পপুলিজম (Populism) কি? পপুলিজম কি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি!

১৮৯১-১৮৯২ এর দিকে ‘Populism’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায়। ১৯৬০ এর দিকে এর বিস্তার ঘটে এবং এটি নিয়ে প্রচুর পড়াশোনাও শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে একটি বই লিখেন রোমানিয়ান একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ‘Ghița Ionescu (Ghiță Ionescu)’। বইটির নাম হলো, ‘Populism: Its meanings and national characteristics’।

মে 22, 2023 - 19:00
মে 23, 2023 - 00:02
 0
পপুলিজম (Populism) কি? পপুলিজম কি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি!
পপুলিজম (Populism) কি? পপুলিজম কি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি!

বর্তমান রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণ কিছু মানুষকে বেছে নেয় রাষ্ট্র শাসনের জন্য, নেতৃত্ব দেবার জন্য এবং রাষ্ট্রের সামগ্রিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখবার জন্য। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান, আইনের শাসন এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র প্রধানের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।


কিন্তু যখন এই শাসক বা, রাষ্ট্র প্রধান তিনি তার রাষ্ট্র পরিচালনার কারিশমায় জনগণের কাছে/সামনে দেবতা রুপে আবির্ভূত হোন তখন উক্ত রাষ্ট্রের যাবতীয় কলকাঠি নড়তে থাকে এই পপুলিজম দর্শন/মতবাদ/ডিসকোর্সের মধ্যে দিয়ে। তিনি হয়ে পড়েন একজন কর্তৃত্ববাদী (Authoritarian) জন নেতা।


রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে যাদের অনেক পড়াশোনা তারা খুব সহজেই এই শব্দটি উপলব্ধি করতে পারছেন কিন্তু আমাদের জন্য এটি মোটেই সহজ নয়। গোলটেবিল বৈঠকে হঠাৎ করে কেউ 
পপুলিজম বলে উঠলে আমরা বুঝে উঠতে পারি না, এবং গুগলে সার্চ দিয়ে যথাযথ বাংলা আর্টিকেল না পাওয়ায় মাথাও চুলকাতে থাকি। নতুন এই দর্শন কি বলতে চাইছে তা হা করে বুঝবার চেষ্টা করি।


প্রথমে আমরা দুটি শব্দ মনে রাখবো,

১. The Pure People

২. The Corrupt Elite


এখন পপুলিজম ক্লেইম করে মানে আবদার রাখে যে, তার রাষ্ট্রের শাসক সাধারণ জনগণ (The Pure People) এর পক্ষ নিয়ে অভিজাত দুর্নীতিবাজ শ্রেণীর (The Corrupt Elite) বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। শুধু তাই নয়, এই শাসকের সাধারণ জনগণের প্রতি রয়েছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।


এদের রাষ্ট্র পরিচালনায় আলাদা -ই এক ধরণের স্টাইল লক্ষণীয়। তবে প্রায় সর্বক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (Nativist Agenda) কে এরা সমর্থন করে থাকেন। রাষ্টনেতা থেকে রাষ্ট্রনায়কে রুপান্তরিত হোন এবং ‘Bad Manners' ও এদের মধ্যে উপসর্গ হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে।


এখানে ‘The Pure Peopleটার্ম কিন্তু ‘Homogenous (সমগোত্রীয়) অর্থে বুঝায়। সোজা বাংলায়, সাধারণ জনগণ বলতে যেমন কিছুই হয় না, তেমন একাধিক এমন সংযুক্ত গ্রুপ কে সমগোত্রীয় বলবো। তবে সাধারণ জনগণ বলতে কেন কিছুই বুঝায় না? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা অন্য একদিন দেবার চেষ্টা করবো। এবং এখানে কিন্তু ‘The Corrupt Elite (দুর্নীতিবাজ অভিজাত) কে Antagonist’ হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।


সাম্প্রতিক সময়ে পপুলিজম নির্দেশ করে volonté générale (general will) মানে হলো, সাধারণ মানুষের ইচ্ছা কে। পপুলিজম দুটি বিষয় নিয়ে একটি সরলীকরণ করে। এই মতবাদে মনে করা হয়, পপুলিজম বিশ্বাস করে জাতীয়তাবাদ (Nationalism)’ এবং সমাজতন্ত্র (Socialism)’এবং এই সমাজতন্ত্রে মনে করা হয়, অভিজাতরা সাধারণদের ঠকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, শোষণ করছেন। তারা বিদেশীদের (Non-Natives) প্রতি বেশি আগ্রহী, দেশি (Natives) যারা তাদের প্রতি মোটেই আগ্রহী নন বা কম আগ্রহী আর এখানেই জাতীয়তাবাদ লুন্ঠিত/ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অথচ সমাজতন্ত্রের লড়াই হচ্ছে লোভী পুঁজিবাদীদের বিপক্ষে এবং সাধারণের পক্ষে।


