আমার প্রথম কবিতা লেখা ১৯৭৭ সালে। তখন আমি অনেক ছোট। কবিতা লেখার ইচ্ছা শক্তি আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। ছোট ছোট কবিতা লিখে মাকে দেখাতাম বা শোনাতাম। কিন্তু মা পড়া লেখা জানতেন না, শুধু বলতেন বাহ্! বেশ ভালো হয়েছে তো। লিখে যা খোকন, খোকন আমার ডাকনাম।
মা’র আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে লিখতে শুরু করি। অনেক ছোট ছোট কবিতা লিখে ও ছিলাম। আমার নাটকের প্রতি ও ধ্যান আকর্ষণ হল। নাটকে এমন ভাবে লিপ্ত হলাম, আর কবিতা লেখার সময়ই পাইনি। অনেক নাটকে অভিনয় করেছি, পরে আমি নিজেই নির্দেশনার কাজে নেমে পড়ি। অনেক গুলো নাটকে পরিচালনা করেছি। নাটক করতে করতে অনেক ছোট ও বড় নাটক ও লিখেছি।
যাইহোক, নাটক লিখতে লিখতে মনে হল এবার কিছু কবিতা লিখলে কেমন হয়। উঠে পড়ে লাগলাম কবিতা লিখতে। ছোট্ট বেলার প্রথম কবিতা ছিল, ‘মুরগির ছানা’। কিন্তু কোথায় যে হারিয়ে গেলো কবিতা গুলো আর খুঁজে পাইনি। তাই আবার নতুন করে কবিতা লেখা আরম্ভ করি।
বিস্তারিত বলতে চাই, ভিলাই (ভারত) এর বুকে প্রবাসী বাঙালিদের একটা সাহিত্য সংস্থা আছে যার কর্ণধার ছিলেন শ্রী শিবব্রত দেওয়ানজী। কোনো এক সাহিত্য সভায় ওনার সাথে আমার দেখা হয়। ওখানে আমি একটা কবিতা পাঠ করি, আমার কবিতা শুনে তিনি বলেন, প্রকাশ, তোমার ভেতরে প্রতিভা আছে, তুমি লেখো। কোনো অসুবিধা হলে আমি আছি। সেই থেকেই আমি ওনাকে গুরুর আসনে বসাই এবং আমার সাহিত্য চর্চা আরাম্ভ করি।
বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা'র একটি পত্রিকা (ভারত) প্রতি মাসে বের করা হয়। সেই পত্রিকা তে আমার ছোট ছোট কবিতা ছাপতে থাকে। আমি নিয়মিত কবিতা লিখতে লাগলাম। আমার প্রথম বাংলা কাব্য সংগ্রহ “তুমি এলে তাই” বিমোচন করা হয় তার বিশিষ্ট অতিথি ছিলেন শ্রী শিবব্রত দেওয়ানজী। আর মুখ্য অতিথি হিসেবে ছিলেন কবি, লেখক ও দেশ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী সুকুমার রুজ (কোলকাতা)।
আমার কবিতা লেখাকালে অনেক কবিতা অনেক পত্র পত্রিকায় ছাপতে থাকে। যেমন বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থার মধ্যবলয়, ছত্তীসগঢ় আস পাস, ছত্তীসগঢ় কেসরী, জোনাকি মন, যোধন তথা আরো অনেক পত্র পত্রিকায়। অনেক নাম যশ হয়। এরই মধ্যে আমার এক বন্ধু শ্রী গোবিন্দ পাল বলল, সে এক জন অন্তরাষ্ট্রীয় কবি ও সাহিত্যিক, বলল, তুমি বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সদস্য হয়ে যাও।
আমি বললাম ঠিক আছে, মেম্বারশিপ নিলাম ডিসেম্বর ২০১৮ সালে। এবং সাথে সাথেই আমার কাছে বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের তরফ থেকে আমার কাছে চিঠি আসে যে আপনাকে কোলকাতার কলেজ স্কোয়ারে গুনীজন সম্মানে সম্মানিত করা হবে। আমি আনন্দে উৎফূল্লিত। সময় ও তারিখ পাঠিয়ে দিয়েছিল। আমি স্বপরিবারে মানিক তলা কলেজ স্কোয়ারে পৌঁছে গেলাম।
বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সম্পাদক ডাঃ রাধাকান্ত সরকার একজন কবি লেখক ও সাহিত্যিক এবং সমাজ সেবী। শ্রী রাধাকান্ত সরকার আমাকে কবি ও নাট্যকার হিসেবে গুণীজন সম্মানে সম্মানিত করলেন।
বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে সম্মানিত হওয়ার পর আমার কর্মস্থল ভিলাই (ছত্তীসগঢ়) ইস্পাত কারখানা আমাকে যে সম্মান ও পুরস্কার দিয়েছিল তাতে আমি খুবই অভিভূত হই। তাছাড়া অঞ্চলের বিভিন্ন সংগঠন আমাকে নানা ভাবে সম্মান ও অভিনন্দন জানান।
