উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১১)
“দত্ত পরিবার (The Dutta Dynasty)” আমার লেখা প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসটির বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ পর্ব আকারে “দি ব্যাকস্পেস জার্নাল” -এ এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হবে। একই সাথে এই উপন্যাসের বাংলা পর্বগুলো পাওয়া যাবে ‘Somewhereinblog.Net’ -এ। আপনার মূল্যবান মতামত ও মন্তব্য আমার জন্য খুবই জরুরী।

অস্বীকৃতি: এই উপন্যাসটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই। যদি দৈবক্রমে এই উপন্যাসের কোন চরিত্র বা বিশেষ কোন ঘটনা কারো জীবনের সাথে মিলে যায় তাহলে এই উপন্যাসটি সেজন্য কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না। এছাড়া কারো ধর্ম এবং রাজনৈতিক অনুভূতি কে আঘাত করার জন্য এই উপন্যাসটি লেখা হয় নি।
গল্প শেষে দুজনে গ্রামের চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখা শুরু করলাম। ঠিক যেন বাচ্চাদের মত করে। একসময় চিরচেনা দীঘির পাড়ে এসে দুজনে দাঁড়ালাম। ছোট্ট এক নৌকায় করে এক ছোকরা মাছেদের খাবার দিচ্ছে। আর আমরা সবুজে বিলীন হয়ে যাওয়া দুই আত্মা নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছি, লুকোচুরি চলছে চোখের ইশারায়।
সেদিনের সেই ফোনকল হঠাৎ ড্রপ করার পর থেকে স্নেহার প্রতি এক ধরণের সন্দেহ আমার মনে জেঁকে বসে। তবে কি অমিতের সাথে স্নেহার কোনো ধরণের সম্পর্ক থাকতে পারে! যদি তাই হয় তাহলে আমার বন্ধু অমিত হলো স্নেহার সেই মৃত ভালোবাসার মানুষ ‘সৌরভ’।
অমিতের কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো সেদিনের ঐ ঘটনার পর থেকে। কিন্তু অমিত তো আমার বন্ধু; খুব কাছের বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বন্ধু যাকে নিঃসন্দেহে আমি বিশ্বাস রেখে চলতে পারতাম। কিন্তু যখন ‘প্রিয়তমা’ শব্দের ভাগাভাগির প্রশ্ন আসে তখন ‘বন্ধুত্ব’ কেমন জানি ফিকে হয়ে যায়। এই ‘প্রেমই পরম মর্ম (Love is The Ultimate Essence)’ কাউকে তোয়াক্কা করে না; কোনো বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলে না।
মুঠোফোনে হঠাৎই ক্ষুদে বার্তা, “কোথায়?” (অমিত)। আমিও ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, “দীঘির পাড়, স্নেহার সাথে…।” আমি হয়তো অমিত কে নিয়ে বেশি ভাবছি আর এজন্যই হয়তো এমন ভুল বুঝছি। সমস্ত চিন্তার সূতো বিশেষ কোনো এক জায়গায় মিলিত হতে পারছে না। স্নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আমার চিন্তাগুলো পড়বার চেষ্টা করছে। খুব কৌতুহল নিয়ে চেষ্টা করছে আমার মনের গহীনে প্রবেশ করবার। কিন্তু ও কে আমি সে সুযোগ দিলাম না।
– স্নেহা, তুমি ক্লিনিকে কবে পা রাখছো?
স্নেহা এই ‘ছাড়ো!’ বলেই নিজের মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। দুটো শালিক পাখি একসাথে আকাশে উড়ছে। ও ওদিকে চোখ ফেরালো। দীর্ঘ মাঠ। কৃষকেরা মাত্র ধানের চারা গাছ রোপন করেছে। আহ্, কি সবুজ!
অবশ্য স্নেহার মত রহস্যময় মেয়ে আমার চোখে এই প্রথম। জীবনে কম মেয়ের সাথে পরিচিত হইনি কিন্তু শুধুমাত্র চোখের চাহনি দেখে কারো মন টের পাওয়া সহজ হলেও আমার ব্যাপারটা ভিন্ন। আমি একজন ‘Pathetic Liar’। চোখে চোখ রেখে মিথ্যে কথা বলতে পারি।
বিকেল গড়িয়ে এখন প্রায় সন্ধ্যা। কিছুদূরে অমিত কে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের দিকে আসছে বেশ আস্তে ধীরে। গায়ে কালো পাঞ্জাবি আর ঢিলেঢালা জিন্স। পায়ে এক চিলতে স্যান্ডেল। বেশ গুছানো লাগছে অমিত কে। আর আমার ও কে দেখেই যেন আজ বিরুক্ত লাগছে। এছাড়া স্নেহার প্রতি আমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আছে। ওদের মধ্যে যে কোনো পরিবর্তন! ব্যস, এরপর স্নেহা তার অবস্থান বুঝে পাবে আমার হৃদয়ে। ছুঁড়ে না ফেলতে হয়! - এই ভয় কাজ করছে।
অমিত কে দেখেই স্নেহা আমার হাত ধরলো। তারপর সরাসরি আমার ঠোঁটে আলতো চুম্বন। স্নেহার এই আচানক স্টেপ আমার চিন্তাকে বেশ ঝিমিয়ে দিলো। কিন্তু প্রিয়তমা, উঞ্চতার রাজ্যে তুমি যদি ঐশ্বরিয়া রায় হয়ে থাকো তবে আমি ইমরান হাশমী।
অতঃপর কাছে এসে অমিত একটু বিব্রত হয়ে বললো,
– বন্ধু, আমি বোধহয় ভুল সময়ে এসে পড়েছি। অন্য কোনো সময় দেখা করি?
