উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১৩)

“দত্ত পরিবার (The Dutta Dynasty)” আমার লেখা প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসটির বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ পর্ব আকারে “দি ব্যাকস্পেস জার্নাল” -এ এখন থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হবে। একই সাথে এই উপন্যাসের বাংলা পর্বগুলো পাওয়া যাবে ‘Somewhereinblog.Net’ -এ। আপনার মূল্যবান মতামত ও মন্তব্য আমার জন্য খুবই জরুরী।

এপ্রিল 12, 2023 - 11:00
এপ্রিল 13, 2023 - 00:15
 0
উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১৩)
উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১৩)

অস্বীকৃতি: এই উপন্যাসটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল নেই। যদি দৈবক্রমে এই উপন্যাসের কোন চরিত্র বা বিশেষ কোন ঘটনা কারো জীবনের সাথে মিলে যায় তাহলে এই উপন্যাসটি সেজন্য কোনোভাবেই দায়ী থাকবে না। এছাড়া কারো ধর্ম এবং রাজনৈতিক অনুভূতি কে আঘাত করার জন্য এই উপন্যাসটি লেখা হয় নি।



আমার মনে হয় বিয়ে নামের
প্রতিষ্ঠানে’ অনেক গলদ আছে এই প্রতিষ্ঠান’ আমাদের জীবনে কিছু কিছু সীমারেখা টেনে দেয়, অধিকার কেড়ে নেয়। তাই একা থাকা বড়ই সৌভাগ্যেরকিন্তু সমাজের এই চেতনা, অনুভূতি এবং বিশ্বাস মানুষকে কখনো কখনো বিয়ে করতে বাধ্য করায়


আপনি একা হোটেল থাকতে গেলে ‘ব্যাচেলর’ বলে বেশিরভাগ সময় খেদিয়ে দেয়
কোনো ট্রাভেল এজেন্সি তে গেলে শুধুমাত্র ‘ব্যাচেলর’ দেখে খুব আপত্তি করে; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রিয় জায়গায় ভ্রমণ করাটা আর হয়ে ওঠে না


প্রশ্ন হলো, বিয়েটা কেন করতেই হবে? আবার বিয়ে না করলে নাকি অন্যের সুরক্ষায় হস্তক্ষেপ করা হয় একদিন আমার এক বন্ধুর বউ আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন, আমি বিয়ে না করে অনেক বড়সড় গুনাহ্ করেছি


আর বন্ধু তো মুখেই বলে দিলো, “নিজের নজর ঠিক কর আর সময় থাকতে বিয়ে করে নে। দুঃখজনক বিষয় হলো ওরাও যদি ফ্রান্সিস বেকন এর ‘Of Marriage And Single Life’ প্রবন্ধটি অন্তত একবার পড়তো তাহলে চিন্তার দোর আরো প্রসারিত হলেও হতে পারতো।


মুঠোফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলাম হাতে সময় কম
খুব ভোরে বাড়ি থেকে পালিয়েছি ওদিকে গ্রাম ছেড়ে এখন বড় রাস্তায়। কারে করে রাজবাড়ী পৌঁছাতে আরো দু’ঘন্টা সময় লাগবে কিন্তু বিয়েটা না করেই এমনভাবে পালানো কি ঠিক হলো? মানুষ বিয়ে করার জন্য পালাই আর আমি বিয়ে না করার জন্য পালাচ্ছি


এই ঘটনার কারণে বিজন দাদা, মিজানুর হুজুর আর মা নিশ্চয় খুব কষ্ট পাবেন কিন্তু এই গল্পে আমি যদি শুধু আমার ব্যক্তি সত্ত্বাকে বেশি গুরুত্ব দেই তাহলে এই জং-ধরা সমাজের জন্য কিছুই করতে পারবো বলে তো মনে হয় না


স্নেহা কিছু বলবে বলে মনে হলো ড্রাইভ সিটে বসে আমার সামনের রাস্তায় চোখ, হাতে কারের স্টিয়ারিং নিয়ে ব্যস্ত জিজ্ঞেস করলাম, “কিছু বলবে?”