কিন্তু আমার উড়ান এখানেই শেষ হয় নি। আমি স্বপ্ন দেখতে লাগলাম। আর দেখতে দেখতে এক দিন সেই সুবর্ন সুযোগ এসে গেল, বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন থেকে নিমন্ত্রণ এল, বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য এবং সাহিত্য সম্মেলনে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমি তখন আনন্দে উৎফূল্লিত। সেই আনন্দের কথা আমি কাউকে বলে বুঝাতে পারিনি, ভাবতেই পারিনি যে এতো বড়ো সুযোগ আমি কোনদিন পাবো।
এদিকে আমার কর্মস্থল ভিলাই স্টিল প্লান্ট আমাকে বাংলাদেশ যাওয়ার অনুমতি দিল। কেননা ইহা ছাড়া কোনো মতেই সম্ভব ছিল না। আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আমার কর্মক্ষেত্র কে যে আমাকে এতো বড় সুযোগ দিয়েছিল। আমি বারবার কৃতজ্ঞতা জানাই আমার ডিপার্টমেন্ট কে।
যাই হোক একটা নির্ধারিত সময়ে আমার যাত্রা শুরু হলো। ১৯-৪-২০১৯ তারিখে আমি কলকাতার জন্য রওনা হলাম। চড়ে বসলাম লোকমান্য তিলক শালীমার এক্সপ্রেসে। সময় ছিল বিকেল ৬টা ৪৫মিনিট। আমার পুত্র অনুভব এবং তার বন্ধু বিনয় আমাকে পাওয়ার হাউস রেল স্টেশন এ পৌঁছে দিয়েছিল।
সঠিক সময়ে আমার যাত্রা শুরু হলো। আমি ঠিক সময়ে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম, কিন্তু ট্রেন মাঝখানে রাস্তায় ৩ ঘন্টা দেরিতে চলছিল। আমি বেলা আড়াইটার সময় সাঁতরাগাছি স্টেশনে পৌছালাম। স্টেশন থেকে বাইরে বেরিয়ে বাসে করে সোজা শিয়ালদহ গেলাম।
আমি রবীন্দ্র সেতু বহুবার দুর থেকে দেখেছিলাম, এবার সেতুর উপর থেকে যাওয়া আমার সৌভাগ্য হলো। শিয়ালদহ থেকে টেক্সী ধরে মানিকতলা চক বাগ মারী পৌঁছালাম। আমাকে পুরো দিশা নির্দেশ বাগ মারীতে বসে রাধাকান্ত দাদা দিচ্ছিলেন।
সুতরাং পথে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। রাধাকান্ত দাদার গেস্ট হাউস এ পৌঁছানোর পর ওখানে খুব আদর সৎকার হলো। চিত্ত নামে একটি ছেলে ওখানে থাকে, সব কাজ কর্ম ও রান্না বান্নার ভার সব ওরই উপরে থাকে। চিত্ত আমাকে খুব যত্ন করে লাঞ্চ করালো। আমার জন্য স্পেশাল রুম এলার্ট হলো। কিছু ক্ষণ আরাম করলাম।
বিকেলে রাধাকান্ত দাদার সাথে ২০-৪-২০১৯ তারিখে ঘুরতে বেরিয়ে গেলাম। অনেক বড়ো বড়ো জায়গাতে গেলাম যেখানে কিছু টাকাকে ডলারে পরিবর্তিত করলাম। তারপর ফিরে এসে গেস্ট হাউস এ রাতের ভোজন করে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন ২১-৪-২০১৯ তারিখে সকালে চা-নাস্তা করে ওখানকার একটা প্রসিদ্ধ বাজারে গেলাম কিন্তু রবিবার হওয়ার কারণে বাজারে বেশি কিছু কেনাকাটা করতে পারিনি। ঘরে ফিরে দুপুরে খাবার খেয়ে একটু আরাম করলাম। বিকেলে উঠে ৬-৭ টার সময় চা খেলাম, তার পর সাড়ে দশটা এগারো টার মধ্যে চিত্ত আমাকে খাবার দিল, খেয়ে দেয়ে রাতে শুয়ে পড়লাম। চিত্ত আমাকে খুব ভালো বাসত, চা ও খাবার আমাকে সময় মতো এনে দিত।
ডিসেম্বর ২০১৮ তে যখন আমি ওখানে গিয়েছিলাম তখন চিত্তর সাথে আমাদের পরিচয় হয়। সেখান থেকে ও আমাকে খুব ভালো বাসে। চিত্ত আমার ছেলে ও মিসেস কে খুব যত্ন করে ছিল। তাই পরের বার যাওয়াতে আমার শ্রীমতী ও ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল।
এবার আমার সাথে একটা ছেলে ছিল, নাম ছিল সৌমিক। হোমিওপ্যাথি কোর্স করার জন্য মালদা থেকে এসেছিল। রাধাকান্ত দাদার গেস্ট হাউস এ থেকে প্রাক্টিস করত। খুব ভালো ছেলে, মৃদু ভাষী ও ব্যাবহারিক ছিল।
এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে দক্ষিনেশ্বর যাবো মাকে দর্শন করার জন্য। গতবার আমরা সবাই গিয়েছিলাম কিন্তু আমি ও বিট্টু দর্শন করতে পারিনি, অতিরিক্ত ভীড় হওয়ার কারণে। কেবল মাত্র আমার স্ত্রী সুমিতা দর্শন করতে পেরেছিল। তাই এবার শ্রীমতীর আদেশ ছিল কালী মায়ের দর্শন অবশ্যই করবে।
