নকিয়া (Nokia): এলাম, দেখলাম, জয় করলাম আবার হারিয়েও গেলাম!
১৮৬৫ সালের ১২ মে নকিয়া একটি একক পেপার মিল অপারেশন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা ছিলো একটি ফিনিশ বহুজাতিক কর্পোরেশন। ১৯ শতকের মধ্যে প্রসারিত হয়ে কোম্পানিটি বিভিন্ন পণ্যের শাখায় বিস্তৃত হয়। ১৯৬৭ সালে গঠিত হয় নকিয়া কর্পোরেশন।

টেকনোলজির এই বিপ্লবের সময়েও এমন মানুষ আজও খুব কম আছে যারা নকিয়া ব্র্যান্ডের নাম শোনেন নি। কিন্তু একটি মোবাইল কোম্পানী কীভাবে এত বিখ্যাত হল আবার হঠাৎ একদিন উধাও হয়ে গেল? বিস্তারিত জানুন।
Nokia Comapny - এক নজরে
প্রতিষ্ঠিত: ১২ মে ১৮৬৫
প্রতিষ্ঠাতা: ফ্রেডরিক ইডেস্টাম, লিও মেচেলিন, এডওয়ার্ড পোলন
সদর দপ্তর: এসপু, ফিনল্যান্ড
নকিয়া (Nokia) এর ইতিহাস
আর ২০ শতকের শেষের দিকে কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়েছিল কোম্পানিটি। কিন্তু নোকিয়ার ব্যবসায়িক ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটায় বর্ধিত প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য বাজার শক্তি। এবং ২০১৪ সালে নোকিয়ার মোবাইল ফোন ব্যবসা মাইক্রোসফ্টের কাছে বিক্রি হয়েছিল।
মোবাইল রেডিও টেলিফোন
১৯৬৬ সাল থেকে নোকিয়া এবং সালোরা আরপিএস তৈরি করেছিল। এবং ১৯৭১ সালে এই প্রযুক্তিটি ফিনল্যান্ডে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক হয়ে ওঠে। আর ১৯৭৮ সালে এটি ফিনল্যান্ডে ১০০ শতাংশ কভারেজ দেয়। নোকিয়া সানোমালাইটেজারজেস্টেলমা অর্থাৎ মেসেজিং সিস্টেম, একটি ডিজিটাল, পোর্টেবল এবং এনক্রিপ্টেড মেসেজ ভিত্তিক যোগাযোগ যন্ত্র তৈরি করেছিল ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে।
১জি নকিয়া (Nokia) মোবাইল টেলিফোন
১৯৮৪ সালে নোকিয়ার টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘Nokia-Mobira Oy’ রাখা হয়। এবং সেই বছরেই ‘মোবিরা টকম্যান’ নামে একটি প্রাথমিক পোর্টেবল ফোন চালু করা হয়েছিল। আর ১৯৮৯ সালে, Nokia-Mobira Oy এর নাম পরিবর্তন করে এর নাম রাখা হয়, ‘Nokia Mobile Phones’।
মোবাইল যোগাযোগের জন্য ২জি
জিএসএম 2G নেটওয়ার্ক এবং মোবাইল ফোন উন্নত ভয়েস কল, আন্তর্জাতিক রোমিং এবং নতুন পরিষেবা যেমন টেক্সট মেসেজিং এর জন্য সহায়তা প্রদান করে। ১ম জুলাই ১৯৯১ সালে হেলসিঙ্কিতে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হ্যারি হোলকেরি জিএসএম 2G নেটওয়ার্কে প্রথম টেলিফোন কল করেছিলেন। আর এই কল করার জন্য তিনি একটি প্রোটোটাইপ নোকিয়া জিএসএম ফোন ব্যবহার করেছিলেন।
১৯৯২ সালে প্রথম জিএসএম ফোন, নকিয়া ১০১১, বাণিজ্যিকভাবে উপলব্ধ করা হয়। ‘১০১১’ মেডেলের এই মোবাইলটির লঞ্চের তারিখ ছিলো ১০ নভেম্বর ১৯৯২ সাল। আর ১৯৯৪ সালে নকিয়া ২১০০ সিরিজের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয় একটি ব্র্যান্ডিং রিংটোন নোকিয়া টিউন।
নকিয়া (Nokia) জিএসএম 2G এর অবস্থান
এছাড়া নকিয়া ‘নকিয়া ৩৩১০’ লঞ্চ করে ২০০০ সালে । এবং ২০০৩ সালে নকিয়া ১১০০ হ্যান্ডসেট লঞ্চ করা হয়েছিল। নোকিয়া ‘এন-গেজ’ -এ একটি ভিডিও গেম কনসোল এবং একটি মোবাইল ফোন একত্রিত করেছে।
সিম্বিয়ান ওএস
আর ২০১২ সালে সিম্বিয়ান প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা শেষ ফোন ছিলো ‘Nokia 808 PureView’। এতে ৪১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ছিলো।
নকিয়া স্মার্টফোনের বাজার
