এক শান্ত বিকেলে তোমার হাতে হাত রেখে অশান্ত এক প্রশান্ত হৃদয়ে তোমার পাশে হাঁটতে চাই। হাঁটতে হাঁটতে যখন তুমি ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন আমরা একটি নদী পাবো। আমরা নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়াবো। নদীর পাড়ের অনেকটুকু জায়গা সাদা কাশফুলে ছেয়ে গেছে, যেন এক প্রকান্ড কাশবাগান।
আমি আর তুমি কাশবাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে নদীর স্রোত প্রবাহ দেখব, আর আমাদের জীবনের স্রোত স্বপ্ন দেখবো। আমি দাঁড়িয়ে আছি তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে এতক্ষণ হেঁটে যে ক্লান্ত হয়েছো তার থেকে মুক্তি পাচ্ছো।
আমি আমার ডান হাতটি দিয়ে তোমার চুলগুলো বিলি কেটে দিচ্ছি পরম ভালবাসায়। তোমার চুলের ঘ্রাণের মাদকতা আমার নসিকা বেয়ে আমার মস্তিষ্কের হাইপোথালামাসে গিয়ে তার প্রকট উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
আমার হৃদয় জুড়ে তীব্র প্রশান্তি কাজ করছে। আমার হৃদপেশিগুলো তাদের রক্তপাম্প করার গতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে তবুও আমার ব্লাড প্রেসার অপটিমাম রেঞ্জেই রয়েছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে কাশফুল আর নদীর স্রোত প্রবাহ দেখতে দেখতে, আর তোমার প্রেমের প্রবল স্রোতের সৌন্দর্য কল্পনা করতে করতে, আমার স্পর্শের সুখ অনুভব করতে করতে, কখন যেন তোমার চোখ বন্ধ হয়ে গেছে অজান্তেই।
তুমি কি জানো এই বন্ধ কাজল চোখে তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। তোমার চোখের পাতাগুলো তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে তীব্রতার সাথে। তোমার চোখের পাপড়িগুলো গোলাপের পাপড়ির মত সৌন্দর্য প্রকাশে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে।
আমি এক পলকে তোমার এই চোখের দিকে তাকিয়ে হাজারো বিকেল কাটিয়ে দিতে পারব। আমি তাকিয়ে আছি তোমার এই অদ্ভুত সুন্দর মুখের দিকে এক পলকে তোমার এই ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের স্বাদ আস্বাদন করছি।
আঁচ করতে পেরে তুমি চোখ খুলে একটি হাসি দিলে লজ্জাবতীর মত নেতিয়ে গিয়ে, তোমার এই লাজুক হাসিটা আমার ব্লাড প্রেসার মনে হয় এবার সত্যিই বাড়িয়ে দিয়েছে। তুমি কি জানো তুমি যখন আমার দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসিটা হাসো তখন আমার হৃদপেশি গুলো এত দ্রুত রক্তপাম করা শুরু করে যে আমার সারা শরীরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধমনী গুলোর উপরে এতটাই চাপ অনুভূত হয় যেন এখনই ধমনিরাত্র ফেটে রক্ত বদ্ধ সংবহনতন্ত্র থেকে মুক্ত সংবহন তন্ত্রে শিফট করবে।
সত্যিই তোমার এই লাজুক হাসিটার অন্যরকম অদ্ভুত অলৌকিক ক্ষমতা আছে। আমার কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে তুমি প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করছো আর তোমার চুলে বিলি কেটে দেয়া আমার আদর নিচ্ছ, আমার শরীরের বিদঘুটে ঘ্রাণের মাঝেও তুমি এক তীব্র মাতকতা আবিষ্কার করে তা থেকে এক অদ্ভুতুড়ে নেশায় বুধ হয়ে আছো।
