ডেবিট কার্ড নাকি ক্রেডিট কার্ড! কোনটা ব্যবহার করবেন? জেনে নিন

যুগ পাল্টাচ্ছে। ক্যাশবিহীন লেনদেনের এই যুগে ডেবিট এবং ক্রেডিট এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই কার্ডগুলো ব্যবহার করে আপনি যেকোনো দোকানে কেনাকাটা করে একটি সোয়াইপ করার মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারেন। আপনার কাছে টাকা না থাকলে যে কোন সময় আপনি নগদ টাকা বা ক্যাশ হাতে পেতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড দেখতে একই মনে হলেও এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

জুল 22, 2023 - 22:00
জুল 22, 2023 - 23:50
 0
ডেবিট কার্ড নাকি ক্রেডিট কার্ড! কোনটা ব্যবহার করবেন? জেনে নিন
ডেবিট কার্ড নাকি ক্রেডিট কার্ড! কোনটা ব্যবহার করবেন? জেনে নিন | Image by rawpixel.com on Freepik

যুগ পাল্টাচ্ছে, ক্যাশবিহীন লেনদেনের এই যুগে ডেবিট এবং ক্রেডিট এর ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই কার্ডগুলো ব্যবহার করে আপনি যেকোনো দোকানে কেনাকাটা করে একটি সোয়াইপ করার মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারেন।


আপনার কাছে টাকা না থাকলে যে কোন সময় আপনি নগদ টাকা বা ক্যাশ হাতে পেতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড দেখতে একই মনে হলেও এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড এর মধ্যে পার্থক্যগুলো।



ডেবিট ও ক্রেডিট

ডেবিট এবং ক্রেডিট হিসাববিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত দুটি শব্দ। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, কোন একটি ব্যাংকের গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা যদি গ্রাহক তুলে নেন বা খরচ করেন, তাহলে সেটাকে ব্যাংক ডেবিট হিসেবে গণ্য করবে। অপরদিকে ব্যাংক থেকে যদি কোন গ্রাহক ঋণ নেন তাহলে সেটি ওই গ্রাহকের নামে ব্যাংকের কাগজপত্রে ক্রেডিট হিসেবে তালিকাভুক্ত হবে


ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহক তার একাউন্টে বিদ্যমান থাকা অর্থ খরচ করেন। অপরদিকে ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে গ্রাহক তার ক্রেডিট লাইন অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন/খরচ করেন যা পড়ে তার পরিশোধ করতে হয়



ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ডের পরিচয়

ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড দুটি দেখতে একই রকম। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য কিছু রয়েছে। এই পার্থক্যটি মূলত হলো এর ব্যবহার এবং নীতিমালাতে। এগুলো সাধারণত ছোট পকেট সাইজের কার্ড হয়ে থাকে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে, বাংলাদেশের সব ব্যাংকগুলির জন্য চিপ এবং পিন ভিত্তিক কার্ড প্রদান করা বাধ্যতামূলক করা হয়।


ভিতরে একধরনের সুরক্ষা চিপযুক্ত থাকে এমন কার্ডগুলিকে ইএমভি কার্ডও বলা হয়। এই কার্ডগুলি মূলত এনক্রিপটেড এবং পূর্বের কালো স্ট্রিপযুক্ত কার্ডের তুলনায় অধিক সুরক্ষিত এবং সুবিধাদায়ক
একটি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সামনের অংশে ১৬ টি সংখ্যার গোপন কার্ড নাম্বার থাকে। সেখানে থাকে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, কার্ডটি ইসুয়ার/প্রতিষ্ঠান এর লোগো (যেমন: ভিসা, সিটি ব্যাংক, মাস্টারকার্ড ইত্যাদি)।


কার্ডের ওপর পাশটিতে সিভিভি (আরেকটি গোপনীয় নম্বর) থাকে। এবং কার্ড-ধারকের স্বাক্ষর
, কাস্টমার সার্ভিসের ফোন নাম্বার দেয়া থাকে। কিন্তু অ্যামেরিকান এক্সপ্রেস তাদের ক্রেডিট কার্ডের সিভিভি নম্বর কার্ডের সামনের দিকে দিয়ে থাকে



ডেবিট কার্ড কি
?

সেভিংস (সঞ্চয়ী) অ্যাকাউন্ট কিংবা কারেন্ট (চলতি) অ্যাকাউন্ট এর গ্রাহকদের ব্যাংক থেকে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। আবার কর্পোরেট ব্যাক্তিদেরও ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়। এসব কার্ড গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টের সাথে যুক্ত থাকে


যদি আপনার ব্যাংক একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকে আপনি ইচ্ছে করলে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। আপনি চাইলে অনলাইন
, অফলাইন ইত্যাদি মাধ্যম থেকে কেনাকাটা করতে পারবেন এবং আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করতে পারবেন।


বিভিন্ন রকমের সেবা পেতে অথবা বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনতে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনার একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়


ক্রেডিট কার্ড কি?

