নাফাখুম জলপ্রপাত: দিনে জলে স্নান, রাতে জ্যোৎস্নায়
কিছু মানুষ পানি পেলেই পাগল হয়ে যায়। পানির কলকল শব্দে মেতে ওঠে এক চঞ্চল মন। তাই তারা সুযোগ পেলেই ছুটে চলে এমন কোথাও যেখানে পানির সৌন্দর্যে মেতে ওঠে প্রকৃতি। আজ এমনই একটি পর্যটন কেন্দ্র সম্পর্কে বলবো। যার নাম নাফাখুম জলপ্রপাত।

পাহাড় বেয়ে নেমে আসা বিশাল জলরাশি। যে জলরাশি গায়ে মেখে আপনি কিছুটা প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে পারেন। নাফাখুম ঝর্ণা এমনই একটি পর্যটনকেন্দ্র। যার রূপ যেন ঠিক রূপকথার গল্পের মতো। বান্দরবানের থানচিতে অবস্থিত নয়নাভিরাম এ ঝর্ণাটি।
নাফাখুম জলপ্রপাত
মারমা শব্দ ‘ঙাফা-খোং’ থেকে এসেছে এই নাফাখুম শব্দটি। মারমা এই ‘ঙাফা’ শব্দির অর্থ হল ‘মাছ’ আর ‘খোং’ শব্দটির অর্থ হল ‘জলপ্রপাত’। নাফা নামক একধরণের মাছ পাওয়া যায় রেমাক্রী নদীতে। এই মাছের বৈশিষ্ট্য হলো এই মাছগুলো সবসময় স্রোতের ঠিক বিপরীত দিকে চলে।
আদিবাসীরা ঝর্ণার পাশেই এই মাছগুলো ধরে থাকে। এই কারণেই এই ঝর্ণার নাম দেওয়া হয়েছে নাফাখুম ঝর্ণা। রেমাক্রি থেকে অসাধারণ সুন্দর এই জলপ্রপাতটিতে যেতে মাত্র আড়াই ঘণ্টা পথ হাঁটতে হয়।
এতোটা পথ হাঁটার কথা শুনলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু আপনারা যখন রেমাক্রি থেকে হাঁটতে শুরু করবেন তখন এর মাঝে এতো সুন্দর সুন্দর সব দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন যে তখন মনেই থাকবে না কখন যে আড়াই ঘন্টা পথ হাঁটা শেষ করেছেন।
কারণ এই পুরোটা পথই অপেক্ষা করে তার অপরূপ সৌন্দর্য্য নিয়ে। আসলে এর যে সৌন্দর্য তা ভাষায় বলে বা ভিডিওতে দেখিয়েও প্রকাশ করার মতো নয়। যতক্ষণ না আপনি নিজেই তা দেখছেন! ঠিক যেন রূপকথার গল্পের মতো লাগে। যার সৌন্দর্য পর্যটককে সতেজ রাখবে বহুদিন।
কীভাবে যাবেন নাফাখুম ঝর্ণা?
আর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে অপরূপ সুন্দর নাফাখুম ঝর্ণা।
বান্দরবান থেকে থানচি
আপনারা বান্দরবান থেকে থানচি বাসেও যেতে পারেন। যদি বাসে যেতে চান তাহলে বান্দরবানের থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে এক ঘণ্টা পর পর লোকাল বাস থানচির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সেই বাসে যেতে পারেন। এতে জনপ্রতি বাস ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা। আর সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
আর রিজার্ভ জীপ বা চান্দের গাড়ির খরচ হবে ৫,৫০০ থেকে ৬,০০০ টাকা। এসব এক গাড়িতে ১২ থেকপ ১৪ জন যাওয়া যায়।
এবার থানচি থেকে রেমাক্রি…
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল বিকেল ৩ টার পর থানচি থেকে রেমাক্রি যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই এটি মনে রেখে অবশ্যই আপনাকে ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। ২ টা পার হলে সেদিন আর রেমাক্রি যাওয়া হবে না। আবার পরেরদিন সকালে রেমাক্রি যেতে হবে।
উপজেলা প্রসাশন থেকে অনুমতি পাওয়ার পর থানচি ঘাট থেকে আপনাকে একটি ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে। আর এসব নৌকায় ৪ থেকে ৫ জন যেতে পারবেন।
রেমাক্রি পর্যন্ত এসব রিজার্ভ নৌকায় যাওয়া এবং পরেরদিন আসা সহ ভাড়া পরবে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। আর এই নৌকায় যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। তবে সাঙ্গু নদীতে পানি কম থাকলে কিছু জায়গায় নৌকা থেকে নেমে হেঁটে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে সময়টা আরও একটু বেশি লাগতে পারে।
এবং রেমাক্রি থেকে নাফাখুম রেমাক্রি খাল ধরে নাফাখুম ঝর্ণা যেতে হবে পায়ে হেঁটে। এতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ ঘন্টা। তবে এই সময় নির্ভর করবে আপনার হাঁটার গতির উপর। বর্ষার সময় এই রেমাক্রি খালে পানি অনেক বেশি থাকে। কোথাও কোমর পানি কিংবা কোথাও আরও বেশি।
এজন্য কিছু জায়গায় রেমাক্রি খাল এপার ওপার করতে হয়। পানি বেশি থাকলে এই পারাপারে সময় বেশি লাগবে। আর এই সকল বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করবে আপনার গাইড।
কোথায় থাকবেন?
রেমাক্রি বাজারে আদিবাসীদের ঘরেও পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা আছে। সাঙ্গু নদীর পাশে আদিবাসীদের ঘরে বা রেস্ট হাউজে কয়েকজন মিলে থাকলে সেখানে জনপ্রতি খরচ পরবে ১৫০ টাকা। এছাড়াও নাফাখুম পাড়াতে আদিবাসীদের ঘরেও এমন থাকার ব্যবস্থা আছে।
কোথায় খাবেন?
আপনাদের এখানে সাধারণত ভাত, ভর্তা, ভাজি ও ডিম খেতে খরচ হবে ৮০ টাকা। আর যদি ডিম খেতে না চান তাহলে এর বদলে মুরগি খেতে চাইলে তার খরচ হবে ১২০ টাকা। এই সবই আগে থেকেই গাইডকে দিয়ে জানিয়ে রাখতে হবে কি খাবেন এবং কতজন খাবেন।
কিছু সতর্কতা
আজ এই পর্যন্তই! আবারও দারুণ কোনো পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে হাজির হবো আপনাদের কাছে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং দ্য ব্যাকস্পেস জার্নালের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






