স্মার্ট বাংলাদেশে ৫ কোটি মানুষের তথ্য চুরি, দায় কার?

দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে গেছে। এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।

জুল 13, 2023 - 23:30
জুল 13, 2023 - 23:43
 0
স্মার্ট বাংলাদেশে ৫ কোটি মানুষের তথ্য চুরি, দায় কার?
স্মার্ট বাংলাদেশে ৫ কোটি মানুষের তথ্য চুরি, দায় কার? | Image by Freepik

বর্তমান দেশের প্রচলিত স্লোগান হলোডিজিটাল বাংলাদেশথেকেস্মার্ট বাংলাদেশেরদিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। তবে এই কথার ভিত্তি কতটা শক্তিশালী বা আমরা কতটা এগিয়ে যেতে পারছি সেটি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এটির মূল কারণ অবশ্য ভিন্ন। সেটি হলো কিছু দিন আগে দেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে গেছে।


এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া এমন ঘটনায় দায় কার বা সাধারণ মানুষের যেসব ক্ষতি হতে পারে সেটি নিয়ে কি পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাতে নতুন কোনো আইনের খড়ক তৈরি না করা হয় সেটির ব্যাপারেও সোচ্চার হতে হবে


ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাগরিকের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল বা আবাসিক ঠিকানা, জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে বর্তমানে অনেক কিছু করা সম্ভব। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তথ্য।


বাংলাদেশের আগের কিছু ঘটনা

২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন। এসময় দেশের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করে সেখানে তাদের আন্দোলনের বার্তা বসিয়ে দেয়া হয়েছিল২০১০ সালে জেলা তথ্য বাতায়নের ওয়েবসাইটগুলো একযোগে হ্যাক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর ২০১৮ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়। সেই বছর বিআরটিএ ওয়েবসাইটও হ্যাক করা হয়েছিল


তবে সবচেয়ে বড় হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করে নেয়া হয়বরাবরই সরকারি ওয়েবসাইটগুলোই হ্যাকারদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ তথ্য ফাঁসের ঘটনাও ঘটছে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে। তবে এসব কোনো ঘটনায় সেসাবে কাউকে শাস্তির মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি


তথ্য ফাঁসে নাগরিকদের ক্ষতি

নাগরিকদের নাম, পরিচয়, ফোন নম্বর খুবই সংবেদনশীল তথ্য। এই তথ্যগুলো এমন জিনিসি যে হারিয়ে গেলে পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। যেমন আমরা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড হারিয়ে গেলে নতুন করে আরেকটা নিয়ে থাকি কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে বা সেটির তথ্য চুরি হয়ে গেলে ত নতুন করে তৈরি করে বানানো সম্ভব নয়


কারণ সেখানে ব্যক্তির নাম, বয়স ও জন্মস্থানের নাম থাকে। এত কিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয় ফলে এসব তথ্য দিয়ে যেকোনো সময় কোনো ব্যক্তিকে ফাঁসানো সম্ভব। কারণ বর্তমানে মানুষের ফোন নম্বর দিয়ে তার গতিবিধি বোঝা যায়। ফোন নম্বর দিয়ে তার ব্যক্তিগত আরো তথ্য যেমন, কার সঙ্গে কথা বলে, কী কথা বলে সব কিচু জানা যায়


যেকোনো মানুষ যদি ওই সব তথ্য পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য ডুপ্লিকেট জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা সহজ হবে যেটি দিয়ে দেশের মধ্যে নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। অন্যদিক আমাদের দেশের ব্যাংক লেনদেনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয় ফলে এটির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বড় ধরনের জালিয়াতি হওয়ার সুযোগ রয়েছে


এছাড়া বর্তমানের নতুন একটি ট্রেন্ড হলো যে কারো ফোন কল ফাঁস করে দেওয়া এটির জন্য দেশের উচ্চ মহল থেকে কাউকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে না এটি সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়


তথ্য ফাঁসের দায় কার?

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম টেকক্রাঞ্চ প্রথম জানায় বাংলাদেশের প্রায় ৫ কোটি মানুষের ব্যক্তিগত প্রচুর তথ্য ফাঁস হয়েছে। তবে এটির জন্য কাউকে এখনো দায়ী করা হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ওই ওয়েব সাইটের দুর্বলতার কারণে নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হয়েছে


এছাড়া তথ্যগুলো খুব হালকা ভাবে ছিলো তাই অনেকে দেখতে পেয়েছে। তবে আসলেই কেউ তথ্যগুলোকে সংরক্ষণ করেছে কিনা সেটি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা নেই


আমাদের করণীয়

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে আসলে ইন্টারনেট মাধ্যমে কোনো কিছুরই শতভাগ গ্যারান্টি নেই। তবে এসব বিষয়ে আরো বেশি সিকিউরিটি যুক্ত করা উচিত সব ক্ষেত্রে। বিশেষ করে সরকারি কিছু ওয়েবসাইট দেখলেই বোঝা যায়, সেগুলোখুবই শক্তিশালী নয়। বিদেশি শক্ত হ্যাকাররা যেকোনো সময় তথ্য চুরি করতে সক্ষম


ফলে আমাদের যে কোনো জায়গায় ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের যে প্রচলন সেটি কমাতে হবে। আর এটির প্রচলন আবার বাড়ানো যেতে পারে সেটি যখন সরকার থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে আপনার সকল তথ্য শতভাগ সংরক্ষিত এবং তথ্য ফাঁস হলে সেটির দায়ভার আমরা নিব।


এছাড়া যেকোনো ভাবে ফাঁস হলে সেটির কারণ
, ক্ষতি ও ভবিষ্যত নিশ্চয়তা সাধারণ মানুষের কাছে দিতে হবে

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

আব্দুস সবুর ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।