মানবসম্পর্কের ওপর সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকের প্রভাব

ফেসবুক কে সাধারণত মানা হয় ব্যক্তিগত প্রমোশনের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। এখানে আপনি নিজেকে বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। বলতে গেলে নিজেকে পারফেক্ট রুপে উপস্থাপন করতে পারবেন।

সেপ্টেম্বর 27, 2022 - 00:00
সেপ্টেম্বর 27, 2022 - 01:24
 0
মানবসম্পর্কের ওপর সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকের প্রভাব
মানবসম্পর্কের ওপর সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুকের প্রভাব


বাস্তব জীবনে এত সময় থাকে না
। বিশেষ করে নিজের শব্দচয়নের ব্যাপারে সতর্ক থাকার। কিন্তু এখানে সময় নিয়ে আপনি একদম সঠিক বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারবেন ঠিক যেমনটি করে আপনি চান। এখানে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে।


এখানে আছে ফ্রিডম অব স্পিচ। আবার একজন ফেসবুকখোর ফেসবুকিং করতে করতে ভুলে যায় যে, তার পাশে একজন মানুষ আছে কথা বলার জন্য। সুতরাং একদিকে যেমন আমাদের কল্পনার পৃথিবী তৈরি হচ্ছে, বড় হচ্ছে আবার অন্যদিকে একটি দেয়াল তৈরি হচ্ছে বাস্তবতার সাথে।


ব্যক্তিগত জীবনে ঋত্বিক রোশান (বলিউড অভিনেতা) না হতে পেরেছেন তো কি হয়েছে! বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন/সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনাকে সে সুযোগটাও করে দিচ্ছে বর্তমানের টেকনোলজি।


এজন্যই ফেসবুকের আপনার প্রেমিকা ক্যাটরিনা কাইফ
(বলিউড অভিনেত্রী) কে বাস্তব জীবনে জরিনার মত দেখে বড়সড় শক্ খেয়ে অনেকেরই আধমরা হয়ে পরে থাকার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।


একটু অন্যভাবে চিন্তা করুন, ফেসবুক কিন্তু আবার ব্যক্তি
-বিশেষের মতামতের একটা বিশাল বড় জায়গা করে দিচ্ছে অন্যদিকে ফেসবুক আবার সেই ব্যক্তিটিকেই উপরে তুলে দিচ্ছে যার সোশ্যাল স্ট্যাটাস বেশি।


মানে দিনশেষে রাজার ছেলে রাজা এবং প্রজার ছেলে প্রজা-ই থেকে যাচ্ছে। যার চেক ইন ফরেইন কান্ট্রিতে, বড় বড় শহরে, বড় বড় রেস্তোরাঁয়, বড় বড় ইভেন্টে তার প্রোফাইল/আইডিতে লাইক কমেন্টস্ এবং ফলোয়ারও বেড়ে যাচ্ছে ঠিক সেই অনুযায়ী।


এখানে আপনি যেমন খুঁজে পাবেন বড় বড় মানুষদের খুব সহজে ঠিক তেমনি কিছু অদ্ভূত মানুষ আপনার আইডিতে প্রবেশ করে আপনার মাথাটা খেতে পারে।


এবার আসা যাক, আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে। আজকাল অধিকাংশ প্রেম হচ্ছে সোশ্যাল ওয়ার্ল্ডে তথা ফেসবুকে। মেয়েদের ইনবক্স কখনো কি ঘেঁটে দেখেছেন? ম্যাসেজে জর্জরিত সদ্য ফেসবুকের বাসিন্দা ভাবে আমি কাকে এক্সেপ্ট করবো? কার সাথে কথা বাড়াবো?


অনেক সময় সে মেয়েটা বেছে নেয় “এ টু জেড” ফর্মূলা। গণহারে ম্যাসেজ পাচ্ছেন আর সময় পেলে সবাইকে একই কথা বলে বেড়াচ্ছেন। একটা সম্পর্কের জায়গায় একই সাথে সম্পর্ক করছে ডজন খানেক।


কারণ এতগুলো সম্পর্ক মেইনটেইন করাও খুব সহজ ফেসবুকে। কিন্তু ছেলেদের আইডিতে সবসময় এমনটা নাও ঘটতে পারে। তাদের হাতে অপশন কম থাকায় তারাও ডজন খানেক না হলেও গণ্ডাখানেক তো করছে।


আমি জানি আপনি এখন একটা প্রশ্ন করার জন্য উঠেপড়ে লাগবেন যে, তাহলে বাকি মেয়েরা কাদের হাতে? উত্তরটা খুব সহজ। বাকিগুলো নির্দিষ্ট কিছু ছেলেদের হাতে। হয়তো মেয়েরা ভাবছে আমরা জিতে গেছি, হয়তো ছেলেরা ভাবছে ফেসবুকে ডিনার করতে পয়সাও লাগছেনা।