পপুলিজমের ক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ টেনেছে একাধিক ব্লগ এবং পত্রিকা। তাঁর নাম 'ডোনাল্ড ট্রাম্প'। খেয়াল করবেন, তার/দলের শ্লোগান ছিলো Make America Great Againএছাড়া ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কে নিয়েThe Loop লিখেছে,


“In his leadership style, Modi offers an amalgam of nativist populism. He emphasises Hindutva and hypernationalism, and styles himself a technocrat.”


তাহলে কি গণতন্ত্রে Populism খারাপ অভিনেতা?

না, এটা এত সরলীকরণ করা যায় না। টুকটাক যে রিসার্চ পেপারগুলো পড়লাম তাতে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে, অতীতে এমন বহু ‘Populist’ রাষ্ট্রনেতা এসেছিলেন কিন্তু তারা রাষ্ট্রের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য অনেক ভালো কাজ করেছেন। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর প্রায় সব নেতাই হলো ‘Opportunist (সুযোগসন্ধানী) এবং তারা তাদের জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে মনোযোগী।


এখানে গণতন্ত্র থাকলেও, মানুষের ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটলেও রাষ্ট্রে অসম থেকে বিষম অবস্থা তৈরি হয়। এক কমিউনিটি আরেক কমিউনিটি থেকে সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে পড়ে। রাষ্ট্রনেতা যা করছেন সেটাকেই সহীহ মনে করা হয় এবং এতে করে রাষ্ট্র আইনের শাসনে বাধাপ্রাপ্ত হয়। সাধারণ জনগণের মনের ইচ্ছে, অনুভব, আবেগ ইত্যাদি ক্রমান্বয়ে প্রায় সত্য তে পরিণত হয়।


Populism – A Quick Recap

১. ‘Populism একটি রাজনৈতিক মুভমেন্ট যার দ্বারা মনে করা হয় রাষ্ট্রের নেতা হলো সাধারণ মানুষের দৃঢ় কন্ঠ এবং একাই লড়ে যাচ্ছেন অভিজাত শ্রেণীর বিরুদ্ধে। এই সংগ্রাম হচ্ছে ‘Elite Establishment এর বিরুদ্ধে।


২. এই ধরণের নেতার মধ্যে এক ধরণের অসাধারণ চমৎকারিত্ব থাকে তার নেতৃত্ব দেবার ক্ষেত্রে।
একই সাথে একজন কর্তৃত্ববাদী হিসেবেও গণ্য হয়ে থাকেন। তবুও সাধারণের মাঝে তাকে বলা হতে পারে মানুষের কন্ঠ (The Voice of People)


৩. এই ধরণের নেতা আপনি শুধু ডানপন্থী নেতাদের মধ্যে খুঁজে পাবেন তা নয়, বামপন্থী নেতাও এমন হতে পারেন।


৪. এই টার্ম বা শব্দটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থে বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর অর্থ তখন দাঁড়ায়, জন নেতা এবং কর্তৃত্ববাদী নেতার অনুরুপ।


৫. ১৯৯০ সালের পর থেকে নাটকীয় ভাবে পৃথিবীতে এমন নেতার সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।


ধন্যবাদ

আপনার প্রতিক্রিয়া কি?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

মোঃ মেহেদি হাসান আমি মোঃ মেহেদি হাসান। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ (সাহিত্য) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছি। আমি একজন লেখক, অভিনেতা ও ব্লগার। এছাড়াও এই ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আপনি চাইলে আপনার লেখাটি আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। আমার ই-মেইল: admin@backspace-journal.com এ। আমার প্রথম প্রকাশিত বই ছোট গল্প সংকলন ‘জোনাকিরা সব ঘুমিয়ে গেছে’ প্রকাশিত হয় ২০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে ভারতে। বইটি বাংলাদেশে ২০২১ সালের ১ম ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ পায়। এই বইটি আপনি ‘রকমারি ডট কম’ এ পাবেন। লিংক: https://www.rokomari.com/book/252418/jonakira-sab-ghumiye-gechhe