‘হেলেন কেলার’, এক শতাব্দী পরেও আমাদের অনুপ্রেরণা
হেলেন কেলার ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুসাকুম্বিয়া, আলবামায় জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সময় তিনি সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে তিনি মুক, বধির ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হন। ১ জুন, ১৯৬৮ সালে হেলেন কেলারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তিনি আমেরিকার ইস্টন শহরে ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

হেলেন কেলার (Helen Adams Keller) একজন সমাজসেবক, বক্তা, লেখক, রাজনৈতিক কর্মী। তার পুরো নাম ‘হেলেন অ্যাডামস কেলার’। হেলেন কেলার কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার নাম। চমৎকার এই মানুষটি ঠিক সাধারণ মানুষের মত ছিলেন না। খুব কম বয়সে তিনি দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হন।
সাধারণ মানুষের চোখে এগুলো প্রতিবন্ধকতা মনে হলেও তিনি এই প্রতিবন্ধকতাকে শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং কোটি কোটি মানুষকে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে উৎসাহিত করেন।
হেলেন কেলারের জন্ম ও মৃত্যু
হেলেন কেলারের পিতামাতা
হেলেন কেলার ও তার প্রতিবন্ধকতা
তিনি তাকে পরীক্ষা করেন এবং বলেন, “যদিও হেলেন তার দৃষ্টি, শ্রবণ ও বাক শক্তি কখনো ফিরে পাবেনা কিন্তু তাকে যদি ভালোভাবে প্রশীক্ষণ দেয়া হয় হেলেন অনেক সফল হবে জীবনে।”
হেলেন কেলারের শিক্ষাজীবন
এই প্রতিষ্ঠানটি অন্ধদের শিক্ষা দিত। সেখানে হেলেনের পরিচয় হয় ওই ইন্সটিটিউট এর শিক্ষক অ্যানি সুলিভ্যান ম্যানসফিল্ড এর সাথে। এই শিক্ষকও ছোটবেলায় চোখে কম দেখতেন। তার হাত ধরেই হেলেনের জীবন আলোকিত হয়। এই শিক্ষক হেলেনের মধ্যে স্পর্শশক্তির বিকাশের চেষ্টা করেন। তিনি তাকে বাড়িতে গিয়ে পড়াতেন।
যদিও প্রথম দিকে শুধু স্পর্শের মাধ্যমে কোনো জিনিসের নাম ও ব্যবহারিক অর্থ বোঝাতে সে অসমর্থ হয় কিন্তু তার ছাত্রীর হাত সে কখনো ছাড়েনি। কয়েক বছরের মধ্যে হেলেন ইংরেজি, ল্যাটিন, গ্রিক, ফরাসি, জার্মান ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। পরে সে ব্রেইল টাইপ রাইটারে লিখতে শেখে।
তাঁর শিক্ষক তাকে প্রথম “Water” শব্দটি লিখতে শেখান। তিন বার হাতে ধরে শেখানোর পর চার বারের বেলা শব্দটি নিজেই তিনি লিখতে পারেন। ১০-১১ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে সে কথা বলতে শেখে। ১৯০৪ সালে তিনি প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন মাত্র ২৪ বছর বয়সে। এরপরে তিনি এম এ এবং পি এইচ ডি ডিগ্রী লাভ করেন।
বক্তা হিসেবে হেলেন কেলার
যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের সেবায় হেলেন কেলার
সাহিত্যে হেলেন কেলার এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা
হেলেন বাক, দৃষ্টি, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তিনি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সেই চলচ্চিত্রে তার নিজের চরিত্রে তিনি নিজেই অভিনয় করেন। তিনি কবিতাও লিখতেন অবসরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ১৯৩০ সালে নিউইয়র্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে হেলেনের সাক্ষাৎ হয়।
রবীন্দ্রনাথকে তিনি স্পর্শের মাধ্যমে অনুধাবন করেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে, “আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী…” এই গানটি নিজের গলায় গেয়ে শোনান। তিনি যেহেতু শুনতে, দেখতে পেতেন না তাই তিনি রবীন্দ্রনাথ এর ঠোঁট স্পর্শ করে সেই গান অনুভব করেন।
হেলেনের রাজনৈতিক জীবন
তার বই ‘Out of the Dark’ এ তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। তিনি শান্তিবাদী মানুষ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার জড়িত থাকার বিরুদ্ধে ছিলেন।
হেলেনের প্রাপ্ত পুরষ্কার
শেষকথা
চোখে দেখতে পান নি, কানে শুনতে পাননি, মুখে বলতে পারেন নি, কিন্তু হার মানেন নি। তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি তাকে যুদ্ধে জয়ী করেছে। তার প্রতিবন্ধকতাকে ডিঙিয়ে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাক, শ্রবণ আর দৃষ্টি শক্তি ছিল না বলেই হয়ত তিনি স্পর্শ শক্তিকে প্রবলভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন।
সেই সময়ে যেটাকে অসম্ভব বলে মনে হত সেটাকে সম্ভব করেছেন। তার হাত ধরেই আজ হাজারো দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্বাবলম্বী হচ্ছে। তিনি সারাজীবন কোটি কোটি মানুষের মনে অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবেন।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






