বিদ্যুৎ খাতের অপরিকল্পনায় নিয়মিত দাম বাড়ছে
পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। তাতে বিদ্যমান জ্বালানি বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক এক প্রভাব পড়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের জ্বালানী খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন নিত্যপণ্য জিনিসের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি ব্যয় বাড়ার সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে।
কারণ দেশের অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় জ্বালানী তেলের মাধ্যমে। গত ১ বছরে দেশে সবচেয়ে বেশি বাড় বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুতের দাম। গত ৬ মে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ার পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর দেয়া প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়েছে। তাতে বিদ্যমান জ্বালানি বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর জন্য ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে।
মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ আসতে পারে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়। গণশুনানিতে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
তবে দেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য কোনো ভালো পরিকল্পনা থাকলে এমন বিপদে পড়তে হতো না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এই খাতের মন্দ অবস্থার জন্য পরিকল্পনাহীনতাকে প্রধানভাবে দায়ী করেছেন তারা।
ক্যাপাসিটি চার্জ বর্জন
ক্যাপাসিটি চার্জ নামক যে নতুন মডেল তৈরি করা হয়েছে লুটতরাজের জন্য সেটি বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ যতটুকু সময় বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উৎপাদনে থাকতে পারবে না। কিন্তু মাসের পর মাস চুক্তি অনুসারে উৎপাদনে অক্ষম, অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার মতো পদ্ধতি রাখা যাবে না। এসব কিছু বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ খাতের জন্য নতুন সুপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১২ বছরে পিডিবি লোকসান গুনেছে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বিপরীতে চলমান ও আগামী এই ২ অর্থবছরেই পিডিবি লোকসান গুনবে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।
মোট কথা পিডিবি বছরে যে পরিমাণ লোকসান গুনত, এখন ২ মাসেই তার কাছাকাছি পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। ডলারের মাধ্যমে এই পেমেন্ট সিস্টেমে আরো বেশি ঝামেলা আছে। এটি আমাদের দেশের জন্য কোনো টেশসই মডেল নয়। এটি বাতিল করতে হবে।
অচল ফ্যাক্টরি বন্ধ
প্রাকৃতিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
এছাড়া পাওয়ার গ্রিড আধুনিকায়ন এবং এনএলডিসি আধুনিকায়নের ওপরে যেসব কনসাল্টিং প্রজেক্ট আছে, সেসব কনসাল্টিং পার্টির মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যেমন: গ্রিড আধুনিকায়নের জন্য পিজিসি আইএল এবং এনএলডিসি আধুনিকায়ন। এগুলোকে যোগ্য কোম্পানি বলা যাবে না। ধীরগতির সঞ্চালন নেটওয়ার্ক প্রকল্পের কাজও ব্যাহত করছে বিদ্যুৎ বিতরণকে।
দেশের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির বদলে গণপরিবহণ বাড়াতে হবে, গণপরিবহনের টিকিট সস্তা করতে হবে, দূরপাল্লার বাসের বদলে ট্রেন বাড়তে হবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে শহরে-নগরে ট্রাম, রেল বা মেট্রো পরিকল্পনা প্রয়োজন। শিল্পে ও ব্যবসায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহ ও শুল্কায়ন সুবিধা প্রয়োজন।
এসি, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন, ফ্রিজ, লিফট ইত্যাদিতে এনার্জি সেভিং যন্ত্র ব্যবহারে শুল্ক প্রণোদনা দিতে হবে, কম বিদ্যুৎ ব্যবহারে কম বিল, বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারে বেশি বিলের পরিবেশ বান্ধব পলিসি সাজাতে হবে। মোটের ওপর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জাতীয় মহাপরিকল্পনার প্রয়োজন।
সর্বোপুরি দেশের সবাইকে এই খাতের ব্যাপারে সচেতন হয়ে সকল সমস্যা দূর করতে হবে। এতে দেশ ও জাতির মঙ্গল হবে। আগামীর পৃথিবীর জন্য দেশের বিদ্যুৎ খাত আরো বেশি উন্নত হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