তাই ২২-৪-২০১৯ তারিখে সকালে ৫:৩০টায় উঠেই স্নান আদি সেরে মানিকতলা থেকে বাস ধরে শিয়ালদহ স্টেশন এ পৌঁছে গেলাম। শিয়ালদহ থেকে ডানকুনি লোকাল ধরে দক্ষিনেশ্বর জন্য রওনা হলাম। আচ্ছা কি করে ওখানে যেতে হবে তাহার বিবরণ আমাকে চিত্ত বলেছিল।
যেতে যেতে রাস্তায় স্টেশন ছিল বিধান নগর রোড, দমদম, বরাহ নগর, তার পরেই দক্ষিনেশ্বর। ওখানে নেমে পায়ে হেঁটে মায়ের মন্দিরে গেলাম। আজকাল মন্দিরে যেতে কোনো কষ্ট হয়না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এত সুন্দর রাস্তা ঘাট তৈরি করে দিয়েছে রে চোখ বন্ধ করে হাঁটতে সুরু করলে সিধা মায়ের মন্দিরে পৌঁছানো যায়। এবং দর্শন করা যায়।
সকাল ৭:৪৫টায় জুতা মোবাইল এবং ব্যাগ জমা করে প্রথমে গঙ্গায় গিয়ে মুখ হাত পা ধুয়ে পূজা সামগ্রী নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলাম। গতবারের মতো এবার বেশি ভীড় ছিল না।
আর তাছাড়া হবেও বা কেন আমি তো খুব সকালে উঠে মাকে দর্শন করতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ভীতরে অল্প কিছু দর্শনার্থী ছিল। আমি ও লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছু ক্ষনের মধ্যে মায়ের দর্শন হয়ে গেল। খুব সুন্দর ও মনোরম মায়ের শ্রী মুর্তী দেখে আমার অনেক দিনের আশা পূরণ হলো। আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। ওখান থেকে বেরিয়ে আবার গঙ্গায় গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে মাথায় জলের ছিটা দিয়ে, মোবাইল ব্যাগ নিয়ে জুতা পরে ঘরে ফোন করলাম, বললাম আমি মাকে দর্শন করে নিয়েছি।
সুমিতা বলেছিল কিছু জিনিস অবশ্য আনবে। তাই ওখান থেকে শুধু দুই প্যাকেট সিঁদুর নিলাম। তারপর একটা হোটেলে কিছু নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল বেলুড় মঠ দেখার, তাই পাশের থেকে ওপারে যাওয়ার টিকিট কেটে নিলাম এবং জাহাজে চড়ে বসলাম। ব্রিজ থেকে কিছু দূরে যেয়ে জাহাজে উঠতে হয়।
জাহাজ খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। গঙ্গা নদীর উপর জাহাজ যখন চলতে শুরু করে তখন ভিডিও কল করে বিট্টু ও সুমিতা কে দেখালাম কেননা ওদের ও খুব ইচ্ছে ছিল বেলুড় মঠ, বিবেকানন্দ মঠ দেখার। ভিডিও করে জাহাজ ও গঙ্গা নদীর দৃশ্য দেখে ওরা খুব আনন্দ পেল ও খুব খুশি হলো। সময় হলে ওদের কে নিয়ে অবশ্যই যাবো।
আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই তীরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে প্রথমে শ্রী রাম কৃষ্ণ মঠ দর্শন করি, ওনার সমাধী স্থলে কিছু ক্ষন বসে পাঠাগার দেখি। এরপর বিবেকানন্দ মঠের দর্শন করে আবার জাহাজে করে দক্ষিনেশ্বরে আসি। ভাড়া খুবই কম, এক সাইডের ভাড়া মাত্র ১১ টাকা। ট্রেন ভাড়া ৫ টাকা, আর শিয়ালদহ থেকে মানিকতলা চক মাত্র ৭ টাকা। এই ভাবে মায়ের দর্শন করে গেস্ট হাউস এ এসে ভোজন করে শুয়ে পড়লাম।
২৪ এপ্রিল এ বাংলাদেশের জন্য রওনা দিলাম। এসি লাক্সারি বাসে। কিছু সময়ের মধ্যে আমরা সল্টলেক পৌঁছে গেলাম। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে বারাসত। বাস চলতে লাগল। বাসে নাস্তা আর জলের ব্যাবস্থা করা হয়, এবং আমরা সবাই নাস্তা করে নিলাম।
আমার সাথে কোলকাতা থেকে অনেক গুণী জন শরিক হয়েছিলেন বাংলাদেশের জন্য। সারেগামা ফেম আরফিন রানার বাবা শ্রী মীর সামশুল আলম (পলাশ চৌধুরী) নামে পরিচিত। আমার সাথে ছিলেন। উনি একজন প্রসিদ্ধ গায়ক। গানের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন।
