‘স্যামসাং’, শুধু স্বপ্নই দেখেনি! তা বাস্তবায়নও করেছে

কখনো কি চিন্তা করতে পেরেছিলেন একজন নুডলস প্রস্তুতকারক তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি একদিন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলোর একটিতে পরিণত হয়ে উঠবে? নিশ্চয়ই তা ভাবতে পারেননি! লি তিনিও হয়তো ভাবেননি যে, এতবড় কিছু অর্জন হবে কিন্তু তিনি তা স্বপ্নেও দ্যাখেননি।

মার্চ 17, 2023 - 19:00
মার্চ 17, 2023 - 21:28
 0
‘স্যামসাং’, শুধু স্বপ্নই দেখেনি! তা বাস্তবায়নও করেছে
‘স্যামসাং’, শুধু স্বপ্নই দেখেনি! তা বাস্তবায়নও করেছে

স্যামসাং নাম শোনেননি এমন মানুষ নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে না। প্রায় সকলেই এই কোম্পানি সম্পর্কে আমরা জানি। স্যামসাং গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বহুজাতিক উৎপাদনকারী সংস্থা। এটি বিভিন্ন ব্যবসার সমন্বয়ে গঠিত। তাদের অধিকাংশই স্যামসাং ব্র্যান্ডের অধীনে সংযুক্ত। চলুন আজ এই স্যামসাং এর ইতিহাস সম্পর্কে জেনে আসি।


এক নজরে দেখে নেই স্যামসাং কোম্পানি সম্পর্কে –

প্রতিষ্ঠিত: ১৯৩৮ সাল

প্রতিষ্ঠাতা: লি বিয়ং চল

সদর দপ্তর: স্যামসাং টাউন, সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া


স্যামসাং (Samsung)

স্যামসাং ১৯৩৮ সালে তার যাত্রা শুরু করেছিলো মাত্র ৩০,০০০ ওয়ান বা প্রায় ২৭ মার্কিন ডলার নিয়ে। এটি শুরু হয়েছিলো একটি ট্রেডিং কোম্পানি হিসাবে। এটি লি বাইং-চুল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী তিন দশকে স্যামসাং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য নিয়ে আসে। যেমন; খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, টেক্সটাইল, বীমা, সিকিউরিটিজ এবং খুচরা বিক্রেতা ইত্যাদি।


১৯৬০ সালের শেষের দিকে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে এবং ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রবেশ করে। ১৯৮৭ সালে লির মৃত্যু হয় এবং এর পরবর্তী সময়ে স্যামসাং পাঁচটি ব্যবসায়িক গ্রুপে বিভক্ত হয়। যথা; স্যামসাং গ্রুপ, শিনসেগে গ্রুপ, সিজে গ্রুপ, হ্যানসোল গ্রুপ এবং জুওংগাং গ্রুপ। স্যামসাং শিল্প গুলোর মধ্যে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স উল্লেখযোগ্য।


১৯৬০ দশকের শেষের দিকে স্যামসাং এই ইলেকট্রনিক্স শিল্পে প্রবেশ করে। এর মধ্যে রয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, স্যামসাং ইলেক্ট্রো-মেকানিক্স, স্যামসাং কর্নিং এবং স্যামসাং সেমিকন্ডাক্টর এবং টেলিকমিউনিকেশনের মতো বেশ কয়েকটি ইলেকট্রনিক্স সম্পর্কিত বিভাগ। আর এর প্রথম পণ্যটি ছিল একটি সাদা-কালো টেলিভিশন সেট। এবার চলুন স্যামসাং ফোনের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই!


১. প্রথমেই SH-100

স্যামসাং এর যাত্রা ১৯৩৮ সালে শুরু হলেও তার অনেক পরে ১৯৬৯ সালে ইলেকট্রনিক্স বিভাগ চালু হয়। এবং তারও পরে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে SGH-100 দ্বারা তাদের প্রথম মোবাইল ফোন তৈরির গৌরব অর্জন করেছিল। আর এটি ১৯৮৮ সালে কোরিয়াতে প্রকাশিত হয়েছিলো।


২. SGH-600

সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে সহজ, পরিচ্ছন্ন ডিজাইনের স্বাদের প্রতি আপীল করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে SGH-600। যা উচ্চ পর্যায়ের গ্রাহকদের কাছে বাজারজাত করা হয়েছে। এই ফোনটি তাদের ইউরোপে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছিল। এই পরিকল্পনাটি তাদের ভালো ছিলো এবং এটি বেশ ভালো কাজও করেছে।