স্নেহা একটু অবাক হয়ে, “বান্ধবী! না, অমিত, আমরা সম্পর্কে আছি। হাসান বোধহয় বলতে লজ্জা পাচ্ছে।”
আমি: ইংরেজিতে কি যেন বলে? গার্লফ্রেন্ড! মানে ‘মেয়েবন্ধু’। সুতরাং ‘বান্ধবী -ই’ তো হচ্ছো। অবশ্য, রাবা খানের লেখা বই ‘বান্ধobi’ নয় কিন্তু।
অমিত মৃদু মৃদু হাসছে…
অমিত: হাসান, শোনলাম তুই নির্বাচনে দাড়াচ্ছিস?
স্নেহা: হ্যাঁ, হাসান… তাছাড়া তুমি তো রাজনীতি-বিমুখ একজন মানুষ।
ওদের কথাগুলো শুনছিলাম আর মনে মনে হাসছিলাম। শুধু এই কথপোকথনে একটি সুযোগের অপেক্ষা মাত্র। তারপর সরাসরি আসল প্রশ্নটা জিগ্যেস করবো।
আমি: অমিত, আমি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব দ্রুতই আমি স্নেহা কে বিয়ে করতে চাই।
ওরা (স্নেহা ও অমিত) জানে ‘হাসান’ সম্পর্কে। আর ওদের রাস্তাও নেই এই উত্তর না দিয়ে উঠে যাবার। কারণ এতে আমার ওদের প্রতি সন্দেহের পারদ আরো তীব্র হবে। সম্পর্ক এখানেই শেষও হয়ে যেতে পারে। অবশ্য সেটাই বরং ভালো। আজীবন এই অনলে ভোগার চেয়ে একেবারে আজ শেষ হয়ে যাওয়া। এতক্ষণের খোঁচাখুঁচি তে এটুকু স্পষ্ট যে, অমিতের সাথে স্নেহার কিছু তো ছিলো। খুব সম্ভবত অমিত-ই ঐ ‘সৌরভ’।
এরপর হঠাৎ স্নেহা উঠে দাঁড়ালো। সে রাগে হিস-হিস করছে…
স্নেহা: অমিত, লুক অ্যাট মি! তুমি যেদিন রাজবাড়ি থেকে গ্রামে ফিরে চলে এসেছিলে সেদিনই আমি তোমাকে ভুলে গেছি। তোমার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব আমি সাগ্রহে গ্রহণ করেছিলাম। দারিদ্রতায় এক জীবন কাটানো লাগলেও তোমার হাত ধরতে পিছপা হইনি। বরং নিজে কিছু করতে চেয়েছি। আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু ভীরু কাপুরুষের মত ওমন প্রস্থান আমি আজও মেনে নিতে পারিনি আর কোনোদিন পারবোও না। আর হাসান, আমি দুঃখিত! পুরো বিষয়টি তোমার কাছে গোপন রাখার জন্য। আমায় মাফ করে দিও…
এরপর চোখে জল নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো স্নেহা। আর আমার চোখে সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর ঝলমল করছিলো।
– তা, অমিত! বিশ্বাস কর বন্ধু আমরা কিন্তু এখনোও শুইনি!
আমি জানতাম কোথাও না কোথাও পূর্বে থেকেই এক নিখুঁত জাল ছড়িয়ে ছিলো আমাকে জুড়ে। তার কিছুটা আজ খোলাসা করা গেল। এবার আমায় রাজবাড়ীতে রাজ করতে কেউ ঠেকাতে পারবে না। হ্যান্ডশেক করে অমিত কে বিদায় জানালাম।
মাঝপথেই, মিসেস দত্তের ফোন…
(ছবি সংক্ষেপ: মহারাণী ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত নাটোর। ৪৯.১৯২৫ একর জমির ওপর নাটোর রাজবাড়ী নির্মিত হয়েছিল। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবাড়ীর প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ মতান্তরে ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং সে বছরেই মৃত্যুবরণ করেন। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর রামকান্ত ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে নাটোরের রাজা হন। অনেকের মতে ১৭৩০ থেকে ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজা রামজীবনের দেওয়ান দয়ারাম নাটোরের তত্ত্বাবধান করতেন। রাজা রামকান্ত তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নাটোরের রাজত্ব করেন।)
দত্ত পরিবার উপন্যাসের ১০ম পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১০)
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