ধীরে ধীরে আমরা হাওড়া স্টেশন পৌঁছে গেলাম, ওখান থেকে বারাসত। কিছুখনের মধ্যে বেনাপোল বর্ডার এসে গেল। ভারত বাংলাদেশের বর্ডার। অনেক কষ্ট করে আমরা বর্ডার পার হলাম। ওপারে রুপির বিনিময়ে টাকা আর ডলারে পরিবর্তন হল। সবাই করল, আমি ও কিছু টাকায় পরিবর্তন করে নিলাম। তারপর ওখানেই শ্যামলী পরিবহন এর আরামদায়ক বাস একই এজেন্সির দাঁড়িয়ে ছিল, ওতেই চেপে বসলাম। অবশেষে সবাই সাড়ে বারোটার সময় ঢাকার জন্য রওনা হলাম।
অনেক আশার সাথে আমরা আমাদের মাতৃভূমিতে পা রাখলাম। খুবই মানসিক আনন্দের অনুভূতি হচ্ছিল। মনে মনে অনেক জিজ্ঞাসা উঠছিলো যে কেমন হবে বাংলা, আমার মাতৃভূমি। আমরা যশোর জেলার সাতক্ষীরা শহরের উপর দিয়ে চলছিলাম, তার কিছু দুর পেরিয়ে একটি হোটেলে যেয়ে বাস দাঁড়িয়ে গেল। হোটেলটা শ্যামলী পরিবহন এরই ছিল। ওখানে বেশ ভালো লাঞ্চ পেলাম। মাছ ভাত খেয়ে আমরা সবাই তৃপ্ত হলাম।
তারপর আবার চলা শুরু হলো, রাস্তায় ফরিদপুর জেলা এল। বাস অনর্গল চলতে লাগলো। দ্রুত গতিতে চলতে চলতে সবাই বলে উঠলো বাস পদ্মা নদীর উপর দিয়ে যাবে। আমি ভাবলাম হয়তো পদ্মা নদীর উপর কোন পুল আছে সেই পুলের উপর দিয়ে যাবে কেননা পুলের উপর দিয়ে তো বাস যেতেই পারে।
মনে মনে খুব খুশি হচ্ছিলাম, চল পদ্মা নদী তো দেখতে পাবো। ছোট বেলায় অনেক শুনেছি পদ্মার কথা, অনেক গানও শুনছি পদ্মা নদীর ওপরে। পদ্মার ইলিশ মাছ নাকি খুবই প্রসিদ্ধ এবং সুস্বাদু। কিছু ক্ষনের মধ্যে পদ্মা নদীর ঘাট এসে গেল। দেখলাম অনেক রকম গাড়ীর জম ঘট লেগে আছে, ট্রাক, বাস, অটো এবং মোটরসাইকেল আদি।
আমাদের বাস শ্যামলী অনেক বড়ো বাস। আমি ঝেকে দেখলাম অনেক বড় নদী, এ কূল থেকে ও কূল কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি ভাবলাম বাস এখানে কেন থামল? ড্রাইভার বলল নদী পার করতে হবে। আমি বললাম তবে দেরি কেন। ও বলল লঞ্চ আসবে ওতেই চড়তে হবে। মনে মনে ভাবলাম বাস আর হয়ত আগে যাবে না। লঞ্চে করেই ওপারে যেতে হবে। আমরা চুপ হয়ে বাসে বসে রইলাম আর একটু পরে দেখি বাস চলতে শুরু করলো।
ভাবলাম একি হলো! বলল যে, লঞ্চে চড়তে হবে তবে বাস আবার কোথায় যাচ্ছে? পরে বুঝতে পারলাম লঞ্চ এসে গেছে লঞ্চ এর ভীতরে বাস চড়বে। বাসেই বসে রইলাম, বাস ধীরে ধীরে লঞ্চে চড়ে গেল। একটু বাস থেকে নেমে দেখি আমরা তো লঞ্চেই চড়ে আছি।
আর জানেন কতগুলো বাস লঞ্চে চড়ানো হল? ৮টা বড় বড় বাস লাইন করে রাখা। তারপর কার বাইক ইত্যাদি। তাহলে চিন্তা করুন কত বড় জাহাজ হতে পারে। প্রকাণ্ড জাহাজ আবার দু'তিন তালা, দু’চোখে না দেখলে অনুভব করা যাবে না। জাহাজ চলতে শুরু করল, ঘুটঘুটে অন্ধকার নীচে জল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সাথে জাহাজের চলার আওয়াজ।
আমাদের বলা হল যে, বাস থেকে নেমে উপর তালায় যেতে। সেখানে ফ্রেশ হওয়ার জায়গা আছে। আর তার উপর তালায় বিরাট কেন্টিন, সেখানে সব কিছু পাওয়া যায়। রাত তখন সাড়ে আটটা বাজে সবাই বললো চলো এখান থেকে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। তাই হলো নাস্তা থেকে শুরু করে ডিনার পর্যন্ত সব পাওয়া যাচ্ছিলো। বিভিন্ন রকমের ননভেজ, যেমন মাছ ভাজা মাছের ঝোল, মুরগির মাংস, পাঁঠার মাংস সব কিছু বিদ্যমান।
আমি একটা ব্রেড জ্যাম কিনে সেটাই খেয়ে নিলাম। কিছু ক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখলাম, ওপারের জ্বলতে থাকা কিছু আলোর রশ্মি জলের উপর পড়ে এমন সুন্দর লাগছিল তাহা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মৃদু মৃদু বাতাস খুব সুখের অনুভুতি হচ্ছিল।
আমরা সবাই নীচে নেমে এসে বাসে বসলাম। পদ্মা নদীর জন্য যশোর, ফরিদপুর আরো অনেক জেলা ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। ওদের একমাত্র রাস্তা এই নদীর উপর চলা জাহাজ, তাহা ছাড়া আমার মনে হয় আর কোনো উপায় নেই। তখন ঘাট প্রায় শুকনো ছিল, তাতেই এই অবস্থা, বরসার দিনে না জানি কি অবস্থা হবে।
