প্রেম সংস্করণ, কৈশোর থেকে যৌবন
লেকে আমরা প্রায়ই বাড়ী থেকে যেতাম, খুব কাছে ছিলো বাড়ীর। তাঁর কথা অমান্য করি কি ভাবে! গেলাম দুজনে হেঁটে হেঁটে লেক (পরে তার নামকরণ হয়েছে রবীন্দ্র সরোবর) জলের ধারে ধারে চলছিলাম আমরা। তিনি হঠাৎ বলেন, “তুমি কবিতা জানো না?”

বেশ কয়েকদিন কিছু লিখিনি। আজ অনেক দিন পূর্বের এক স্মৃতি রোমন্থন করি! তখন সবে কলেজে প্রবেশ করেছি। দু’বেণীতে শাড়ীতে রাসবিহারী এভিনিউ তে দশ পা হেঁটে স্টপে দাঁড়াই যে দিন যেটা আগে আসে বাস কিংবা ট্রাম তাতে চড়ে নামি গিয়ে গড়িয়াহাট মোড়ে। সেখান থেকে পাঁচ মিনিট দুরত্বে আমার ‘মুরলীধর গার্লস কলেজ’।
কলেজে খুব মজা। স্কুলের মতো বাঁধাধরা পর পর পিরিয়ড নয়। ইচ্ছে হলে অফ করতেও পারি। অবশ্য নিজ দায়িত্বে পার্সেন্টেজ তো হাজিরা খাতায় একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা ছিলো। প্রক্সি আর কত দেওয়া যায়!
মনের মতো বান্ধবী ছিলো কয়েকটি। তাদের সঙ্গে সিনেমা যাওয়া হতো মাঝে মাঝে ক্লাস বাঙ্ক (এখন কার ভাষা – ঐ সময়ে প্রচলন ছিল না, কাট কথাটা বলতাম) মেরে। কলেজের কাছে ছিলো ‘আলেয়া’, ‘প্রিয়া’, ‘মেনকা’ হল গুলি।
মনে আছে ‘কশ্মীর কী কলি’, ‘সঙ্গম’ আরও কি কি দেখেছিলাম ঐ ভাবে। হলে বসে একটু একটু ভয় হতো, যদি চেনা কেউ দেখে ফেলে! মাকে বলে দেয়! আমি বাবার থেকে মা কে বেশী ভয় পেতাম। মা যে খুব বকতেন তা নয় কিন্তু তবু কে জানে! মনে আছে রবিবার আটটায় গানের ক্লাস ‘সুরঙ্গমা’য় যেতাম। ঐ রাসবিহারি মোড়ে। আমি শিখতাম গীটার।
যখন স্কুলের পালা চুকলো ভাবলাম কিছু শিখি, তখন ছিলো টাইপরাইটার এর যুগ। একদিন সকালে ভয়ে (আমরা সে সময়ে মা কে, বাবা কে কিছু বলতে একটু ভয় পেতাম) বললাম, “টাইপ শিখি?”
বাবা পেপার পড়তে পড়তে চশমার ফাঁক দিয়ে চোখ তুলে বললেন, “কেন? টাইপ কেন? চাকরি করার ইচ্ছে?”
বললাম, “সবাই শিখছে।” বাবা বলেছিলেন, “দুনিয়ায় এতো কিছু শেখার আছে, সে সব ছেড়ে টাইপ কেন?”
ব্যস, হয়ে গেলো। তখন শুরু হলো গীটার শেখা। ছোটো বোন গান। গীটার ক্লাসের এক শিক্ষক জানি না কেন মন দিয়ে শেখাতেন আমাকেই বেশি করে।
কিছু দিন কাটলো…
লেকে আমরা প্রায়ই বাড়ী থেকে যেতাম, খুব কাছে ছিলো বাড়ীর। তাঁর কথা অমান্য করি কি ভাবে! গেলাম দুজনে হেঁটে হেঁটে লেক (পরে তার নামকরণ হয়েছে রবীন্দ্র সরোবর) জলের ধারে ধারে চলছিলাম আমরা। তিনি হঠাৎ বলেন, “তুমি কবিতা জানো না?”
জানবো না কেন কত পড়ি তো। আর আমি ছোট থেকেই ছিলাম, ‘গ্রন্থ কীট’। অনেক কিছুই পড়তাম। বাড়ীতে অবাধ স্বাধীনতা ছিলো এ বিষয়ে।
“হ্যাঁ জানি”
“চল বসি একটু” – একটা বেঞ্চিতে বসলাম। ঝিরি ঝিরি হাওয়া গায়ে ভেসে আসছে জল থেকে।
“আচ্ছা এবার শোনাও একটা কবিতা”
আমি বসেছি তাঁর পাশে, কিন্তু লজ্জা লজ্জা করছে কবিতা কি করে শোনাই! ভাবছিও আজ কি স্যারের মতি বিভ্রম! এমন খেয়াল কেন!
“কি হলো, পড়লে না!”
আমি চুপ করে আছি। সামনে দিয়ে এক চীনে বাদাম ওলা যাচ্ছে, ডাকলেন তিনি দু’ঠোঙ্গা বাদাম কেনা হলো। একটি একটি করে ছাড়িয়ে খাচ্ছি, দুজনেই। খানিকক্ষণ চুপচাপ। বলেন, “গীটার শিখছো, গান ভালো লাগে না?”
“হ্যাঁ, গাই তো!”
উজ্জ্বল মুখে বলেন, “গাও তো একটা?”
আমি বলি, “সবাই শুনবে।” তিনি বলেন, “বেশ আগামী রবিবারে স্কুল আাওয়ার্সে শুনবো।” এই ধারাবাহিকতা মানে লেকে যাওয়া, বাদাম খাওয়া, গুন গুন গান শোনা, কবিতা আবৃত্তি চলেছিলো বেশ দীর্ঘদিন।
তখন অতো বুঝিনি, পরে বুঝেছি।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






