অভিবাসন প্রত্যাসী উসমানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

আজকে আমরা আপনাদের জানাবো অভিবাসন প্রত্যাসী উসমানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। যিনি মুলত লিবিয়া থেকে সমুদ্র পথে ইতালির উদ্দেশ্য যাচ্ছিল। ট্রলার ডুবির ঘটনায় অনেকে মারা গেলে ও বেঁচে যায় উসমান। এই ব্যাপারে জানতে পোস্ট টি পড়ুন।

অগাস্ট 4, 2023 - 12:00
অগাস্ট 4, 2023 - 15:31
 0
অভিবাসন প্রত্যাসী উসমানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
অভিবাসন প্রত্যাসী উসমানের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

গত জুন মাসে একটি মাছ ধরা ট্রলার ভূমধ্যসাগরের গ্রিস উপকূলের কাছাকাছি ডুবে যায়। মূলত লিবিয়া থেকে প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি অভিমুখে যাচ্ছিল ট্রলারটি। সেই ট্রলারটিতে কয়েকশ অভিবাসন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনের মতো অভিবাসন প্রত্যাশী নিখোঁজ হোন। ভাগ্যক্রমে যারা এখানে বেঁচে যান তাদের মধ্যে ছিলেন ওসমান সিদ্দিকী একজন। তার বয়স ২৭ বছর বলে জানান তিনি। ওসমানের বক্তব্যে মূলত ফুটে উঠেছে সেই মর্মান্তিক ট্রলার ডুবির ঘটনা যেখানে শত শত প্রাণ মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে বলে জানান তিনি।”


উসমানের ব্যাক্তি পরিচয়

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরাট শহরে উসমানের বাড়ি। মা-বাবা স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে উসমানের পরিবার গঠিত। পেশাগত দিক দিয়ে উসমান একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। এই পেশা থেকে তিনি যা আয় করতেন তা দিয়ে মূলত তার সংসার চলত না


তাই তিনি লিবিয়ার পাড়ি জমান ভাগ্য ফেরানোর লক্ষ্যে। এবং লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার জন্য সে ট্রলারে উঠে ওসমান। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ট্রলারটি ডুবে যায় এবং সেখানে অনেক প্রাণহানি ঘটলেও এ পরিস্থিতি থেকে কিভাবে তিনি উদ্ধার হোন সেই ঘটনায় তিনি বর্ণনা দেন ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান কে।


উসমানের বক্তব্য 

ওসমান জানাই ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার প্রায় পাঁচ ছয় ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মী দল সেখানে উপস্থিত হয় এবং তাদের উদ্ধার করে। তিনি জানাই সেই সময় তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। পরনে কোনো জামা কাপড় ছিল না যখন নৌকাটি ডুবে যাচ্ছিল তখন পিছন থেকে তার কেউ একজন প্যান্ট টেনে ধরেছিল এ অবস্থায় তিনি প্যান্ট খুলে দেন এবং গভীর সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। ট্রলারে তার পাশে ছিলেন তার এক বন্ধু। তিনি জানান তার সেই বন্ধু থেকে বের হতে পারেনি। তিনি ট্রলারের রাস্তা জানতেন এবং সেই বিপদের সময় তার মাথা ঠিকঠাক কাজ করেছিল বলেই তিনি মূলত ট্রলার থেকে বের হতে পেরেছেন। অপর দিকে তিনি ভাগ্যবান ছিলেন সেজন্যই হয়তো তিনি এখনো বেঁচে আছেন বলে জানান তিনি।”


ট্রলারটি থেকে যখন উসমান পানিতে ঝাঁপ দেন তখন তিনি সেখানে একটি লাইফ জ্যাকেট ভাসতে দেখেন এবং সেটি আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। লাইফ জ্যাকেটটি কাছে নেওয়ার পর তিনি সেখানে একটি শিশুর মরদেহ দেখতে পান। এরপর তিনি মৃত্যুর জন্য সময় গণনা করতে থাকেন। নিজেদের নৌযান থেকে তাদের ভাসা অবস্থায় দেখলেও তারা তাদের উদ্ধার করতে আসেননি বলে জানান তিনি।”