আমি মনে মনে চিন্তা করলাম পদ্মা নদীর এই মনোরম দৃশ্য যদি আমার ছেলে মেয়ে ও পত্নীকে দেখাতে পারতাম তাহলে ভালো হতো। ভাবলাম ঠিক আছে পরে আবার সময় হলে অবশ্যই দেখিয়ে দেব। লঞ্চ প্রায় আধা পৌন ঘন্টা পরে ঘাটে লাগলো। বাস ধীরে ধীরে রাস্তায় নেমে এল। আমরা বাসেই বসে রইলাম, আর বাস আবার চলতে শুরু করল গন্তব্যের দিকে। আশেপাশের দৃশ্য আমরা কিছু বুঝতে পারছিলাম না রাতের অন্ধকারে।
আমরা প্রায় রাত সাড়ে বারোটার সময় ঢাকা শহরে পৌঁছে গেলাম। আমাদের কে রিসিভ করতে আব্দুল বারী মহাশয় এবং তার পুত্র ও কন্যা এসে ছিলেন। আমাদের থাকার ব্যবস্থা ঢাকা সরকিট হাউসে সাত তালায় অনেক গুলো রুমে করেছিলেন। ওখানে পৌঁছে আমরা সবাই আগে ফ্রেশ হলাম। ফ্রেশ হওয়ার সাথে সাথেই খাবার ব্যবস্তা করে দিল। রুমে আমরা খুব আনন্দ করলাম। আমার রুম পার্টনার ছিল পলাশ চৌধুরী (মীর সামশুল আলম) ।
আর প্রসিদ্ধ গায়ক শ্রী অরিন্দম রায় চৌধুরী। রাত ভর খুব হাসি ঠাট্টা হল আর একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হলো। ওরা দুজনেই গায়ক। আর আমি কবি ও নাট্যকার। ৩৬ বছর ধরে নাটক করছি তারপরে আবার কবিতা লেখা শুনে অবাক। আমাকে দুজনে খুব ভালো বাসতে লাগলো। বলল, বাহ্! এতোগুলো গুন তার ভীতরে আছে সে নিশ্চয়ই খুব রয়েল হবে। সে আজ আমাদের সামনে। যাই হোক সবাই যে যার বেডে শুয়ে পড়লাম। সকালে ৮ টার সময় উঠে স্নান সেরে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।
প্রথমে একটি হোটেলে আমরা চা নাস্তা করলাম, তারপর বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে নিয়ে গেল বলধা গার্ডেন যেখানে নির্জনে বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ক্যামেলিয়া নামক কবিতা লিখেছিলেন। এত সুন্দর গার্ডেন দেখে মনটা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মিউজিয়াম দেখতে গেলাম যেখানে উনি থাকতেন।
শেখ মুজিবুর রহমান কে তার নিজস্ব বাড়ি ধানমন্ডি ৩৮ নং রোডে পাঁচ জন শত্রু মিলে তাকে খুবই জঘন্য ভাবে গুলিতে ক্ষতবিক্ষত করে ছিল। শেখ হাসিনা ছাড়া আর সবাই কে হত্যা করেছিল। আজও রক্তের ছিটা এবং বন্দুকের গুলির নিশান তার ঘরে দেখা যায়।
ঐ দিনেই আমরা ঢাকার প্রসিদ্ধ মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মায়ের দর্শন করলাম, কেউ কেউ ওখানে পূজার সামগ্রী নিয়ে পূজা ও করল। আমি ও পূজো দিলাম, এবং প্রসাদ ও নিলাম। আমার অনেক দিনের আশা ছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির দর্শন করার তাহা সার্থক হলো। আমি মন্দির থেকে শুকনো পেড়া নিলাম এবং দুই প্যাকেট সিঁদুরও।
আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম পৌছালাম রমনা পার্কে সেখানে সবাই মিলে অনেক ফটো উঠিয়েছি। সেখান থেকে গেলাম হাতিরঝিল দেখার জন্য। ঐ পরিবেশে বিরাট বিরাট গগন চুম্বি ইমারত, পুল ও নানা প্রকার লাইটের ঝলকানি দেখে মন গদ গদ হয়ে গেল। ওখানে আমরা সবাই বোটিং করলাম এবং স্টিমারের ও আনন্দ নিলাম। অবশেষে সবাই মিলে সার্কিট হাউসের জন্য প্রস্থান করলাম। ডিনার প্যাকেট রেডি ছিল যে যার প্যাকেট নিয়ে রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে খাবারের আনন্দ নিলাম। তারপর গল্প সল্প করতে করতে শুয়ে পড়লাম।
ঢাকার প্রসিদ্ধ এক পত্রিকা ইত্তেফাকের সম্পাদক শ্রী আব্দুল বারী মহাশয় সব সময় আমাদের সাথে থাকতেন, সাথে শ্রী সুব্রত বর্ধন ও শিউলি ম্যাডাম ও আমাদের সাথে সর্বদাই ছিলেন। একদিন রাতের ভোজ জনাব আব্দুল বারী তার নিজের আলয়ে করালেন।