স্নেহা: এই দেখো আমার হাতে এই শাঁখাপলা’ আর কপালে সিঁদুর’ নিয়ে ‘স্নেহা হাসান’ এই নতুন নাম নিয়ে এখন থেকে আমার অভিনয় করার যাত্রা শুরুআচ্ছা, তোমার পুরো নাম কি হাসান? তুমি কখনো যেটা বলো নি!


হাসান: ইকবাল হাসান


স্নেহা: ওহ্, উনি তো খুব জনপ্রিয় কবি এবং দার্শনিক বলে জানি কিন্তু বিয়েটা কেন করলে না ইকবাল?


হাসান: সত্যি বলতে আমার কাছে বিয়ে নামক ‘প্রতিষ্ঠান’ বিশেষ কোনো গুরুত্ব রাখে না; ওতে আমি বিশ্বাসও করি না


স্নেহা: তাহলে নিজ হাত কেটে রক্ত দিয়ে আমার মাথায় সিঁদুর কেন দিয়ে দিলে?


হাসান: আজকাল বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের হিন্দি সিরিয়াল দেখে শিখেছি, এভাবেও তো বিয়ে হচ্ছে!... যাকগে মনে হলো ওটুকু তো করতেই পারি আর হুট করে ফুলের পাপড়ি কই পেতাম বলো তো? আবার সেটা থেকে লাল রঙ! আমাকে দিয়ে হবে না, তর্জনী দিয়ে সিঁদুর তো দিলাম এবার স্বামীর মঙ্গল কামনা করো নইলে মুছেও দিতে পারো। অমঙ্গল তো আর তোমার হচ্ছে না!


স্নেহা: এভাবে সনাতন রীতিতে বিয়েটা পুরোপুরি হয় না, হাসান


হাসান: জানি


স্নেহা: আজ তুমি ড্রাইভিং সিটে চোখেমুখে রাজবাড়ি যাবার প্রচন্ড তাড়া আচ্ছা, ওখানে গেলে সূবর্ণা কে দেখতে পাবে? অবশ্য তোমার পুরনো প্রেমের সূচনাও হতে পারে সেখান থেকে


হাসান: এসব এবজার্ড কথাবার্তা একদম বলবে না মানছি সূবর্ণা আমার জীবনের অনেক বড় অংশ জুড়ে ছিলো কিন্তু জরুরী নয় এরপরের অধ্যায়গুলোতেও সে থাকবে


স্নেহা: থাকছে তো! তোমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে আচ্ছা, একটা কথা বলো তো? এই ‘আমি’ চরিত্র তোমার কাছে ঠিক কেমন? কোনো পুতুল মত নই তো!


হাসান: তোমার কি মনে হয়?


স্নেহা
: কিচ্ছু না, আমি শুধু ভাবি এই তো বেশ আছি তুমি অন্তত খুব সহজে রেগে যাও না


হাসান
: ওকে, স্নেহা, প্রেম নিয়ে মির্জা গালিব সাহেব কি বলেছিলেন শুনবে?


স্নেহা
: নিশ্চয়! বলো


হাসান: ছিন্ন কোরো না সব সম্পর্ক আমার সনে আর কিছু না থাক, থাকুক অন্তত দুশমনি


স্নেহা: দারুণ ছিলো! কিন্তু হাসান বিয়েটা কি কোনোদিনই করবে না?


হাসান: বিয়ে নিয়ে জর্জ বার্নার্ড শ কি বলেছিলেন জানো?... তিনি বলেছিলেন, “Marriage for financial security is simply a legalized form of prostitution.”


স্নেহা: 'শ' সাহেব কি বলেছিলেন সেটা আমাদের বাস্তবতা নয় আমাদের সমাজে বিয়ে নামক একটি শক্ত প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি আছে ওদের কিন্তু নেই, এবং এটাই ওদের শর্ট-কামিংস গর্বের বিষয় হলো আমাদের আছে একজন কে নিয়ে এক জীবন কাটিয়ে দেবার দুর্দান্ত সাহস আছে আমরা পারি!


