ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নিন

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা জীবনে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি। ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আরেকটি মাধ্যম হলো ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহার। ক্রেডিট কার্ড হলো এক ধরনের পকেট আকারের কার্ড যাতে চিপ যুক্ত থাকে। এ কার্ডের মাধ্যমে আপনি কেনাকাটা, পেমেন্ট, বিল পরিশোধ ইত্যাদি নানা রকমের কাজ করতে পারবেন।

জুল 25, 2023 - 10:00
জুল 25, 2023 - 15:52
 0
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নিন
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো জেনে নিন | Image by Freepik

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা জীবনে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি। ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আরেকটি মাধ্যম হলো ক্রেডিট কার্ড এর ব্যবহার। ক্রেডিট কার্ড হলো এক ধরনের পকেট আকারের কার্ড যাতে চিপ যুক্ত থাকে। এ কার্ডের মাধ্যমে আপনি কেনাকাটা, পেমেন্ট, বিল পরিশোধ ইত্যাদি নানা রকমের কাজ করতে পারবেন।



ক্রেডিট কার্ড (
Credit Card)

ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে আপনি ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে পারবেন এবং ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এই টাকা নির্দিষ্ট সময় পর আপনাকে পরিশোধ করতে হবে যা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে। এই ধার করা অ্যামাউন্ট কি মূলত ক্রেডিট লিমিট বলা হয়। আপনার মেশিন ইনকামের উপর ভিত্তি করে ব্যাংক আপনাকে এই ক্রেডিটটি দিবে


যেমন- আপনার যদি মাসিক ইনকাম ৫০ হাজার টাকা হয় তাহলে
, ব্যাংক আপনাকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার করার লিমিট দিবে। তবে ক্রেডিট লিমিট এদিক-ওদিক হতে পারে, কারণ এটা আপনার ব্যাংকের পলিসির উপর নির্ভর করবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য এলিজেবল কিনা! কারণ এই লিমিটটি প্রতিমাসে আপনি যে স্যালারি পান, তার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয়


ক্রেডিট কার্ডটি পাওয়ার পর আপনি যেকোনো জায়গায় পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন যেখানে ক্রেডিট কার্ড একসেপ্ট করা হয়। আপনি সারা মাস ধরে যত জায়গায় যত পেমেন্ট করবেন (অবশ্যই লিমিটের মধ্যে) এটি মাস শেষে সেইসব অ্যামাউন্ট একটি বিল হিসাবে ইস্যু করা হবে ব্যাংক থেকে


তারপরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার এই বিলটি ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। এই সময়টি ব্যাংকের বিভিন্ন রকম পলিসির মধ্যে পড়তে পারে। তবে এই সময়টি সাধারণত ১০-১৫ দিন হয়ে থাকে। এই মাসিক বিল পরিশোধ করলেই আপনাকে আবার পরের মাসের ক্রেডিট লিমিট দেওয়া হবে।


যেমন
আপনার মাসিক বেতন যদি হয় ৫০ হাজার টাকা। আপনি এখান থেকে যদি ৪০ হাজার টাকা খরচ করেন তাহলে আপনার এই ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের পর আবার পরের মাসে ক্রেডিট লিমিট ৫০ হাজার টাকা পেয়ে যাবেন


এ ক্রেডিট কার্ডটি দিয়ে আপনি অনলাইন অথবা অফলাইন দুই জায়গাতেই কাজ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি আপনার ক্রেডিট লিমিট দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার একটি ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট থাকতে হবে


পাসপোর্ট না থাকলে আপনার যত লক্ষ লক্ষ টাকায় ক্রেডিট থাকুক না কেন আপনি কোন রকম লেনদেন
, কেনাকাটা করতে পারবেন না। আপনার এই ক্রেডিট কার্ডটি বাংলাদেশের বাইরে কোন কাজে আসবে না



ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সমূহ (
Benefits of Credit Card)

আর্থিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। বড় ধরনের কেনাকাটা অথবা লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড বেশ কাজের জিনিস। তবে অনেকের মনের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে ভীতি কাজ করে! তারা ভাবে ক্রেডিট কার্ড দিন শেষে টাকা ব্যয়ের ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায় কিনা! ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা সমূহ আলোচনা করা হলো:


১. দ্রুত লেনদেন:
 
যদি আপনি অনেক দামি কোন জিনিস কিনতে চান অথচ আপনার কাছে কোন টাকা না থাকে অথবা কারো থেকে ধার নিতে পারছেন না সেক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক সুবিধা জনক হয়। সেই পণ্যটি কিনে আপনি কয়েক মাসে ধার পরিশোধ করতে পারেন


২. পুরষ্কার পয়েন্ট: 
মূল্য ফেরত পাওয়া পয়েন্ট, বিমানে বিনামূল্যে ভ্রমণ বা আরো পুরুস্কার পয়েন্ট হচ্ছে ক্রেডিট কার্ডের অন্যতম কিছু বৈশিষ্ট। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে এসব পয়েন্ট পাওয়া যায়