পরের দিন তারিখ ২৬-৪-২০১৮ সকাল সাড়ে আটটায় তৈরি হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম প্রথমে নীচে একটা ভালো চায়ের দোকান ছিল সেখানে গিয়ে আমরা তিন জন কাটিং চা খেলাম। ওখান থেকে আবার সবাই মিলে মধুর রেস্তোরাঁতে গিয়ে চা এবং সিঙ্গাড়া খেলাম। শ্রী মধুকর দে একজন স্বাধিনতা সংগ্রামী ছিলেন। পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশ কে স্বাধীন করার জন্য ওনার অনেক অবদান ছিল।
ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা বিখ্যাত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি দেখতে গিয়েছিলাম, তার সমাধি দেখে আমার অনেক দিনের আশা পূরণ হলো। ওনার দর্শন সমাধি রুপে হলো। কাজী নজরুল ইসলাম কে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেওয়ার জন্য একটি কবিতা পাঠ করলাম।
সাড়ে বারোটার সময় ওখান থেকে বেরিয়ে আমরা বাবা লোকনাথ মন্দিরে দর্শন করার জন্য প্রস্থান করলাম। ওখান কার ট্রাস্টি এবং প্রেসিডেন্ট আমাদের কে আত্মীয় স্বাগত করলেন এবং স্পেশাল ভাবে যত্ন করে প্রসাদ খাওয়ালেন।
আমরা ওদের যত্ন দেখে খুব ভাব বিভোর হলাম। প্রসাদ গ্রহণ করে আমরা ওখান থেকে বিদেয় হলাম এবং সার্কিট হাউসে পৌঁছে গেলাম কেননা সাড়ে পাঁচটায় তৈরি হয়ে প্রোগ্রামের জন্য যেতে হবে। একটু আরাম করে তারপর সবাই প্রোগ্রামের জন্য বেরিয়ে পড়লাম।
অডিটরিয়ামে পৌঁছে সাড়ে সাতটার সময় ফকীর মিন্টো হাসান কে শোক সন্দেশ জ্ঞাপন করে প্রায় আটটায় আমাদের কে স্টেজ দিল। আমরা ভারতীয়রা এমন সুন্দর প্রোগ্রাম দিলাম তা দেখে ওখান কার শ্রোতারা আনন্দে বিভোর হয়ে গেল। একের পর এক পারফারমেন্স নাচ গান কবিতা পাঠ ইত্যাদি। লোক মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেল।
প্রোগ্রামের পরে গণমান্য ব্যক্তি দ্বারা আমাদের কে সম্মান করা হল। প্রোগ্রামের পরে আমরা নজরুল একাডেমী থেকে হোটেলের জন্য রওনা হলাম। রাত্রে সবাই কে বিরিয়ানি প্যাকেট দিল (মোরগ বিরিয়ানি) অনেক সুস্বাদু ছিল। আমি খেতে খেতে আমার ছেলেকে ফটো পাঠালাম।
তারিখ ২৭-৪-২০১৯ ন’টার সময় চাঁদপুর জেলার জন্য রওনা হলাম। সেখানে প্রোগ্রামের জন্য যাচ্ছি। আমরা সকাল ৯টার সময় ভি.আই.পি প্রেস ইনস্টিটিউট সার্কিট হাউস পরিত্যাগ করে গাজীপুর, শ্রীপুরের জন্য রওনা হলাম।
আমি বাসে না গিয়ে একটা কারে করে গিয়েছিলাম। কার টা ছিল ঢাকার প্রসিদ্ধ উকিলের নাম ছিল শ্রী সুব্রত বর্ধন, আর ছিলেন ওখানকার একজন সমাজ সেবিকা মিস নসিমা রহমান শিউলি। কারে মাত্র আমরা তিন জন ছিলাম। পুরো রাস্তা উপভোগ করতে করতে গিয়েছিলাম।
আমরা বেলা ২ টার সময় গাজীপুর শ্রীপুরের পথে একটা হোটেলে ভোজন করার জন্য যাচ্ছিলাম কিন্তু পথে একটা ভালো পার্ক ছিল ভাবলাম পার্কটি দেখে যাব কিন্তু কিছু দেশী বিদেশী গোলোযোগের জন্য আমরা পার্কে ঢুকতে পারলাম না।
যাই হোক আমরা ধীরে ধীরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌঁছানোর আগেই একটা হোটেলে নাস্তা করলাম। নাস্তা ছিল তন্দুরি রুটি এবং ডালের তরকারি, তন্দুরি এত ভালো ছিল যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। নাস্তা সেরে আমরা গাজীপুরের শ্রীপুরে পৌঁছে গেলাম। দুপুরে খাবার আমরা বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের আজীবন সদস্য জনাব ফুয়াদ মণ্ডলের বাড়িতে খেলাম। তিনি বড় যত্ন করে আমাদের কে খাওয়ালেন। খুব আনন্দ ও তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলাম।