২০০৯ সালের শুরুর দিকে Nokia N97, একটি ল্যান্ডস্কেপ QWERTY স্লাইডার কীবোর্ড সহ একটি টাচস্ক্রিন ডিভাইস যা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং Nokia E52 মডেলের বেশ কয়েকটি ডিভাইস নকিয়া প্রকাশ করে। শুধু প্রকাশই নয় এগুলো ইতিবাচক পর্যালোচনাও পেয়েছে। আর ২০১০ সালে নোকিয়ার উপর বাণিজ্যিক চাপ বেড়ে যায়।
নোকিয়া এবং ইন্টেল ‘মিগো’ ঘোষণা করে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এই মিগো এর লক্ষ্য হলো ট্যাবলেট এবং স্মার্টফোন সহ অনেক ধরণের ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা।
তাই এই মিগো ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল নোকিয়া তার স্মার্টফোনে। আর ২০১১ সালে এটি শুধুমাত্র Nokia N9 এই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো। ২০১১ সালের জুনে নোকিয়ার চেয়ে অ্যাপল বেশি স্মার্টফোন তৈরি করছিল।
এছাড়া মাইক্রোসফ্টের সাথে নকিয়ার একটি সফল অংশীদারিত্ব ব্যবসার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে নোকিয়া রোমানিয়ার ক্লুজে তার কারখানা বন্ধ করে দেয় সেই সাথে সেখানে ৩,৫০০ কর্মচারীকেও বরখাস্ত করা হয়।
এরপর ২০১১ সালের ২৬ অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড কনফারেন্সে নকিয়া প্রথম Nokia Windows Phone 7 ভিত্তিক ডিভাইসগুলি লঞ্চ করে। আর সেগুলো ছিল বেশ ব্যয়বহুল। যেমন; Nokia Lumia 710 এবং Nokia Lumia 800 ইত্যাদি।
আর এই লঞ্চের পর নোকিয়ার শেয়ারের দাম প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। এমনকি নোকিয়ার স্মার্টফোন বিক্রিও দ্রুত কমে যায়। আর এই বৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে নোকিয়ার স্মার্টফোনের বিক্রি বাজারে প্রথম থেকে দশম স্থানে নেমে আসে।
মাইক্রোসফটের কাছে ব্যবসা বিক্রি
নোকিয়ার চেয়ারম্যান রিস্টো সিলাসমা এই চুক্তিটিকে যুক্তিসঙ্গতভাবে সঠিক বলে মনে করলেও তা মানসিকভাবে কঠিন বলেও বর্ণনা করেছেন। আর এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত। তারা বলেন যে, নোকিয়া যদি ডিভিশন বিক্রি না করত তাহলে নগদ সংকটে পড়ত। এরপর ২০১৪ সালের ২ এপ্রিলে নকিয়া তার মোবাইল ফোন ব্যবসা Microsoft এর কাছে প্রায় €৩.৭৯ বিলিয়ন ইউরো দামে বিক্রি করে।
নোকিয়ার পেটেন্টের দশ বছরের লাইসেন্সের জন্য মাইক্রোসফট €১.৬৫ বিলিয়ন ইউরো প্রদান করেছে। নোকিয়ার মোবাইল ফোন সম্পদ ফিনল্যান্ডে অবস্থিত মাইক্রোসফট মোবাইলের একটি অংশ হয়ে ওঠে।
মাইক্রোসফ্ট আশা, এক্স এবং লুমিয়া ব্র্যান্ডগুলি অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু নোকিয়া ব্র্যান্ডের জন্য ছিল সীমিত লাইসেন্স। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ১২,৫০০ প্রাক্তন নোকিয়া কর্মীকে মাইক্রোসফট বরখাস্ত করেছে।
নকিয়ার বর্তমান অবস্থা
২০২০ সালের জুন মাসে একমাত্র সরবরাহকারী হিসাবে টেলিকম অপারেটরের পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে তাইওয়ান মোবাইল থেকে নোকিয়া প্রায় $৪৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি 5G চুক্তিতে জয়লাভ করে।
এরপর সেই বছরের অক্টোবরেই নোকিয়া চাঁদে নভোচারী ব্যবহারের জন্য একটি 4G মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে নাসার সাথে একটি চুক্তির ঘোষণা দেয়। আর ২০২২ সালে $১৪.১ মিলিয়ন ডলারে চুক্তি সাবসিডিয়ারি বেল ল্যাবসের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