৩. ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধিকরন:
আপনার লেনদেনের ইতিহাস যদি সুখকর না হয়ে থাকে তবে, ক্রেডিট স্কোর বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বেশি বেশি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করা। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত লেনদেন করলে আপনার ক্রেডিট কার্ডের স্কোর দ্রুত থাকবে


৪. নিরাপত্তা: 
বিভিন্ন রকমের প্রতারণা,চুরি এসব থেকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক সেফ। ক্রেডিট কার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও যদি আপনার ক্রেডিট কার্ড চুরি হয় এবং সেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে যদি কোন কেনাকাটা করা হয় সে দায়ভার আপনার উপর পড়বে না।


৫. সুরক্ষা:
ধরা হয়, ডেবিট কার্ড ও চেক ব্যবহারের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি সুরক্ষিত। আপনার ক্রেডিট কার্ডের ভুল ত্রুটি, কোনরকম জালিয়াতি হলে কিংবা চুরি হলে আপনি আপনার টাকা ফেরত পাবেন


৬. ঋণের সুবিধা: কিছু কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঋণে সুদের হার অনেক বেশি থাকে। এক্ষেত্রে একটি সুবিধা হল অতি দ্রুত পরিশোধ করেতে হবে। তাহলে ঋণের বোঝা থাকে না


ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা সমূহ (Disadvantages of Credit Card)


১. বেশি খরচক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হয় খরচের বিষয়টি। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটার চ্যানেল হল কম খরচ করা। কিন্তু দিনশেষে দেখা যায় খরচ বেশি হয়ে যায়। মনে করা হয় টাকা পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু এদিকে মাথায় থাকেনা বাড়তি ঋণও গুনতে হবে


২. বার্ষিক ফি:
 
বেশিরভাগ ক্রেডিট করার ক্ষেত্রে বছরে একটি ফি প্রদান করতে হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ফি থাকে। যেমন- মানি ট্রান্সফার ফি, দেরিতে পরিশোধের ফি, বিভিন্ন চাঁদা, ওভারড্রাফ্ট ফি ইত্যাদি


৩. ঋণের ফাঁদ: 
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার করতে গেলে মূলত আপনাকে ঋণ নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। এটা অনেক সময় ঋণের ফাঁদ হয়ে যায়। আপনি এখন কেনাকাটা করছেন কিন্তু পরে আপনাকে এই টাকা পরিশোধ করতেই হবে। মূলত একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। আর আপনি সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে এই ঋণ দিন দিন বাড়তে থাকবে


৪. উচ্চ মূল্যের লেনদেন ফি: 
ডেবিট কার্ডে যেমন কেনাকাটা করলে কোন বাড়তি ফি দিতে হয় না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। এক্ষেত্রে উচ্চ মূল্যের ফি প্রদান করতে হয়


৫. ক্রেডিট স্কোর সংক্রান্ত জটিলতা: 
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে আপনার ক্রেডিট স্কোরের উপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া আপনি যদি ক্রেডিটেড দেনাপাওনা পরিষদ না করে লেনদেন বন্ধ করে দেন এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে


৬. লুকায়ীত ব্যয়:
 
কেবলমাত্র সুদের হার পরিশোধ করলেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে একমাত্র ব্যয় হয়ে যায় এটি বললে ভুল হবে। সময় মত মাসিক মূল্য পরিশোধ না করলে আপনাকে বিভিন্ন জরিমানা গুনতে হতে পারে। এডিটের যে অর্থ ব্যয়ের সীমা থাকে এই সীমা অতিক্রম করলেও একটি নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তোলার মাধ্যমে আপনাকে নির্দিষ্ট হারে ফি প্রদান করতে হবে


৭. সঠিক কার্ড চেনা: 
আপনার সুবিধামতো সঠিক কাজটি বেছে নেওয়া জরুরী। একটি ভুল কার্ডের ব্যবহারের মাধ্যমে দিনের পর দিন শুধু ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। তবে এটা বুঝতে গেলে আপনার সম্পূর্ণ নীতিমালা পড়তে হবে এবং আপনার জন্য কোনটা বেস্ট সেটি বেছে নিতে হবে


সত্যি বলতে গেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে সুবিধা ও অসুবিধা দুইরকমই বিষয় ঘটে থাকে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে আপনি ক্রেডিট কার্ড কিভাবে ব্যবহার করবেন। আপনার খরচের অভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় জিনিস এর কেনাকাটা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভরশীল। তাই সঠিক প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হবে। যাতে আপনার বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: রেজওয়ান ছাত্র, প্রাণিবিজ্ঞান, স্নাতক (২য় বর্ষ), গভ. শাহ সুলতান কলেজ, বগুড়া