বিকেলে একটি বিদ্যালয়ে প্রোগ্রামের জন্য যেতে হল, আর সেখানে সবাই খুব মনমোহক প্রোগ্রামে দিলাম। সবাই নাচ, গান কবিতা পাঠ বড় উৎসাহ ভাবে করল। প্রোগ্রামের পরে সবাই কে শাল শ্রী ফল এবং মেমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করা হলো। আমি ওখানে আমার কবিতা- “আমি মৃত কবিতা লিখতে চাই না” পাঠ করে শোনালাম। সবাই খুব পছন্দ করেছিল।
রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ব বঙ্গের আর একজন সদস্য শ্রী আবদুস সালাম রাণার নিজের আলয়ে ভোজনের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল, বাহ! কি সুন্দর ব্যবস্থা, এত সুস্বাদু খাবার, সবাই খুব তৃপ্তি সহকারে খেলাম। বিভিন্ন রকমের ননভেজ ভেজ এবং বিভিন্ন স্বাদের ভোজন, কচুশাক দিয়ে চিংড়ি, ভোজনের পর রাতে একটা গেস্ট হাউসে শোবার ব্যবস্থা হয়েছিল।
তারিখ ২৮-৪-২০১৯ এ সকালে সাড়ে সাতটায় আমরা চাঁদপুরের জন্য রওনা হলাম। আমি মিস শিউলি এবং পলাশ চৌধুরী এডভোকেট সুব্রত বর্ধনের নিজের কারে রওনা হলাম। শ্রীপুর থেকে শিবানী দাস(গায়িকা)ও আমাদের সাথে যোগ হলেন। ঐ তারিখে দুপুরে চাঁদপুরে এক হোটেলে ভোজনের ব্যবস্থা ছিল, মাছ, মাংস আর নানা ধরনের শাক সবজি ইত্যাদি ছিল। আপনাদের কে জানিয়ে দেই, চাঁদপুর ইলিশের রাজধানী। আমরা ওখানে ইলিশ মাছ বড় টেস্ট নিয়ে খেলাম।
২০১৯ সালে জেলা চাঁদপুর বাংলাদেশ অডিটোরিয়াম এ প্রোগ্রাম হল। একটা বিরাট জমজমাট প্রোগ্রাম হল। প্রোগ্রামের পরে সবাই কে স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের দ্বারা আমাদের কে সম্মান করা হল, সম্মানে শাল শ্রী ফল এবং মেমেন্টো দেওয়া হয়।
বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সদস্য শ্রী ইন্দ্রনীল সরকার মহাশয় সঞ্চালক এবং অর্গেনাইজার ছিলেন। তিনি আমাদের কে খুব যত্ন আহ্বান করেন। যদিও চাঁদপুর ইলিশের রাজধানী কিন্তু আমরা বেশি ইলিশ খেতে পারিনি কেননা আমরা যখন ওখানে গিয়েছিলাম তখন সেই সিজেনে তিন মাস ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, সেই সময় মাছে ডিম হয়।
দুপুরে আমাদের একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে (প্রেস ক্লাব) লাঞ্চ করালো। সেখানকার ভোজন খুবই স্বুস্বাদু ছিল। বিকেলে একটা অডিটোরিয়াম প্রোগ্রাম হল। প্রোগ্রামের পরে গণমান্য ব্যক্তি দ্বারা আমাদের কে সম্মান করা হল। রাতের ভোজন একটা হোটেলে করে সবাই শুতে চলে গেলাম। রুম একটা হোটেলে ছিল এবং এয়ার কন্ডিশন ছিল। আমরা খুব মজা করলাম।
তারিখ ২৯-৪-২০১৯, সকালে তৈরি হয়ে ঢাকার জন্য রওনা হলাম। ঐ দিনই বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া তে প্রোগ্রাম করতে হলো। যেতে যেতে রাস্তায় বারুদি গ্রাম নারায়ণ পুর জেলাতে বাবা লোকনাথের সমাধি স্থল এবং মন্দির দর্শন করে ঢাকার জন্য রওনা হলাম। প্রায় চারটায় ঢাকা শহরে পৌঁছে গেলাম। একটা হোটেলে খাবার খেয়ে সবাই শুতে চলে যায়।
তারপরের দিন মানে ৩০-৪-২০১৯ তারিখে মার্কেটিং করার জন্য মার্কেট মৌচাকে গেলাম, মৌচাক ওখান কার প্রসিদ্ধ বাজার, আর এত বিশাল বাজার দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ঐ বাজার থেকে সবার জন্য শাড়ি ও জামা কাপড় নিলাম।
তারিখ ১-৫-২০১৯, বাংলাদেশ শ্রমিক দিবস পালন করা হয়, দেখে মনে হচ্ছিল যেন পুরো বাংলাদেশ একেবারে থেমে গেছে। যে রাস্তায় এ পার থেকে ও পার যাওয়া মুশকিল, ওই রাস্তা একেবারে খালি ছিল। বাজার ঘাট, সব বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ফুটপাতে কিছু দোকান খোলা ছিলো, সেখান থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম। আমার সাথে ছিলেন শ্রী পলাশ চৌধুরী ও অরিন্দম রায় চৌধুরী।
