বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা ও মুক্তির পথ
করোনার পর থেকে নানা কারণে এই আত্মহননের পথ বেশি বেছে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সম্পর্ক বিচ্ছেদ, মানসিক অশান্তি, পারিবারিক ঝামেলাসহ নানা কারণে তারা এ পথ বেছে নিয়েছে। তবে পৃথিবীর সব ধর্মে এবং নৈতিকতায় আত্মহত্যার পক্ষের কোনো আলাপ নেই।

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভর্তি পরীক্ষা নামক মহাযুদ্ধ জয় করতে হয় তাদের। তবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তির পরও অনেকে আত্মহত্যা করছে।
করোনা মহামারীর পর থেকে নানা কারণে এই আত্মহননের পথ বেশি বেছে নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সম্পর্ক বিচ্ছেদ, মানসিক অশান্তির, পারিবারিক ঝামেলাসহ নানা কারণে তারা এ পথ বেছে নিয়েছে। তবে পৃথিবীর সব ধর্মে এবং নৈতিকতায় আত্মহত্যার পক্ষের কোনো আলাপ নেই। তাহলে মানুষ কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?
আত্মহত্যা নির্মূল বা কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে কোনো ভাবেই আত্মহত্যার হার কোনো ভাবেই কমানো যাচ্ছে না বরং প্রতিনিয়ত এ হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এই সমীক্ষার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর আগের সালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর আগে ২০১৮ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন। আর ২০১২ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটে মোটে একটি।
আত্মহত্যার কারণ অনুষন্ধান করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্পর্কের অবনতি। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের অবনতির কারণে করেছে। এরপর রয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে, যা ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পড়াশোনা সংক্রান্ত সহ আরো ছোট ছোট বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক এক সংস্থার গবেষণা বলছে, বিশ্বে বর্তমানে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আত্মহত্যা’। মানসিক দুশ্চিন্তাই আত্মহত্যার একমাত্র কারণ নয়। এর পেছনে কাজ করে অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জীবন ধারণের অবনতির আশঙ্কা।
সর্বশেষ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর লাশ নিজ কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সহপাঠীদের দাবি, একাডেমিকসহ কিছু ব্যক্তিগত কারণে তারা এ পথ বেছে নিয়েছেন। তবে কারণ যাই হোক না কেন, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তথা তরুণ সমাজ জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। তারাই আগামী দিনে রাষ্ট্রের হাল ধরবেন। তাই তাদের মানসিক সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার জন্য তাদের পর্যাপ্ত অনুপ্রেরণা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
যেমন: জীবনের অন্যতম একটি অংশ হলো ব্যর্থতা এটি পরিস্থিতির কারণে সবার জীবনেই আসে। এটি মেনে নেওয়া ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়া হলো সাহসীদের কাজ।
আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে হলে নীতিনির্ধারকদের প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে আরও বেশি করে সমন্বিত প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি ও কর্ম নিশ্চয়তা প্রদান। ক্রমবর্ধমান অসমতা দূরীকরণ ও সেই সাথে দরকার সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা এবং আত্মকর্মসংস্থান তৈরি, কমিউনিটি ও পরিবারের সহায়তায় হতাশামুক্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করতে এখনই সবার এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দৃঢ়করণে একজন করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলর নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবমুখী কিছু জ্ঞান যেমন— আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি আত্মহত্যা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া কি?