ক্রেডিট কার্ডও ঠিক ডেবিট কার্ডের মত দেখতে একটি ছোট পকেট আকারের কার্ড। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক এবং বিভিন্ন সংস্থা চিপ ভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে থাকে। ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার, ক্রেডিট কার্ডধারীর নাম, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ক্রেডিট কার্ডের সম্মুখে দেওয়া থাকে।


কার্ড এর অপর পার্শে সিভিভি
, ক্রেডিট কার্ডধারীর স্বাক্ষর এবং কাস্টমার কেয়ারের বিবরণ দেওয়া থাকে। ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে গ্রাহক তার ক্রেডিট লাইন অথবা ব্যাংক থেকে ঋণ নেন/খরচ করেন যা পড়ে তার পরিশোধ করতে হয়


ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য


কার্ড প্রদানকারী সংস্থা

ডেবিট কার্ড মূলত আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্ট কিংবা কারেন্ট অ্যাকাউন্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি মাধ্যম। এটি মুলত গ্রহকে ব্যাংক থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এখানে আপনার উল্লেখ্য একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অন্যদিকে, আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট না খুলেন তারপরেও ঐ ব্যাংক অথবা আর্থিক সেবাদাতা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন



অর্থের উৎস

ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে প্রাথমিক একটি পার্থক্য হলো এর ফান্ড বা অর্থের উৎস। আপনি যখন ডেবিট কার্ড দিয়ে লেনদেন করবেন সেক্ষেত্রে আপনার চলতি বা সঞ্চয়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যবহার হয়। আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ঐ পরিমাণ অর্থ তাৎক্ষণিক কেটে নেওয়া হয় আপনার কেনাকাটা বা লেনদেন করার মাধ্যমে


আর যখন আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন
, তখন সেই ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে আপনাকে অর্থ প্রদান করে থাকে। ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহারকারী গ্রাহককে পরবর্তী বিল দেয়ার তারিখের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সেই অর্থ ফেরত দিতে হয় বা পরিশোধ করতে হয়



ফান্ড ব্যাবহারের অনুমতি

একটি ডেবিট কার্ড আপনাকে কেবলমাত্র আপনার চলতি বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত থাকা অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। আপনার অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা থাকলে আপনি শুধুমাত্র সেই ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন, এর বেশি না


অপরদিকে
, ক্রেডিট কার্ডধারী গ্রাহক পূর্ব-অনুমোদিত ক্রেডিট সীমা পর্যন্ত ফান্ড ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত, একটি উচ্চ ক্রেডিট স্কোরযুক্ত অ্যাকাউন্ট কোনো ব্যাবহারকারীর থাকলে অথবা ব্যাংকের সাথে ব্যবহারকারীর যদি কর্পোরেট অ্যাকাউন্ট থাকে সেক্ষেত্রে তিনি একটি উচ্চ পরিমাণের অর্থ ব্যবহারের অনুমতি পেয়ে থাকেন



সুদের হার

ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে ফান্ড থেকে রিয়েল-টাইমে আকারে অর্থ স্থানান্তর করা হয়, কোনো প্রকার সুদ যুক্ত না করেই। তবে কোনো কোনো ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের একাউন্টে জমা থাকা টাকার হারের ওপর সুদ দিতে পারে যা মূল ব্যালেন্সে গিয়ে যোগ হয়।


অপরদিকে
, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে যদি কোনো গ্রাহক বিলম্ব হয় তাহলে তাকে সুদ প্রদান করতে হয়। তবে কোনো গ্রাহক অব্যবহৃত ক্রেডিট লিমিটের ওপর বাড়তি অর্থ পান না



অর্থ পরিশোধ

যেহেতু ডেবিট কার্ডে কোনো ঋণ হিসেবে অর্থ নেওয়ার দরকার পড়েনা, তাই বাড়তি কোনো অর্থ সুধ হিসেবে পরিশোধের প্রয়োজনও হয় না। তবে ক্রেডিট কার্ডধারীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের ব্যবহৃত টাকা না দেওয়া দিলে বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় সুদ আকারে


ফি ও চার্জ এর নিয়ম

আপনার ডেবিট কার্ড গতানুগতিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইলে,বা ব্যাবহার করা চালিয়ে যেতে চাইলে আপনাকে রেজিষ্ট্রেশন ফি এবং প্রসেসিং ফি সহ একটি বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি প্রদান করতে হবে।


অপরদিকে আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার জন্যও আপনাকে এ ধরনের একটি ফি প্রদান করতে হবে
, কিন্তু আপনাকে দেরীতে প্রদানের ফি আবার প্রিপেইমেন্ট জরিমানা এবং ফোরক্লোজার চার্জও দেওয়া লাগতে পারে। এটা পুরোপুরি ব্যাংক/ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল



মাস ভিত্তিক স্টেটমেন্ট

কোনো ডেবিট কার্ডের জন্য স্বাভাবিকভাবে কোনও মাসিক স্টেটমেন্ট দেয়া হয় না। আপনি চাইলেই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টের মাধ্যমে আপনার ডেবিট কার্ডের লেনদেন হিস্টোরি দেখতে পারবেন। অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে একটি মাসিক স্টেটমেন্ট প্রদান করা হয়। লেনদেনের পরিমাণ ক্রেডিটে সরবরাহ হয় তাই এটি অনেক প্রয়োজনীয়



সুবিধাসমূহ

সাধারণত ডেবিট কার্ডে উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগ-সুবিধা থাকেনা। কিন্তু অপরদিকে ক্রেডিট কার্ড নানা রকমের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ক্যাশ ব্যাক, পার্টনার প্রিভিলেজ, ডিসকাউন্ট এবং রিওয়ার্ড পয়েন্ট অর্জনের মত সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।


সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু ডেবিট কার্ডে অনেক সময় কিছু ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক অফার পাওয়া যায়
, যদিও ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় তা হিসাব করলে খুব বেশি হয় না।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: রেজওয়ান ছাত্র, প্রাণিবিজ্ঞান, স্নাতক (২য় বর্ষ), গভ. শাহ সুলতান কলেজ, বগুড়া