আমি ১-৫-২০১৯ তারিখ রাত ১১ টায় রয়েল বাসে করে ভারতের জন্য রওনা হলাম। সাথে বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সম্পাদক শ্রী রাধাকান্ত সরকার দাদার স্ত্রী আমার সঙ্গে এলেন। অবশ্য আমার হাওড়া থেকে ভিলাই ফেরার টিকিট ছিল ৪-৫-২০১৯ তারিখের। অগত্যা আমাকে গ্রুপ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হলাম। সুতরাং আমি শিড্যুল হিসাবে আর কোনো প্রোগ্রামে ভাগ নিতে পারলাম না।
আমি খুব দুঃখিত ছিলাম যে কুষ্টিয়া জেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদি বাড়ি ও লালন সাঁইয়ের বাড়ি দেখতে পারলাম না বা প্রোগ্রাম করতে পারলাম না। মনের দুঃখে বাসে চড়ে বসলাম, সবাই আমাকে সী অফ করল, অনেকেই কষ্ট পেল। আমার সাথে সবার একটা প্রগাঢ় ভালোবাসা হয়ে গিয়েছিল। বলল, প্রকাশ দা আবার দেখা হবে কোলকাতায়।
আমি বাসে উঠে বসলাম। বাস চলতে শুরু করল। রাত আড়াইটার সময় আবার পদ্মা নদীর উপর দিয়ে পার হলাম। সকাল সাড়ে সাতটার সময় বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছে যাই। সীমান্তের আবশ্যক কার্য বাহী করতে প্রায় তিন ঘন্টা লেগে গেল, কেননা আটটায় বর্ডার খোলে, তার পর ফ্লেগ মার্চ হয়, প্যারেড হয় যার কারণে এই বিলম্ব।
সাড়ে এগারোটার সময় বর্ডার পার হয়ে রয়েল বাসেই কোলকাতা অভিমুখে রওনা হলাম। যশোর রোড থেকে বোনগাঁ, ২৪ পরগনা, তারপর বারাসত হয়ে কোলকাতা পৌছালাম। তারপরের স্টেশন মাণিক তলা রোড বাগ মারীতে এলাম। তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। গেস্ট হাউসে পৌঁছে ফ্রেশ হতে হতে বেলা সাড়ে চারটে হয়ে যায়।
চিত্ত তাড়াতাড়ি আমাকে খাবার এনে দিল। খাবার খেয়ে কিছু ক্ষন আরাম করলাম, তার পর রাতের খাবার মাছ, ভাত ছোট মাছের চচ্চড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ৩-৫-২০১৯ তারিখে আমি আরো সময় পেলাম বড় বাজার ঘোরার, কেননা আগের বার রবিবার হওয়ার কারণে বাজার বন্ধ ছিল তাই এবার বাজারে গিয়ে অনেক কেনাকাটা করলাম। আড়াইটার সময় গেস্ট হাউসে গিয়ে খাবার খেয়ে আরাম করলাম।
বাংলাদেশ ভ্রমণে আমার সাথে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে কবি সাহিত্যিক, লেখক, নর্তকী(নৃত্য শিল্পী) ও গায়ক ছিলেন, তারা হচ্ছেন, শ্রী পলাশ চৌধুরী, শ্রী অরিন্দম রায় চৌধুরী, প্রলয় দত্ত, প্রিয়ঙ্কা দত্ত, শিবানী দাস, প্রলয়ের সাথে ১২ জন নৃত্য শিল্পী ছিলেন, কিন্তু তাদের নাম মনে নেই।
সম্পাদক শ্রী রাধাকান্ত সরকার, গায়িকা দিপ্তী গুহও ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে ছিলেন শ্রী সুব্রত বর্ধন (অ্যাডভোকেট) বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের একজন কিংবদন্তী আইনজীবী, সমাজ সেবিকা মিস নসিমা রহমান শিউলি, শ্রী আবদুস সালাম রাণা, শ্রীমতী উর্জশী দত্ত (নৃত্য শিল্পী ও নাট্যকার) কোলকাতা সিনে জগত, আয়ুশী দত্ত এবং জনাব ফুয়াদ মণ্ডল।
বিশ্ব বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের সৌজন্যে আমার বাংলাদেশ ভ্রমণ সফল হয়েছে। আমি শ্রী রাধাকান্ত সরকার দাদাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমার সাথে যারা গিয়েছিলেন তাদের ভালবাসার জন্য অশেষ ধন্যবাদ রইল।
আমি ৪-৫-২০১৯ তারিখে বিকালে হাওড়ার জন্য রওনা হলাম। বাগমারী থেকে টেক্সী করে সাড়ে আটটা নাগাদ হাওড়া স্টেশন পৌঁছে গেলাম। আমার ট্রেন ছিল রাত ১০ টায়। পরের দিন যথা সময়ে আমি ভিলাই পৌঁছে গেলাম। ভিলাই পৌঁছানোর পর এখানকার সমস্ত সংস্থা আমাকে নানা ভাবে সম্মানিত করে আমার মান বাড়ালো। আমি সবাই কে সম্মানের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।