জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা

জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা। নাটকের সেই বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল। নাটোরের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস সম্পর্কে জানুন। এই ব্যাপারে জানতে পোস্ট টি পড়ুন।

অগাস্ট 11, 2023 - 11:00
অগাস্ট 11, 2023 - 13:10
 0
জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের কাঁচাগোল্লা
নাটোরের কাঁচা গোল্লা জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল | ছবি সংগৃহীত

নাটোরের কাঁচাগোল্লা যার সঙ্গে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। ব্যাটাদের কাঁচাগোল্লা এখন সারাদেশব্যাপী খ্যাতি হলেও এই মিষ্টির তৈরি প্রকৌশল এর ইতিহাস অনেক আগে থেকে। এই কাঁচাগোলার সৃষ্টি হয়েছিল মধুসূদন পাল নামের একজন ব্যক্তির হাতে ধরে। যিনি মূলত ছিলেন নাটোরের বাসিন্দা। সেই মধুসূদন পাল আর পৃথিবীতে নেই তিনি না থাকলে কি হবে তার সৃষ্টি করা বা তৈরি করা সেই কাঁচা গোল্লা আজও সারা দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। নাটোরের এই কাঁচাগোল্লা শুধু দেশব্যাপী নয় এটি প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশের বাহিরেও।


অত্যন্ত পরিমাণ সুস্বাদু এই কাঁচাগোল্লা শুধু দেশব্যাপী সুনামি অর্জন করেনি সুনামির পাশাপাশি এই কাঁচা গোল্লা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে। শুধু তাই নয় এই কাঁচা গোল্লা ছিল অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানির প্রধান খাদ্য তালিকার অন্যতম একটি খাদ্য


মূলত এই কাঁচা গোল্লা নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই যখন মূলত নাটোরের নাম উঠে তখন প্রথমে চলে আসে কাঁচা গোল্লার কথা অপরদিকে যখন কাঁচা গোল্লার কথা ওঠে তখন প্রথমেই নাম চলে আসে নাটোরে যেন একে অপরের পরিপূরক। যেন একই সূত্রে গাথা এই নাটর ও কাঁচা গোল্লা।


জি আই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি

বর্তমান সময়ে এসে নাটোরে সেই কাঁচাগোল্লা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৭ তম নিজস্ব জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত পেল নাটোরের এই কাঁচা গোল্লা। গত ৮ আগস্ট রোজ মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা এবং ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে স্বাক্ষরিত জি আই সনদপত্রটি পাঠান


এই তথ্য মূলত ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা নিজে নিশ্চিত করে বলেন। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন নাটোরের এই কাঁচা গোল্লা যেটি কিনা অনেকদিন ধরেই নাটোরের ঐতিহ্য বহন করে আসছিল সেটি আজ থেকে জিআই স্বীকৃতি পেল এতে করে আমরা সবাই নাটোর বাসিরা অনেকটাই গর্বিত। এটির বিস্তার শুধু দেশে নয় এটির বিস্তার দেশের বাহিরে কিভাবে ভবিষ্যতে আরও সুদূর করা যায় সেই ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান। এই পণ্যকে কেউ যেন বিকৃত করে আর না বানাই সে ব্যাপারে প্রশাসন যথেষ্ট পরিমাণ নজরদারি রাখবে


তিনি আরো জানান রাজশাহীর বর্তমান জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ যিনি আগে নাটোরে থাকাকালীন সময় থেকে কাঁচা গোল্লার জিআই নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেনএফিডেভিট এর মাধ্যমে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের মাধ্যমে গত ৩০ মার্চ নাটোরের কাঁচা গোল্লার জিআই আবেদন কপ্রক্রিয়ার কাজটি মূলত সম্পাদিত হয়েছিল। এটা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছিল নাটোরের ই কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। গত ৮ আগস্ট সনদ প্রদান করেছিল শিল্প মন্ত্রণালয়।


এর পাশাপাশি তিনি আরো বলেন এই কাঁচাগোল্লা জিআই তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শুধু নাটোরের ইতিহাস ঐতিহ্যকেই সংরক্ষণ করবে না এটি মূলত আরো বড় পর্যায়ে যাবে এবং দেশ ও বিদেশে ব্র‍্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করবে এবং দেশ ও বিদেশে এই কাঁচা গোল্লার চাহিদা অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।”


কাঁচা গোল্লার ইতিহাস 

কাঁচা গোল্লার ইতিহাস সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানা নেই কাঁচা গোল্লার পেছনে রয়েছে মজাদার একটি ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রানী ভবানী যার প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় ছিল মিষ্টি। শহরের লাল বাজারের মধুসূদন পাল নামের একজন মিষ্টি বিক্রেতা মূলত রানী ভবানীর সেখানে মিষ্টির যোগান দিত একদিন তিনি খেয়াল করেন তার সেখানে কর্মরত সব মিষ্টির কারিগর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সেদিন তার দোকানে মিষ্টি বানানোর জন্য দুই মন পরিমান ছানা ছিল। ছানাগুলো হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে এই ভেবে মধুসূদন নিজেই ছানা গুলোর সঙ্গে চিনি যোগ করে সেগুলোতে তাপ দেয়


কারিগরদের অনুপস্থিতিতে ঠিক এলোমেলোভাবে তৈরি হয়ে যায় নতুন এক ধরনের মিষ্টি। মিষ্টিটি দেখতে যেমনই হোক না কেন মিষ্টিটি ছিল স্বাদেও গুণ অতুলনীয়। তিনি উপাযন্ত না দেখে এই মিষ্টিটি রাজপ্রাসাদে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল এই মিষ্টিটি খাওয়ার পর রানি এই মিষ্টিটা খুব প্রশংসা করে ফেলে


শুধু মিষ্টি উপভোগ না এর সাথে সাথে রাণী এই মিষ্টিটির নাম জানতে চান তখন মধুসূদন বিপাকে পড়ে যায়। কি নাম দিবেন কি নাম দিবেন ভাবতে ভাবতে তিনি ভাবেন যেহেতু এটি কাঁচা থানায় তৈরি তাই তিনি নাম দেন কাঁচা গোল্লা। আর সেই থেকেই এই মিষ্টিটির নাম কাঁচা গোল্লা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে আসছে।
 


নাটোরের এই কাঁচাগোল্লা সারা বাংলাদেশে বিপুলভাবে পরিচিত। নাটোর যদি কেউ ঘুরতে যায় তবে সেখানে গিয়ে কিছু কিনুক বা না কিনুক অন্ততপক্ষে কাঁচা গোল্লাটি কিনে নিয়ে আসে। অর্থাৎ নাটোরের এই কাঁচা গোল্লা মূলত নাটোরের ঐতিহ্যকেই বহন করে। সেখানকার স্থানীয় কারিগরদের হাতে নৈপুণ্যের শহীত এ কাঁচা গোল্লাটি তৈরি করা হয়


এটির সাদ আসলেই অতুলনীয় যা খেলে যে কারোরই ভালো লাগবে বলে আশা করা যায়। জিআই স্বীকৃতি পেল নাটোরের এই বিখ্যাত কাঁচা গোল্লা। একদিকে নাটোরের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও এই কাঁচা গোল্লার খ্যাতি অনেক টাই ছড়িয়ে যাবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