মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

অনেকে বলছে চীনা বলয় থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগ করছে আবার এটিকে অনেকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন না। আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দেশের কেমন ক্ষতি হতে পারে এবং বর্তমানে আমাদের করণীয় কি সেটি আজকের আলোচনার বিষয়। 

মে 29, 2023 - 18:00
মে 29, 2023 - 00:00
 0
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ | Image Source: businesshour24.com

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কিছু দিন আগে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) এর ওপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার নতুন করে বেশ কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তাকে ভিসা দেবে না বলে পরিষ্কার ভাবে জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।


আসলে হুট করে এমন নিষেধাজ্ঞার কারণ কি বা কেনো তারা দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনে হঠাৎ এত তৎপতা দেখাচ্ছে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকে বলছে চীনা বলয় থেকে সরে আসতে চাপ প্রয়োগ করছে আবার এটিকে অনেকে মূল কারণ হিসেবে দেখছেন না। আসলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় দেশের কেমন ক্ষতি হতে পারে এবং বর্তমানে আমাদের করণীয় কি সেটি আজকের আলোচনার বিষয়।


শুরুতে আলোচনা করা যাক আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মূল ভিসা পাবার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বা নতুন শর্ত আরোপ করেছে। সেটি হলো- আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো রকম অনিয়ম করলে জড়িত যেকোনো ব্যক্তি ও তার পরিবারকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।


এই নীতি অনুসারে ভূয়া ভোট প্রদান, ভোটার ও নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা দান, নির্বাচনী সমাবেশে হামলা, গায়েবি মামলা প্রদান, নির্বাচনে অনিয়ম ও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এসব কাজে জড়িত থাকলে সরকারের সব পর্যায়ের ব্যক্তিরা (যেমন: মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী) এবং বিরোধী দলেরও যে কেউ এই ভিসা নীতির তোপে পড়তে পারেন।


বাংলাদেশের ক্ষতি

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পোষাক শিল্প রফতানির বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। আর ভিসা নিষেধাজ্ঞার ফলে এই ব্যবসায় ধস নামার সম্ভবনা রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রত্যাখান হওয়ার ফলে তার মিত্র দেশগুলো আর আগের মতো সহজে ভিসা দিবে না। যেটির সামগ্রিক প্রভাব দেশের ব্যবসা, চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে পড়বে। অনেকে অনেক কাজে আর আমেরিকার মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলোর ভিসা পাবে না। এতে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাপ বাড়বে। সব মিলিয়ে তাদের নতুন ভিসা বাংলাদেশের পুরো অর্থনৈতিক জায়গায় ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।


তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে এই নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। আইনের এই ধারার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে। এটির জন্য আলাদা করে বলার কিছু নেই। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের প্রতি এমন নতুন ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছে।


চলতি বছরের ১৫ মে নাইজেরিয়ার নির্বাচনের ব্যাপারে এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে উগান্ডার নির্বাচনের পরে ওই দেশের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই একই ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ব্যাপারের নীতিতে অভূতপূর্ব মনে করার কারণ নেই।


নাইজেরিয়া ও উগান্ডার ক্ষেত্রে নির্বাচন হওয়ার পরে এসব দেশের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নীতি ঘোষণা করা হলো সম্ভাব্য নির্বাচনের অন্তত সাত মাস আগে। যার অর্থ হচ্ছে এই যে নির্বাচনের আগেই যদি কোনো পক্ষ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে, তবে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই ব্যবস্থা নিতে দ্বিধান্বিত হবে না। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মিলার বলেন, এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি ‘সিগন্যাল’ যে আমরা কেবল অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা সমর্থন করব।


নতুন নীতির কারণ

মূলত বাংলাদেশে বর্তমানে চীনা অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে। অন্যতিকে ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশে বেশ দারুণ সময় যাচ্ছে। ইন্দো-প্যাসেফিক রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। তাই যেকোনো ভাবে নিজেদের একটা প্রভাব থাকা প্রয়োজন এখানে সেটি বজায় রাখতে বাইডেন প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।


আমাদের করণীয়

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির ব্যাপার সমালোচনার জায়গা থাকলেও দেশের স্বার্থে সবার আগে আবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এটির কোনো বিকল্প নেই। আর দেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এটি অনুসারে কাজ করতে হবে। তাহলে দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কেটে যাবে। দেশের সকলের মঙ্গল হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

আব্দুস সবুর ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানার চেষ্টায় রয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও ভাবনাগুলো লিখতে ভালোবাসি।