এ এক পরম আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, এক চরম ভালোলাগা, এক তীব্র অনুভব, তুমুল সুখ। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নদী পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের পর নদীর পানিতে পা ভেজাতে চাইলে তুমি। আমরা নদীর পাড় বেয়ে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটি জায়গা খুঁজে পেলাম যেখানে নদীর পাড় সুন্দরভাবে ঢালু হয়ে নদীর পানিতে ঠেকেছে এবং ঘন সবুজ ঘাসের চাদরে ছেয়ে গেছে যেন স্রষ্টা আমাদের জন্য এখানে সবুজ মাদুর বিছিয়ে রেখেছে, এখানে বসে খুব ভালোভাবে তোমার পা পানিতে ভিজানো যাবে, তুমি আর আমি ঘাসের মাদুরে বসলাম তুমি তোমার পায়ের পাতা ঢেকে রাখা লাল শাড়িটা কিছুটা উপরে তুললে নদীতে ভেজানোর জন্য।
কি অদ্ভুত সুন্দর তোমার পা, এতদিন তা সুচারু রূপে পরখ করা হয়নি আমার। তোমার পায়ের পাতা যেন খোলশ আবৃত মুক্তার খোলস মুক্ত করলে যেমন ঝিলিক দিয়ে ওঠে তেমনি ঝিলিক দিয়ে উঠলো। তোমার এই শুভ্র পায়ের লম্বা লম্বা আঙ্গুলগুলোর মুগ্ধতা প্রকাশের মতো সাহিত্যিক ভাষা আমার জানা নেই।
তুমি যখন নদীতে পা ভেজালে তখন মনে হল নদীর পানি যেন দীর্ঘ যুগ ধরে অপেক্ষায় ছিল তোমার স্পর্শের। তুমি বোধহয় খেয়াল করনি তোমার স্পর্শ পেয়ে স্রোতস্বিনীর স্রোত বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। আমিও পা ভিজিয়ে রাখলাম স্রোতস্বিনীর পানিতে।
তুমি আর আমি পাশাপাশি বসে, আমাদের পা নদীতে দোল খাচ্ছে আর ওপরের অংশ খোদার বিছানো মাদুরে। আমাদের মাঝখানে কোন বারণ নেই ,এক আঙুল সমান ফাঁকা নেই তোমার আর আমার শরীর মাঝে, তোমার উষ্ণ শরীরের স্পর্শে আমার শীতল শরীর ক্রমশ উষ্ণ হতে লাগলো।
তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে গুন গুনিয়ে গান শোনাচ্ছ আর দুপা দুলাচ্ছো এক পরম সুন্দর দৃশ্য যা উপর থেকে খোদা দেখছেন আর মুচকি মুচকি হাসছেন। আমাদের এই ভালোবাসার দৃশ্য খোদা কে খুশি করে দিয়েছে কারণ তোমার আমার ভালবাসায় কোন অপবিত্রতার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া নেই, আমাদের ভালোবাসা স্বয়ং স্রষ্টা কে খুশি করে দিয়েছে।
যিনি তোমাকে তিনি তাঁর সুনিপুণ হাতে পরম যত্নে ও মমতায় সৃজন করিয়াছেন আমার জন্য, আজকে সেই তুমি আমার কাঁধে মাথা রেখে আমার স্পর্শের সুখ অনুভব করছো আর তোমার কোকিল কন্ঠের গান শোনাচ্ছো আমাকে। তোমাকে স্রষ্টা বানিয়েছে কোনো খুঁত ছাড়া। তোমার এই টকটকে শুভ্র নরম শরীরে তিল পরিমান খুঁত নেই।
তোমার মাথাটা আমার কাঁধ থেকে শিফট করে বুকে রাখলে। আর সাথে সাথে হৃদপেশিগুলো এত দ্রুত রক্ত পাম্প করা শুরু করল যে আমার রক্তের বেগে আমার শরীরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধমনী গুলোর গাত্রদাহ শুরু হলো, এবং ধমনী গাত্র ফেটে রক্ত বদ্ধসংবহনতন্ত্র থেকে মুক্ত সংবহন তন্ত্রে রূপ নিল।
আর আমি মানুষ থেকে মৎসরাজে রূপান্তরিত হয়ে গেলাম আর ঝাঁপিয়ে পড়লাম স্রোতস্বীনির উলঙ্গ বুকে। অপেক্ষায় রইলাম তোমার, কখন তুমি জলপরী হয়ে তটিনির বুকে আসবে? অপেক্ষায় রইলাম। অপেক্ষা…
আরো পড়ুনঃ কবিতা: সবই হরমোনের খেলা