হাসান
: তো? আমরা তো ধোকাও দিতে পারি, খুনও করতে পারি, ধর্ষণও করতে পারি এখন কি এসবও আয়ত্ত করবো? শোনো, শুধুমাত্র যুগযুগ ধরে চলে আসা প্রথা যে আজীবন টিকে যাবে এমন ধারণা থেকে বের হও কোনো কিছুর মান্যতা পাবার জন্য তার দীর্ঘ ইতিহাসের প্রয়োজন নেই


স্নেহা: নিজেকে অ্যান্টি-এস্টাবলিস্ট জাহির করতে পেরে স্মার্ট লাগছে তো এই বিয়েটা ছিলো বলেই আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনো টিকে আছে


হাসান: কি দিয়ে টিকে আছে সিরিয়াসলি! কি দিয়ে টিকে আছে শোনো? এই মনোগামী হচ্ছে এক ধরণের ‘মিথ’ আর পরকীয়ার মহোৎসবে ডুবছে তোমার সোনার বাংলা


স্নেহা: তার জন্য বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের কি দোষ! মাথায় ব্যাথা হয়েছে বলে পুরো মাথাটা কেটে ফেলতে বলছো?


স্নেহার সাথে আজ এমন নোংরা ঝগড়া হবে তা কোনোদিন ভাবিনি ওদিকে সামনের রাস্তার দিকেও খেয়াল নেই কখন থেকে জানি একটি ট্রাক আমাদের পিছু নিয়েছে। রেয়ার মিরর দিয়ে অবশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্তু মাথায় একদম আসে নি আমরা দুজন ঝগড়া করেই যাচ্ছিলাম অনেকক্ষণ ধরে আমাদের পিছু করছিলো ঐ গাড়িটাএকেবারে বুঝিতে পারিনি আমার আরো সাবধান থাকা উচিত ছিলো


ট্রাক টি এখন খুব কাছাকাছি এসে গেছে আমি তাই খুব দ্রুত বামে বাঁক নিয়ে এক জঙ্গলের রাস্তা ধরবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে সুযোগ দিলো না ঐ ট্রাকের ড্রাইভার সোজা এসে কারের ঠিক মাঝ বরাবর জোর ধাক্কা দিলো


এরপর মনে হলো হলিউড সিনেমার মত স্লো মোশনে আমরা আকাশে উড়ছি আর ঘুরছি... কয়েক পাক ঘুরে কারটি পড়লো একটি খাদে বিপ শব্দে থেমে গেল আমার সজ্ঞান


মনে হলো অগ্নি সাক্ষী রেখে বিয়ের সাতপাক না হোক আনুমানিক তিনপাক তো পূর্ণ হলো!



(ছবি সংক্ষেপ: মহারাণী ভবানীর স্মৃতি বিজড়িত নাটোর। ৪৯.১৯২৫ একর জমির ওপর নাটোর রাজবাড়ী নির্মিত হয়েছিল। রাজা রামজীবন নাটোর রাজবাড়ীর প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ মতান্তরে ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন এবং সে বছরেই মৃত্যুবরণ করেন। রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর রামকান্ত ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে নাটোরের রাজা হন। অনেকের মতে ১৭৩০ থেকে ১৭৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজা রামজীবনের দেওয়ান দয়ারাম নাটোরের তত্ত্বাবধান করতেন। রাজা রামকান্ত তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নাটোরের রাজত্ব করেন।)



দত্ত পরিবার উপন্যাসের ১২তম পর্ব পড়ুনঃ উপন্যাস: দত্ত পরিবার (পর্ব - ১২)

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মোঃ মেহেদি হাসান আমি মোঃ মেহেদি হাসান। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ (সাহিত্য) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। আমি একজন লেখক, অভিনেতা ও ব্লগার। এছাড়াও এই ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আপনি চাইলে আপনার লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। আমার ই-মেইল: admin@backspace-journal.com এ। আমার প্রথম প্রকাশিত বই ছোট গল্প সংকলন ‘জোনাকিরা সব ঘুমিয়ে গেছে’ প্রকাশিত হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ভারতে। বইটি বাংলাদেশে ২০২১ সালের ১ম ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পায়। এই বইটি আপনি ‘রকমারি ডট কম’ এ পাবেন। লিংক: https://www.rokomari.com/book/252418/jonakira-sab-ghumiye-gechhe