ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণ

সার্বিক ভাবে ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি এখন। পরিসংখ্যান দেখলে, ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের মান কমেছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোর দাম কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে, টাকার মান কমেছে ১৫ দশমিক ৯৯।

জুন 18, 2023 - 12:00
জুন 18, 2023 - 00:33
 0
ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণ
ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণ | Image Source: The Daily Star

২০২০ সালে করোনা শুরু হলে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা ভাব শুরু হয়। তবে ১ বছর পরই এই মন্দা ভাব কাটানোর জন্য প্রতিটি দেশ কার্যক্রম শুরু করে। তবে সব দেশের পক্ষে নিজেদের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয় না।


অতিমারির সময় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে প্রায় সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। যাতে আমদানি নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। অন্যদিকে করোনার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার না হতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।


এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে আসে আরেক ধাক্কা। তবে এ সময়  যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি ছিল ভিন্ন- তাদের মূল লক্ষ্য একটাই, আর তা হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাই দেশটির ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জেরোমি পাওয়েল সুদের হার আধা শতাংশ বাড়িয়ে দেন।


এই সিদ্ধান্তে মার্কিন অর্থনীতি আরো বেশি চাঙ্গা হয়ে যায়। সার্বিক ভাবে ডলারের দাম সবচেয়ে বেশি এখন। পরিসংখ্যান দেখলে, ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের মান কমেছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রিটিশ পাউন্ড ও ইউরোর দাম কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে, টাকার মান কমেছে ১৫ দশমিক ৯৯।


আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিনিময়ের মাধ্যম একটা কারেন্সির প্রয়োজন হয়। যেটা বর্তমানে ডলার হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন মধ্যবর্তী মুদ্রা হচ্ছে ডলার। তবে স্বাধীনতার পর থেকে মধ্যবর্তী মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড।


স্বাধীনতার পর টাকার বিপরীতে পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল ১৩ দশমিক ৪৩ টাকা। পরে প্রতিবেশী ভারতের মুদ্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তা নির্ধারণ করা হয় পাউন্ডপ্রতি ১৮ দশমিক ৯৬৭৭ টাকা। তবে ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে তেলসংকট দেখা দিলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। বেড়ে যায় আমদানি মূল্য। এতে টাকার মান কমে যায়।


এ অবস্থায় টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় প্রায় ৫৮ শতাংশ। নতুন বিনিময় হার দাঁড়ায় পাউন্ডপ্রতি ৩০ টাকা। ১৯৮৩ সালে এসে বাংলাদেশ মধ্যবর্তী মুদ্রা হিসেবে পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলারকে বেছে নেয়। এছাড়া বর্তমানে ডলারের অধিপত্য ব্যাপক হওয়ার এটির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।


ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমার কারণ

অর্থনীতির সবচেয়ে কঠিন সত্য হলো- কোনো কিছুর সরবরাহ কমে গেলে বা চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বস্তুটির দাম বাড়বে। ডলারের বেলায়ও এমনটিই প্রযোজ্য। অর্থাৎ, বাংলাদেশ ডলার আয় কম করলেই ডলারের দাম বেড়ে যাবে এবং টাকার দাম পড়ে যাবে। সম্প্রতি ঠিক এমনটিই হয়েছে।


চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টে আমদানি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ, অথচ একই সময়ে রপ্তানি ছিল নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪১২ কোটি ডলারে, অথচ একই সময়ে গত বছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল মাত্র ৬৯ দশমিক ৭ কোটি ডলার।


গত কিছু দিন থেকে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও ছিল নিম্নমুখী। একটি দেশ থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ বিদেশে যায় এবং বিদেশ থেকে যেই পরিমাণ দেশে আসে, তার পার্থক্যই হচ্ছে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ।


বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদে নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ মিলিয়ন ডলার কম। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে আমরা ডলার-সংকটে আছি এবং এই কারণেই টাকার মূল্য কমে গেছে।


তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণের বেশ কিছু পথ রয়েছে। সবচেয়ে কার্যকরী পথ হলো আমাদের দেশের রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ রপ্তানি বৃদ্ধি হলে ডলারের আয় বাড়বে। এতে সামগ্রিক ভাবে দেশের ডলার সংকট কেটে যাবে ও স্থায়ীভাবে অর্থনীতির সমাধান হবে।


অন্যদিকে স্বল্প মেয়াদী পথ হলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে তরল ডলার কেনা। যেটি দিয়ে ডলারের চাহিদা মেটানো যাবে। তবে এই পথে দীর্ঘদিন থাকলে দেশের অর্থনীতি সংকটের মুখে পড়বে। তাই কার্যকরী ও দীর্ঘস্থায়ী পথ বেছে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। যেটির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরো টেকসই হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

আব্দুস সবুর ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।