কারণ এটির বিক্রিও ভাল হয়েছে। এর মাধ্যমে স্যামসাং কোম্পানি পুরষ্কারগুলি অর্জন করতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে স্যামসাং বড় বিষয় সম্পর্কে ভাবতে শুরু করে।


৩. Samsung Galaxy S8

Samsung Galaxy ছিলে পরবর্তী সময়ের বড় ধামাকা। GSMarena.com দ্বারা অ্যান্ড্রয়েড প্যাকের সব কিছু বদলে দিয়েছে Samsung Galaxy S। এটি প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১০ সালের জুন মাসে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়।


৫. Galaxy S9 এবং S9 Plus

স্যামসাং এর তখন পর্যন্ত সেরা ফোনগুলির মধ্যে এটি একটি ছিলো। Galaxy S9 এবং S9 Plus ২০১৮ সালের মধ্যে সেরা ফোনগুলির মধ্যে একটি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা তাদের নতুন ফোনগুলিতে ডিসপ্লে থেকে শুরু করে চারপাশের সাউন্ড স্পিকার সহ সবকিছুই বেশ ভালো ছিলো।


এরপর আরও অনেক মোবাইল ফোন বের করে এই কোম্পানি। সর্বশেষ, Samsung Galaxy S21+ 5G।


৬. Samsung Galaxy S21+ 5G

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস 21 + ৫জি বেশ জনপ্রিয় একটি মোবাইল ফোন। এতে  ৬.৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস 21 + 5 জিতে ট্রিপিল রিয়ার ক্যামেরাও সেটআপ রয়েছে। এগুলো ছাড়াও স্যামসাং এর রয়েছে হোটেল এন্ড রিসোর্ট, অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি। শুধু তাই নয় রেনল্ট এর সাথে যুক্ত হয়ে স্যামসাং গাড়িও প্রস্তুত করেছে।


স্যামসাং এর অন্যান্য কাজ

স্যামসাং তার টেকউইন সেক্টরে  বিভিন্ন সুরক্ষা প্রযুক্তি , অস্ত্র এবং পারমানবিক বোমা নিয়েও কাজ করে। স্যামসাং হেভি ইন্ডাস্ট্রি হলো বিশ্বের অন্যতম ভালো জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এখানেই শেষ নয়। স্যামসাং কোরিয়ার সবচেয়ে বড় থিম পার্কও পরিচালনা করে। স্যামসাং এর বিশালতা এতোই বেশি যে সেখানে স্যামসাং এর একটি আর্থিক এরিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর এটি স্যামসাং ডিজিটাল সিটি নামে পরিচিত।


এছাড়াও আছে ফ্যাশন হাউস। তবে এটির বিস্তার এখনো বিশ্বব্যাপী ছড়ায়নি। স্যামসাং এর একটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে রোবোটিক্স, ক্লোনিং, ভার্চুয়াল, থ্রিডি প্রিন্টিং এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কাজ করা হয়। গুগল এবং এমাজনের মতো স্যামসাং এরও বিক্সবি নামে একটি ভয়েস এসিস্ট্যান্ট রয়েছে।


সেই নুডলস থেকে যাত্রা শুরু করে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের রূপ নেয়া এই স্যামসাং তার সীমা আজ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচো মাত্র ৩০.০০০ ওয়ান দিয়ে শুরু হয়েছিলো এই এই যাত্রা। কখনো কি চিন্তা করতে পেরেছিলেন একজন নুডলস প্রস্তুতকারক তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি একদিন বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ও জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলোর একটিতে পরিণত হয়ে উঠবে? নিশ্চয়ই তা ভাবতে পারেননি!


লি তিনিও হয়তো ভাবেননি যে এতবড় কিছু অর্জন হবে কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি হয়তো জানতেন সেই স্বপ্নকে কিভাবে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাই হয়তো আমরা আজ এই স্যামসাংয়ের রূপ দেখছি। তা না হলে এই রূপ আমরা কোনো দিনও দেখতে পেতাম না।


পরিশেষ

এখান থেকেই বোঝা যায় কোনো কিছুই একবারে বড় হয় না। আবার তা এমনি এমনিই তৈরিও হয় না। স্যামসাং এর ইতিহাস আমাদের এমনই শিক্ষা দেয়। আশা করি এর বিস্তৃতি আরও বিকাশলাভ করবে।


আজ এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

সেলিনা আক্তার শাপলা আমি একজন লেখিকা ও ব্লগার। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। এবং ম্যানেজার, দি ব্যাকস্পেস জার্নালে। লেখালেখির যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে সরাসরি ই-মেইল করুন: shelinaaktershapla123@gmail.com