লাগামহীন সবজির দামের কারণ ও প্রতিকার
দেশের প্রান্তির পর্যায়ে সবজির দাম খুব অল্প হলেও এটি রাজধানীতে হয়ে যান কয়েক গুণ বেশি। এই খাতের অন্যতম একটি সমস্যা হলো মধ্যস্থতাকারীরা। তাদের কারণে মূলত সবজির বাজার হয়ে উঠে লাগামহীন। তবে এটি ছাড়াও সঠিক বণ্টণ, সংরক্ষণ, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি কারণে বেশির ভাগ সময় সবজি বাজার অস্থির হয়।

কৃষিতে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বয়ংসম্পন্ন দেশের নাম হলো বাংলাদেশে। প্রায় সব ধরনের সবজি এই দেশের মাটিতে চাষ হয়। তবে কারণে-অকারণে দেশের সবজি বাজার প্রায় সময় অস্থির থাকে। সর্বশেষ কয়েক বছরে এত বেশি বার নিত্যপণ্য জিনিসের সঙ্গে সবজির দাম বেড়েছে যে, সাধারণ মানুষের এখন সবজি ক্রয় করতেও চিন্তা করতে হয়।
দেশের প্রান্তির পর্যায়ে সবজির দাম খুব অল্প হলেও এটি রাজধানীতে হয়ে যান কয়েক গুণ বেশি। এই খাতের অন্যতম একটি সমস্যা হলো মধ্যস্থতাকারীরা। তাদের কারণে মূলত সবজির বাজার হয়ে উঠে লাগামহীন। তবে এটি ছাড়াও সঠিক বণ্টণ, সংরক্ষণ, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি কারণে বেশির ভাগ সময় সবজি বাজার অস্থির হয়। আজ দেশের পণ্য হলেও সবজি বাজারের লাগামহীনতার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দেশের অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায় বর্তমানে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একটি অতি স্বাভাবিক প্রবণতা। শায়েস্তা খানের আমলের এক টাকায় আট মন চাল এখন কেউ প্রত্যাশা করে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। তবে দাম বৃদ্ধির মাত্রাটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা মঙ্গলজনক।
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের কম। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা অনেক বেশি। মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, তাহলে মূল্যস্ফীতির প্রভাব সহনীয় মাত্রায় থাকে। আমরা অনেক সময়ই বলে থাকি, করোনা-পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বেই পণ্যাদির দাম বেড়েছে, তা ঠিক। তবে ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে করোনাকালে অনেক দেশেই নগদ সহায়তার ব্যবস্থা ছিল। তাই এটি একটি অসম তুলনা।
এতে মানুষ বাজারে গিয়ে বিভিন্ন নিত্যপণ্য ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ১৮টি সবজি বাজার পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, সবজির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৯ শাতংশের বেশি।
বাজার নিয়ন্ত্রণের উপায় সমূহ
এই মাঝখানের ২৫ টাকার ৮০ শতাংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। এটি রোধের জন্য একটা ভালো সিস্টেম করতে হবে যেনো গ্রামের কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে তারা পণ্য বিক্রি করতে পারে এবং একটি সুষ্ঠু মাধ্যমে সেটি শহরের বাজারে গিয়ে বিক্রি হয়। এতে গ্রামের কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে যেমন লাভবান হবেন তেমনি শহরের গ্রাহকরাও স্বস্তিতে থাকবেন।
২. আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। তাই এই কৃষির সফলতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে আধুনিক স্টোরেজ সিস্টেম এবং সুশৃঙ্খল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সংরক্ষণ ব্যবস্থা ভালো না থাকার ফলে আমরা বহু কৃষি পণ্য নষ্ট করে ফেলি। উন্নত বিশ্বে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল বিশ্বেও এখন আর যে বছরের উৎপাদন সেই বছর ভোগ করা হয় না, বরং সুন্দর এবং মানসম্পন্ন স্টোরেজে রেখে দেয়া হয় আগামী বছর বিক্রির জন্য। এছাড়া আধুনিক সময়ে ভালো সংরক্ষণ ব্যবস্থায় যেকোনো পণ্যের স্বাদ ও মান অটুট রাখা যায়।
৩. অন্যদিকে দেশের বড় বড় শহরে সবজি সরবরাহের জন্য কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিতে হবে। যেখান থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে অল্প জায়গায় বেশি সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এছাড়া কৃষি প্রকল্পের জন্য ভালো একটা বরাদ্দ রাখতে হবে যারা সারা বছর কৃষি উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করবে। এটির মাধ্যমে দেশের কৃষি উৎপাদন অনেক বেশি বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যেটির ফলে দেশের সবজি বাজার অনেকটা স্থতিশীল হবে।
৪. বাজার মনিটরিং এর একটা শক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে। এটির নিয়মিত অভিযানের ফলে বাজার স্বল্পমেয়াদী স্থিতিশীল হবে। কিন্তু তাতে দীর্ঘমেয়াদি তেমন কোনো সমাধান পাওয়া যাবে না। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হলে প্রয়োজন একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। ক্ষুদ্র আমদানিকারকের সক্রিয় করে দেশব্যাপী আমদানি অবারিত করার মাধ্যমে এবং সেসঙ্গে দেশের কৃষিপণ্য আধুনিক পদ্ধতিতে স্টোরেজ করার সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল বাজার ব্যাবস্থার প্রবর্তন করলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
পুরো দেশের মধ্যে আইনের সুশাসন থাকলে সব কিছু যেমন ঠিক থাকে তেমন বাজারও ঠিক থাকবে। সেদিক থেকে দেশের অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব ভালো বা স্থিতিশীল না হলে এসব সুপারিশ কোনো কাজে আসবে না। তাই দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকা অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






