দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অব্যবস্থাপনা

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য হলেও এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। দুর্যোগের ফলে দেশের জিডিপিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে, গত কয়েক বছরে এটির কারণে দেড় দশমিকের বেশি জিডিপি কমে গেছে। তবে বর্তমানের আধুনিক সময়ে অনেক ভালো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব দুর্যোগ মোকাবেলায়।

মে 22, 2023 - 15:00
মে 22, 2023 - 09:26
 0
দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অব্যবস্থাপনা
প্রতীকী ছবি | Image by Freepik

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে অসংখ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বহু ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত দূর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সেভাবে আধুনিক সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি।


এসব দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী ঝড়, টর্নেডো, নদীভাঙন, উপকূলভাঙন, খরা, শৈত্যপ্রবাহ ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত নগণ্য হলেও এর মারাত্মক বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ।


দুর্যোগের ফলে দেশের জিডিপিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে, গত কয়েক বছরে এটির কারণে দেড় দশমিকের বেশি জিডিপি কমে গেছে। তবে বর্তমানের আধুনিক সময়ে অনেক ভালো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব দুর্যোগ মোকাবেলায়।


বাংলাদেশের অবস্থা

ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা প্লেটের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন ঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। ‘ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট-২০১১’ অনুযায়ী, দুর্যোগের ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১৫তম।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেব অনুসারে ক্ষতি

২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে পরিচালিত জরিপে শস্য খাতে ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, প্রাণিসম্পদে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, পোলট্রিতে ১.৫১ শতাংশ, মৎস্য খাতে ৩.৭১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। ভূমি অবক্ষয়ে ৫২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ও বসতঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর ও অবকাঠামোতে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং খানাভিত্তিক সামাজিক বনসহ উঠানের গাছ-পালায় ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৬ বছরে ক্ষতি জিডিপির ১.৩২% শতাংশ।


অন্যদিকে গত ১০ বছরে দেশে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখ মানুষ। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিন দশক আগে ঘূর্ণিঝড় গোর্কির আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছিল উপকূলের প্রায় এক কোটি মানুষ। গত দুই দশকের মধ্যে ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে ১৯ বার। আবার এ সময় আবহাওয়া-সংশ্লিষ্ট দুর্বিপাকের ঘটনাগুলোও দেখা গিয়েছে বেশি।


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের দেশের কোনো সরকারই কখনো খুব একটা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বরং দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে পরে ত্রাণ কার্যক্রমে বেশি মনযোগী হতে দেখা যায়। কারণ এতে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা বাড়ে।অন্য কোনো সময় সরকারের কোনো মন্ত্রী সেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে যায় না কিন্তু কোনো বড় দুর্যোগের ঘটনা ঘটলে সামান্য ত্রাণ নিয়ে গিয়ে ছবি উঠাতে কার্পন্য করেনা কেউ। সবাই নিজের নাম ও ফ্রেম ধরে রাখতে ব্যস্ত হয়। তবে আধুনিক সময়ে আমাদের কার্যকরী সব পদক্ষেপ নেওয়ার সময় চলে এসেছে।


এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও বেশি কাজ করতে হবে বলে জানান বিশ্লেষকরা। তবে আমাদের সমস্যা হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম চলে গিয়েছে আমলাদের হাতে। কিন্তু আমলারা তো এ বিষয়ে এক্সপার্ট নন। এটি একটি বিজ্ঞান। এটা জানতে হবে। আর তা একদিন বা দুদিনে জানার বিষয়ও নয়। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে যেসব ছেলেমেয়ে পাস করে বেরোচ্ছে, তাদেরও সরাসরি দুর্যোগ মোকাবেলার কাজে লাগানো যাচ্ছে না।


সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলা এতে দেশের মানুষের মধ্যে যে শহর কেন্দ্রিক হওয়ার প্রবণতা রয়েছে সেটি অনেকাংশে কমে আসবে। এতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনবসতির বিন্যাস ঠিক থাকবে। এটি ছাড়া নিয়মিত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে মানুষের চাপ বাড়ছে আর অপরিকল্পীত ভাবে গড়ে উঠছে আরেকটি শহর। যা একটি টেকসই দেশের ভবিষ্যত হতে পারে না।


ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার এ কাঠামোর কেন্দ্র মূলে রয়েছে ঝুঁকিকবলিত জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি মোকাবেলার সামর্থ্য বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট ঝুঁকির মধ্যে তাদের বিপদের আশঙ্কা হ্রাস করা।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

আব্দুস সবুর ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।