ডিজিটাল আইডি এবং ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে জানুন
প্রযুক্তির ছোঁয়াতে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর সবকিছুতে আসছে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন। বর্তমানে আমরা প্রযুক্তির এমন যুগে বাস করছি যে, চাইলে প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কিছু সম্ভব। এই সময়ে প্রতিটি রাষ্ট্র ও সকল নাগরিকদের সব ধরনের তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে করে করে নাগরিক সেবা দিতে বিভিন্ন ধরনের নতুন পদ্ধতির আওতায় তাদের নিয়ে আসতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নাগরিকদের জন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী ডিজিটাল আইডি কার্ড বা পরিচয়পত্র এবং বিদেশ গমনের জন্য ই-পাসপোর্ট।

গত দশকে এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেবার জন্য নাগরিকদের প্রদান করা হত এনালগ আইডি কার্ড। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সেবা ডিজিটাল হওয়ার ফলে নাগরকিদের প্রদান করা হচ্ছে ই-পাসপোর্ট ও ডিজিটাল আইডি কার্ড।
ডিজিটাল আইডি কার্ড কি?
এই কার্ডের মাধ্যমে বর্তমানে দেশের সকল নাগরিক বিভিন্ন সেবা ডিজিটালভাবে গ্রহণ করতে পারবেন। এই কার্ডের ভিতরে একটি নাগরিকের সকল ধরনের তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত থাকবে। নাগরিক তথ্যগুলো হলো - ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্মার্টকার্ডে থাকবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি। এছাড়াও এই কার্ডেও বিভিন্ন তথ্য খুব সহজে আপডেট করা যায়।
ই-পাসপোর্ট কি?
মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফি ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্যসহ মোট ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। এতে বর্তমানে এমআরপি বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টের বইও একই রকমের থাকবে।
বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সেবা
ফলে একটি দেশের নাগরিক অন্যদেশে ভ্রমণে বা ব্যবসার কাজে গেলে ওই দেশ কোন ধরনের সন্দেহ করলে তার সম্পর্কে সকল তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন খুব সহজে। ব্যাংকে এখনো যেমন গ্রাহকের স্বাক্ষর যাচাই করে কর্মকর্তারা টাকা প্রদান করেন।
কিন্তু এটিএম বুথে কোন ধরনের স্বাক্ষর যাচাই না করে মেশিনের মাধ্যমে গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে টাকা দেওয়া হয়। তেমন ই-পাসপোর্ট নিয়ে একটি দেশের নাগরিক বিমানবন্দরে গিয়ে ভিসা চেকিংয়ের লাইনে না দাড়িয়ে ইমিগ্রেশন গেট দিয়ে নিজের পাসপোর্ট ভিসা যাচাই করে দেশে প্রবেশ ও ত্যাগ করতে পারবেন।
এতে করে একজন নাগরিকের মূল্যবান অনেক সময়ের অপচয় রোধ হবে। এই পাসপোর্টধারীরা খুব সহজে ই-গেট ব্যবহার করে বিশ্বের সকল দেশে খুব সহজে নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ডিজিটাল আইডি সেবা
পৃথীবির অন্যান্য দেশের মত প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল সেবা দেশের নাগরিকদের কাছে পৌছে দেওয়ার লক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা ভাবে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মেয়াদে দেশের সকল নাগরিকদের এই কার্ড দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। যা বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এই কার্ড সকলের কাছে বিতরন করা সম্পন্ন হলে দেশের সকল সেবা ও কার্যক্রম ডিজিটালভাবে সম্পন করা যাবে। এতে অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করা সম্ভভ হবে। এই কার্ডের মাধ্যেমে একজন নাগরিক প্রায় দেশের ৩২টি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন খুব সহজে। যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ব্যাংক, কর, চিকিৎসা, শিক্ষা সব জায়গার বিল খুব সহজে নিজের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন।
যে কোন চাকরি ক্ষেত্রে খুব কাগজ-পত্র দেখিয়ে এই কার্ডেও মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত সকল তথ্য প্রদান করতে পারবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত সার্কভূক্ত দেশে যদি ভিসা তুলে দেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশের নাগরিক খুব সহজে নিজের পরিচয় পত্র যাচাই করিয়ে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।
সরকার বা কোন সংস্থা কোন ব্যক্তিকে নিজের সংগঠনে যুক্ত করার আগে খুব সহজে এই কার্ডের নম্বর নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্যগুলো যাচাই করে নিতে পারবেন। এই কার্ড জালিয়াতি করা প্রায় অসম্ভব।
কারণ এই কার্ডে ব্যক্তির সব আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি থাকে ফলে নাগরিকদের একজনের সেবা অন্যজন চুরি করতে পারবেনা। এছাড়াও অন্যদেশের কোন নাগরিক এসে খুব সহজে বাংলাদশের নাগরিক পরিচত্র পেতে পারবে না। যা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরিশেষ
বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর অন্যতম দুটি সেবা হলো ডিজিটাল আইডি (স্মার্ট কার্ড) এবং ই-পাসপোর্ট যার মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা বিশ্ব নাগরিকের মর্যাদা পান। খুব সহজে সারা বিশ্ব ঘুরতে পারেন। তাই এই দুই সেবা বাংলাদেশের জনগনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