কিন্তু নৌযানটিকে দেখার পর তিনি তিনি সেটার দিকে সাথে যাওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু ঢেউয়ের বিরুদ্ধে কোনভাবে পেরে উঠছিলেন না তিনি। একসময় তিনি একটি কাঠের টুকরা পান এবং সেটি ধরেই তিনি ভেসে থাকেন এবং নিজের জীবন বাঁচান। এরপর যখন সন্ধ্যা নেমে আসে ঠিক সেই সময় ২ টি স্পিডবোট আসে এবং তাদের উদ্ধার করেন


এরপর তাদের স্পিডবোট থেকে একটি বড় জাহাজে তোলা হয় বলে তিনি জানান। তাদের নিয়ে সেই জাহাজটি গ্রিস এর উদ্দেশ্য রওনা দেয় এবং গ্রিসে তাদের যেতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টা। গ্রিসে যাওয়ার পর তিনি সেখানে দুইদিন একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর তিনি জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এর সহায়তায় নিজের দেশে ফেরত আসে


উসমানের বেঁচে থাকাটা উসমানের কাছে অনেকটাই কল্পনার মত মনে হয়। উসমান বলেন ' আমি আসলে বেঁচে থাকার আশা একদম ছেড়ে দিয়েছিল। ছয় দিন কিছু খেতে পাইনি। জাহাজে ওঠার আগে কিছু খাবার কিনলেও ওজন বেশি হবে বলে জাহাজ কর্তৃপক্ষ আমাকে সে সকল খাবার নিতে দেয়নি। সাথে শুধু বাড়তি এক সেট পোশাক ছিল।


কিন্তু উসমান জানান ট্রলার কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে ১০০ ডলার করে নিয়েছিল খাবার ও লাইফ জ্যাকেট বাবদ। কিন্তু আদৌ কিছুই খেতে দেয়া হয়নি তাদের বলে জানান উসমান। উপরতলায় যে সকল লোকেরা ছিল তাদের একটু খাবার পানি দেওয়া হলেও উসমানের মত যারা নিচতলায় ছিল তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি বলে জানাই উসমান।”


মূলত পরিবারের কথা চিন্তা করে উসমান প্রত্যাবাসনের উদ্দেশ্যে সেটা ট্রলারটিতে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি বলেন তার শহরের অনেকেই ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছিল এবং তারা তাদের পরিবারের জন্য টাকা পাঠাচ্ছিলাম। সেটি দেখেই মূলত পরিবারের কথা চিন্তা করে অসুস্থ বাবা মা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং স্ত্রী ও সন্তানের কথা ভেবে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান তিনি


পরিবারের ভাগ্য বদলানোর উদ্দেশ্যেই তিনি মূলত এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিনি জানান তার বাবা অনেক বয়স্ক একজন মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো কাজ করেন। তাই তার বাবাকে বিশ্রাম দিয়ে তিনি সংসারের হাল ধারার উদ্দেশ্যে মূলত ইউরোপে পারি জমাতে চেয়েছিলেন।”  অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকাডুবির ঘটনা প্রায় ঘটছে এ নিয়ে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও এটা বন্ধ হবে বলে মনে করেন না উসমান। 


তিনি বলেন তার পরিচিত কয়েকজন লিবিয়াতে রয়েছেন যারা তাকে জানিয়েছেন গ্রিসে এই নৌকাডুবির পর দালালেরা এখন কয়েকদিনের জন্য অবৈধ পথে লোক পাঠানো বন্ধ রেখেছে। কিন্তু এই বন্ধ বেশি দিন থাকবে না বলে জানান তিনি। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ হয়তো এটি বন্ধ থাকলেও আবার এটি চালু হবে বলে জানান তিনি।”


উসমান আরা জানাই প্রায় বিশ হাজার পাকিস্তানি লিবিয়াতে রয়েছে যারা ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দিন গুনছে। তাদের মধ্যে ছয় জন উসমানের বন্ধুও রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি দুই মাস লিবিয়াতে থাকাকালীন সময়ে মোট ১১ টি ট্রলার লিবিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছেছে বলে তিনি জানান।” 

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মো: বুলবুল আহমেদ ছাত্র আজিজুল হক কলেজ