঃ জাহিরুল ইসলাম জানান চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল। তিনি আরও জানান মূলত লঘু চাপের কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং এই বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন যাবত বহাল থাকবে বলে জানান তিনি।”


জলাবদ্ধতায় এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী এলাকা ও বাদ পড়েনি। মেয়রের এই এলাকায় স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা গত তিন দিন ধরে পানির নিচে ডুবেছিল এখানকার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সবটি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে বলেন সাধারণ সুপার মার্কেটে নিচতলায় ব্যবসায়িক প্রায় একশটির মতো দোকান রয়েছে। গত তিনদিনের জলাবদ্ধতায় এ মার্কেটের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি ধারণা করেন।”


এর আগের বছরগুলোতে নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার সেখানে মূলত তেমন জ্বালাবো তো তার সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এবারের এই ভারী বৃষ্টিপাতের সেখানেও দলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এবং সেখানকারী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধারণা মতে সেই এলাকাতে ক্ষতির পরিমান দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২ কোটি টাকা।


একটি শাড়ির দোকানদার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন অতি ক্ষোভ এর সহিত বলেন এখানকার সকল নালা নর্দমা বন্ধ হয়ে আছে পানি যাওয়ার রাস্তা পাচ্ছে না। বৃষ্টির এই পানি দোকানের ভিতরে ঢুকে প্রায় এক লক্ষ টাকার মত শাড়ি নষ্ট হয়েছে বলে তিনি জানান।”


খাতুনগঞ্জে ক্ষতি কম হলেও শঙ্কা বেশি 

গত বছর অক্টোবর মাসের শেষের দিকে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের অনেক গুদাম ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছিল। এতে করে অনেক টাকার হয়ে গেছিল ব্যবসায়ীদের এতে করে প্রচুর পরিমান লোকসান গুনতে হয়েছিল


তবে এবারের ভারী বছরের খাতুনগঞ্জে প্রথম অবস্থায় পানি উঠলেও পরে সেটি নেমে যায় এবং সেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়নি। মূলত ভারী বৃষ্টিপাত বা জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে পড়ে হামিদুল্লাহ মিয়া বাজারের কাঁচা পণ্যের আর
ৎ।


এই বাজারের মার্কেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান এবার যখন জোয়ার হয়েছিল তখন চাক্তাই খালের সুইচ গেট মূলত বন্ধ করা ছিল। আর যার দরুন জোয়ারে পানি খাতামগঞ্জে কোনভাবেই ঢুকতে পারেনি ভারী বর্ষণে খাতুনগঞ্জে পানি উঠলে মূলত বেশিক্ষণ সেখানে পানি স্থায়ী হয়নি ফলে সেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতী ও হয়নি বলে তিনি জানান। এরপরেও পুরোপুরি ভয় কাটেনি বলে তিনি জানান। কারণ গত বছর এরকম পরিস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণ তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বলে জানান তিনি।”


স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সকলের দাবি এখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কোন ক্ষতি হওয়ার আগেই যেন তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। কর্তৃপক্ষের নিকট সবারই এমন দাবি।
 

 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