বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকট, পরিত্রাণের পথ

ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার পড়েছে বিপাকে। নিয়মিত কয়লা আমদানি করতে প্রচুর ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে কয়লাভিত্তিক বড় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন নিয়ে আবারও টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। কয়লার অভাবে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।

মে 16, 2023 - 15:00
মে 16, 2023 - 00:30
 0
বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকট, পরিত্রাণের পথ
বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকট, পরিত্রাণের পথ | Image by evening_tao on Freepik

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বে পড়েছে। পৃথিবী ব্যাপি জ্বালানি তেল ও ডলারের দাম বৃদ্ধি হয়েছে কয়েকগুণ। যেটির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে আমদানি নির্ভর সব দেশে। বাংলাদেশের মতো দেশে বিশাল অংকের জ্বালানি যেমন আমদানি করতে হয় তেমনি সেটির মূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলার দিয়ে। এটির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ খাতে।


ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার পড়েছে বিপাকে। নিয়মিত কয়লা আমদানি করতে প্রচুর ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে কয়লাভিত্তিক বড় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন নিয়ে আবারও টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। কয়লার অভাবে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।


ডলার না পেলে উৎপাদন বন্ধ হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রায়ও। এতে আবার বেড়েছে দেশজুড়ে লোডশেডিং। কয়লা আমদানির পরিস্থিতি ঠিক না হলে দেশে ভয়াবহ মাত্রার লোডশেডিং বাড়তে পারে। এটির ফলে জনজীবনে যেমন প্রভাব ফেলবে তেমনি ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেটি সার্বিক ভাবে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।


তাই সার্বিক বিষয় চিন্তা করে দ্রুত কয়লার সরবরাহ ঠিক করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।



পায়রা
 বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থা

চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এপ্রিল মাসে বন্ধ হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আর গত সপ্তাহে থেকে বন্ধ হয়েছে কয়লার অভাবে। দেশে পর্যাপ্ত ডলার না থাকার ফলে কয়লার দাম ঠিক মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।


রামপালের উৎপাদন বন্ধ

রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও বেশি কয়লা মজুত নেই। কয়লার সংকটের কারণে গত ২৩শে এপ্রিল থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সংকটের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছিল। একটি ইউনিট চালু রাখার জন্য প্রতিদিন পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। কয়লার সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুটি ইউনিট চালু করা সম্ভব নয়।


কয়লা সংকটের নেপথ্য

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য প্রতিদিন ১১ হাজার টনের বেশি কয়লার প্রয়োজন হয়। যেটি দিয়ে ১৩ হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কেন্দ্রটি। তবে আর এক সপ্তাহের বেশি চলার মতো কয়লা মজুত রয়েছে সেখানে।


আর কয়লা আমদানির জন্য চুক্তি হয় ছয় মাসের কিন্তু সেটিও সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন জানুয়ারিতে যে কয়লার পেমেন্ট তারা করেছে সেটা জুলাইয়ে আমার পেমেন্ট করার কথা কিন্তু সেটা করতে পারছি না। ফলে হিসেবে এক ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছে।


বকেয়া বিল পরিশোধ না হওয়ার ফলে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন বা সিএমসি আর টাকা দেবে না। আর সেটা না হলে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও কয়লা সরবরাহ করছে না। ফরেন কারেন্সির ঘাটতির কারণে বকেয়া পরিশোধের ঝামেলা শুরু হয়েছে।


পরিত্রাণের পথ

বর্তমানে দেশে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটি দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়। যে দেশের মধ্যে অনেক কয়লা খনিতে আছে কিন্তু উত্তলনের অভাবে আমদানি নির্ভর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হয়। এটির যে পরিতাপের কিছু নেই।


তবে বর্তমান সরকারের উচিত রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সব দলের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা। যাতে নতুন করে কয়লা, গ্যাস ও তেল অনুষন্ধান করবে একটি দল এবং তারা জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে। এই প্রক্রিয়া ছাড়া আসলে কোনো পথ খোলা নেই। কারণ আমদানি নির্ভর ব্যবস্থায় সব কিছুর মূল বৃদ্ধি হওয়ায় যেমন আমদানি ব্যয় বেড়েছে তেমনি রপ্তানী পণ্যও কমে গেছে। মোটের ওপর ডলার সংকট দেশের জাতীয় সমস্যা তৈরি করেছে।


এটি সমাধানের জন্য সবার এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। যত দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে ততই আমাদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

আব্দুস সবুর ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।