কিন্তু দিনশেষে ঠকছে উভয় দলই। বাড়ছে নোংরামী। আজ ব্রেক-আপ হলে আগামীকাল অন্য কারো সাথে “ইন রিলেশনশীপ” দেয়া হয়ে যায়। এভাবে কতবার যে এই স্ট্যাটাস পরিবর্তন হতে থাকে তার হিসেব নেই।


কিন্তু আমরা নীচে নামছি ফর শিউর।
কারণ, চ্যাট সেক্সে বা ফোন সেক্সে আমরা যা বলি তা আর কতজনকে বলবো? ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার সত্যিকার স্বাদও। যে শব্দ শুনলে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসতো এখন সে শব্দ শুনলে খুব বেশি পরিচিত এবং একঘেয়েমী লাগে।


ফলে একরকম নাটক আমরা ঘটতে দিচ্ছি এবং ফেঁসে যাচ্ছি এই নেভার ইন্ডিং লুপে।
কিন্তু আবার এই ফেসবুক না থাকলে অনেক সুন্দর সুন্দর সম্পর্ক আজ হতে দেখতাম না। সত্যিকার মানুষকে ফেসবুকে খুঁজে পেয়েছেন এমন ঘটনাও বিরল নয়। এজন্যই হয়তো ফেসবুক ডেটিং অপশন খুলতে যাচ্ছে।


এবার আসা যাক আইডি নিয়ে কিছু গল্পকথা। গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে ফেসবুক পাসওয়ার্ডও আজকাল দিয়ে রাখে। এবং বয়ফ্রেন্ডও তার পাসওয়ার্ড দেয় তার গার্লফ্রেন্ডকে। কি লয়্যালটি! কিন্তু এতে করে ব্যক্তিস্বাধীনতা যে কতখানি হরণ হচ্ছে সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই কারো।


কারণ ঐ একটা মানুষ ছাড়াও প্রতিদিন আপনাকে অনেক মানুষদের সাথে ডিল করতে হয়। এখন কে কি বললো আপনাকে তা ঘরে বসে দেখবেন আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড। তবে এতে সম্পর্ক জটিলতায় রুপ নিচ্ছে।


আবার আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শর্ট-টেম্পায়ারড্।
বন্ধুর সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে কি না হয়েছে তাকে সোজা ব্লকলিস্টে দিতে আমরা একটুও সময় নেই না।


পরে কেউ কেউ আবার ক্ষমা চেয়ে নেয় আর কারো কারো বন্ধুত্বটা আর আগের ট্রাকে ফিরে আসে না। একদম হারিয়ে যায় পাঁচ বছর কি দশ বছরের মিষ্টি বন্ধুত্বটা। পরে আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো রাস্তা থাকে না।


“একসময় যার সাথে ফেসবুকে চ্যাটিং না করে দিন কাটত না কিন্তু আজ সে ব্লকলিস্টের সবার উপরে।”


এই উক্তি দিয়েই আমি এই লেখালেখিটা শেষ করতে যাচ্ছি। যাইহোক, আপনি আমার ফেসবুক বন্ধু তালিকায় রয়েছেন তো? কারণ, আজকাল মানা হয় ফেসবুকে যে নেই, সে বাস্তব জীবনেও নেই।


আর আমরা স্বপ্নকে বেশি পছন্দ করি, কারণ স্বপ্নগুলো মিথ্যে। ভালো থাকুক ফেসবুক, বেঁচে থাকুক আজীবন।


আরো পড়ুনঃ টক্সিক মানুষগুলোকে ছাড়ুন, পরিবারের সদস্য হলেও

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মোঃ মেহেদি হাসান আমি মোঃ মেহেদি হাসান। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ (সাহিত্য) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। আমি একজন লেখক, অভিনেতা ও ব্লগার। এছাড়াও এই ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আপনি চাইলে আপনার লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। আমার ই-মেইল: admin@backspace-journal.com এ। আমার প্রথম প্রকাশিত বই ছোট গল্প সংকলন ‘জোনাকিরা সব ঘুমিয়ে গেছে’ প্রকাশিত হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ভারতে। বইটি বাংলাদেশে ২০২১ সালের ১ম ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পায়। এই বইটি আপনি ‘রকমারি ডট কম’ এ পাবেন। লিংক: https://www.rokomari.com/book/252418/jonakira-sab-ghumiye-gechhe