জন্ম সনদ কি? জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা কি?

একটি শিশু জন্মের পর ৪৫ দিনের মতো মধ্যে তাকে জন্ম পরিচয় ও জাতীয়তা নিশ্চিত করার যে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং যে সনদ প্রদান করা হয় সেটাই তার দেশের নাগরিক হওয়ার প্রথম ধাপ। এই সনদ কে জন্ম সনদ বলা হয়। আজকের আলোচনা জন্ম সনদ কি? এবং এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

মে 24, 2023 - 16:00
মে 24, 2023 - 13:07
 0
জন্ম সনদ কি? জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা কি?
জন্ম সনদ কি? জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা কি?

জন্ম সনদ কি?

বাংলাদেশে আলাদা ভাবে একটি নাগরিক কে তার নাগরিকত্ব প্রমাণ এর জন্য কয়েক ধরনের সনদ প্রদান করা হয়। কিন্তু জন্মের পর আপনার প্রাথমিক ভাবে নাগরিকত্ব পরিচয় বহন  করে জন্ম সনদ। আপনি যে বাংলাদেশে জন্মেছেন আর আপনি এই দেশের একজন নাগরিক সেটার বড় প্রমাণ হলো জন্ম সনদ


একটি দেশের নাগরিক কে সকল প্রকার সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই সে দেশের নাগরিক হতে হবে আপনাকে আর জাতীয় পরিচয় পত্র হাতে পাওয়ার আগে এই সব সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনার কাছে থাকতে হবে সে দেশের জন্ম সনদ।


জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা এবং কি কি কাজে লাগতে পারে জন্ম সনদ?

জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জন্ম সনদ অর্জন করা হলো প্রতিটি মানুষের অধিকার। একটি জন্ম সনদ ই দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের নিশ্চয়তা প্রদান করে একটি শিশু কে। একটি রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার নিজেকে নাগরিক হিসেবে মর্যাদা প্রদান করতে জন্ম সনদ এর প্রয়োজনীয়তা অত্যবশ্যকএকটি জন্ম সনদ আপনার কি কি কাজে লাগতে পারে তা নিম্নে দেওয়া হলো,


১. আপনার শিশু কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর সময় প্রয়োজন হবে জন্ম সনদের।

২. জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা আপনার ভোটার নিবন্ধনের সময় প্রয়োজন পড়বে জন্ম সনদের।

৩. অন্য দেশ ভ্রমণ করার জন্য আপনার পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট তৈরি করতে জন্ম সনদ লাগবে।

৪. আপনি ড্রাইভিং করতে চাইলে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করতে লাগবে জন্ম সনদ

৫. বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে প্রয়োজন পবে জন্ম সনদের।

৬. সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন হবে জন্ম সনদের।

৭. বিবাহ করতে গেলে বিবাহ নিবন্ধন করার সময় লাগবে জন্ম সনদ।

৮. আপনার সম্পদের রেজিষ্ট্রেশন ও কর প্রদান করতে প্রয়োজন পবে।

৯. আপনি গাড়ি কিনলে তার বৈধতা প্রমাণের জন্য জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।

১০. আপনি যদি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে চান তাহলে জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।

১১. আপনি যদি আমদানি রপ্তানির ব্যবসা করতে চান তাহলে জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।

১২.আপনি বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চাইলে আপনার জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।

১৩. আপনার বাসায় বিদ্যুৎ লাইনের জন্য অবশ্যই আপনার জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।

১৪. আপনার বাড়ির হোল্ডিং নম্বর পেতে জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে

১৫. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলতে আপনার জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে

১৬. বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করতে জন্ম সনদ হবে সবথেকে প্রয়োজনীয় সনদ

১৭. শিশু শ্রম প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে।


পরে উল্লিখিত যে কোন কাজ করতে চাইলে অবশ্যই আপনার জন্ম সনদ লাগবে


জন্ম সনদ না থাকলে কি কি সমস্যা হতে পারে?

. স্কুলে ভর্তি: একজন ছাত্রের ভালো মেধা শক্তি থাকার পরও সে একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না জন্ম সনদ না থাকার কারনে। প্রাথমিক পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে না থাকলে আপনার কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন না


২.
জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি: আপনি একজন বাংলাদেশের ভোটার বা সুনাগরিক হতে চাইলে আপনা জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে। এবং জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে গেলে আপনার জন্ম সনদের প্রয়োজন হবে না থাকলে আপনাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।


৩. পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে: আপনি ব্যবসা পড়াশোনা চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণ করতে চাইলে অন্য দেশে তাহলে আপনাকে পাসপোর্ট বানাতে হবে আর পাসপোর্ট তৈরির জন্য জন্ম সনদের প্রয়োজন হবেনা থাকলে আপনি তা করতে পারবেন না।


৪. সরকারি চাকরি: বর্তমানে সময়ে বাংলাদেশে চাকরির মূল্যয়ন ব্যাপক হারে করা হয়। সরকারি চাকরিতে বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম সনদ হলো অবশ্যিক জন্ম সনদ না থাকলে আপনি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়ে পারেন


৫. বিয়ের নিবন্ধন এর ক্ষেত্রে: আপনি বিবাহ করতে চাইলে তা নিবন্ধন করা হয় আর বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক। আর জন্ম সনদ না থাকলে আপনি বিবাহ নিবন্ধন করতে পারবেন না


৬. বয়স প্রমাণের ক্ষেতে: অনেক সময় শিশু অরা বিপদ গামী হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে শাস্তি প্রদান করার জন্য বয়স প্রমাণ এর প্রয়োজনীয়তা আছে।


আপনার জন্ম সনদ না থাকলে উক্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে তাই যথা সময়ে জন্ম সনদ তৈরি করে নিতে হবে


জন্ম সনদ নিবন্ধন কোথায় করবেন?

জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম অনুযায়ী ব্যক্তির জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমানে বসবাস করছেন এমন যেকোনো স্থানের নিবন্ধকের কাছে জন্ম নিবন্ধন করানো যাবে। জন্ম নিবন্ধনের জন্য যারা নিবন্ধক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন:


১. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য

২. পৌরসভার মেয়র বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর

৩. সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা কাউন্সিলর


উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসারগণ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনসমূহে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের  কার্যালয়ে এবং নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে পৌরসভা কার্যালয়ের কর্মকর্তাগণ জন্ম নিবন্ধন এর  দায়িত্ব করছেন


প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে বাংলাদেশের নাগরিক প্রমাণ করতে এবং দেশের সকল প্রকার সুবিধা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই জন্ম সনদ যথাসময়ে নিবন্ধন করে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে জন্ম সনদের সংশোধন ও স্মার্ট কার্ড সম্পর্কে সকল প্রকার তথ্য পেতে দ্য ব্যাকস্পেস জার্নাল এর সাথে থাকুন ধন্যবাদ

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

সাদিকুর রহমান সাব্বির ছাত্র, আজিজুল হক কলেজ (বগুড়া)