ফ্রান্সিস বেকন: অভিজ্ঞতাবাদের জনক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার অগ্রদূত
ফ্রান্সিস বেকনকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়। তিনি দর্শনিক চিন্তাধারার কিছু মৌলিক তত্ব প্রবর্তন করেন যেগুলোকে বেকনিয়ান মেথডও বলা হয়ে থাকে।

তিনি একাধারে একজন ইংরেজ দার্শনিক, আইনজ্ঞ, কূটনৈতিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক। পেশাগত জীবন আইনজীবী হিসেবে শুরু করলেও তিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের প্রবক্তা এবং জ্ঞানান্ধতা ও গোঁড়ামি বিরোধী হিসেবে সুখ্যাত হোন। তিনি হলেন স্যার ফ্রান্সিস বেকন। ফ্রান্সিস বেকনকে অভিজ্ঞতাবাদের জনক বলা হয়। তিনি দর্শনিক চিন্তাধারার কিছু মৌলিক তত্ব প্রবর্তন করেন যেগুলোকে বেকনিয়ান মেথডও বলা হয়ে থাকে।
পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের ওপর তিনি জোর দেন। কোনো জিনিসের উৎস অনুসন্ধানে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াগুলো প্রবর্তন করেন তিনিই। ধর্মীয় চিন্তা ও সাহিত্যে তিনি জোর দিয়েছেন নীতিদর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিকতার ওপর। আইনের ক্ষেত্রে তিনি বড় ধরনের সংস্কারের চেষ্টা করেছেন।
ফ্রান্সিস বেকন ১৫৬১ সালের ২২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা স্যার নিকোলাস বেকন এবং মা অ্যান বেকন এর সন্তান তিনি। স্যার নিকোলাস বেকন ইংল্যান্ডের রাজসভায় উচ্চপদস্থ সভাসদ ছিলেন। ফ্রান্সিস বেকন দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে শৈশবে ঘরেই পড়ালেখা করেন।
১৫৭৩ সালে তিনি কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। ডক্টর জন হুইটগিফটের অভিভাবকত্বে সেখানে তার বড় ভাই এন্থোনি বেকনের সাথে তিন বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন। বেকনের শিক্ষা ল্যাটিন এবং মধ্যযুগীয় পন্থায় ছিল। পটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়তেও তিনি পড়াশোনা করেন। তবে কেমব্রিজে পড়াকালে তার সঙ্গে রানী এলিজাবেথের সাক্ষাৎ ঘটে। রানী তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে লর্ড উপাধির যোগ্য বলে মন্তব্য করেন।
তিনি পরবর্তী সময়ে আইন নিয়ে পড়েন। ১৫৮২ সালে ফ্রান্সিস বেকন আইনবিদ্যায় শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ১৫৮৪ সালে পার্লামেন্টে আসন পান। রানী এলিজাবেথের আমলে আইনজীবী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। এছাড়া পার্লামেন্ট সদস্যও ছিলেন তিনি।
পার্লামেন্টে প্রবেশের অল্প দিনের মধ্যে তিনি রানীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সভাসদ আর্ল অব এসেক্সের সহযোগী ও বন্ধু হয়ে ওঠেন। ১৬০১ সালে আর্ল রানীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং বিচারে আর্লের প্রাণদণ্ড হয়। কিন্তু বেকন ছিলেন তার বন্ধুর বিপক্ষে এবং এই শাস্তি হওয়ার পক্ষে কাজ করেছিলেন তিনি। হয়তো এটা তার জন্য এক ধরনের বড় বিশ্বাসঘাতকতার চেয়েও বড় ধরনের অসম্মানজনক বলা যায়।
এ ঘটনার খারাপ প্রভাব বেকনের ওপর চিরকাল ছিল ও থাকবে। তিনি বন্ধুত্বের থেকে রাজ আনুগত্যকে সম্ভবত বেশি বড় মনে করেছিলেন। এজন্য তিনি তার সময়ে ও তার পরবর্তী সময়ে বহু প্রশংসা পাশাপাশি বেশ নিন্দিতও হয়েছেন। তবে তিনি গৌরবের শিখরে উপনীত হন রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পরই। রাজা জেমসের রাজত্বকালে তিনি লর্ড চ্যান্সেলরের পদে নিযুক্ত হন।
ইংরেজি ভাষার প্রতি খুব বেশি শ্রদ্ধাবোধ ছিল না ফ্রান্সিস বেকনের। কারণ এসব আধুনিক ভাষা এক সময় উপযুক্ত গ্রন্থের অভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করতেন। তাই ল্যাটিনই ছিল তার একমাত্র প্রিয় ভাষা। কিন্তু তিনি ইংরেজি ভাষায় যে অবদান রেখেছেন তা নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়। তাকে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ও সম্ভাবনার প্রবক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠদের সঙ্গে তার তুলনা করা হয়।
‘এসেইজ’ বেকনের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। তিনি তার প্রবন্ধগুলো নিখুঁত অলঙ্কারে সুশোভিত করেছেন। তার রচিত প্রবন্ধ সংগ্রহের সংস্করণ করা হয় তিনবার। ১৫৯৭ সালে প্রথমটিতে লেখা ছিল মাত্র ১০টি। ১৬১২ সালে ৩৮টি রচনা নিয়ে দ্বিতীয়বার সংস্করণ করা হয়। আর তৃতীয় ও শেষ সংস্করণে ৫৮টি লেখা ছিল। এছাড়া তার ‘অ্যাডভ্যান্সমেন্ট অব লার্নিং’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৬০৫ সালে। এবং ১৬২১ সালে তার মহতী গ্রন্থ ‘নোভাম অর্গানাম’ পরীক্ষামূলক প্রাকৃতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এক নতুন পদ্ধতির সূচনা করেন।
তিনি ১৬০৩ সালে নাইট উপাধি পান। ব্যারন হন ১৬১৮ সালে। সেন্ট আলবানের ভাইকাউন্ট উপাধি পান ১৬২১ সালে। এরই সঙ্গে তিনি সলসিটর জেনারেল, অ্যাটর্নি জেনারেল, লর্ড কিপার এবং পরে লর্ড চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদ ছিল এই লর্ড চ্যান্সেলর পদটি। ফ্রান্সিস বেকন জীবনের শেষ দিনগুলোতে শুধু গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি বিখ্যাত ‘এসেইজ’ গ্রন্থটি এ সময়ই রচনা করেছিলেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৬২৬ সালের ৯ এপ্রিল লন্ডনের বাইরে হেইগেট এলাকার অরুনডেল ম্যানশনে মৃত্যুবরণ করেন। যেহেতু মৃত্যুর সময় তার কোন উত্তরশুরী ছিল না, তাই পরবর্তীকালে তার উপাধিগুলো বিলীন হয়ে যায়।
ফ্রান্সিস বেকনের বিখ্যাত পাঁচটি উক্তি
আজ এই পর্যন্তই। আবারও নতুন কোনো বিষয় নিয়ে খুব শীঘ্রই হাজির হবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং দ্য ব্যাকস্পেস জার্নালের সঙ্গেই থাকুন। আর আপনারাও চাইলে আপনাদের নিজস্ব লেখাগুলো ব্যাকস্পেস জার্নালের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। ধন্যবাদ
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






